বিপদ মানুষের নিত্যসঙ্গী। যে কোনো সময় বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবতে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। কখন কার বিপদ হবে এটা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। এসব বিপদে অনেকেই দিশেহারা ও কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়ে। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠিন বিপদ-মুসিবতে ছোট ছোট দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন।
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুর্ভাগ্য থেকে বাঁচতে, বিপদ-মুসিবতে ছোট ছোট একাধিক দোয়া পড়তেন। ভাগ্যের খারাপ পরিণতি থেকে বাঁচার জন্য যে দোয়া পড়তেন, তাহলো-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাগ্যের অশুভ পরিণতি, আপদ-বিপদের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে নিপতিত হওয়া এবং দুশমনি কাজে আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাওয়ার সময় বলতেন-
اللهمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ
Advertisement
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ঝাহদিল বালায়ি ওয়া দারকিশ শাক্বায়ি ওয়া সুয়িল ক্বাদায়ি ওয়া শামাতাতিল আদায়ি।’ (বুখারি)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি বালা-মুসিবতের তীব্রতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে বেঁচে থাকার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
মনে রাখতে হবে
যে কোনো বিপদ-মুসিবতে পড়লে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হয়। তিনিই একমাত্র উদ্ধারকারী। তিনি চাইলে মুহূর্তেই ভাগ্যের অশুভ পরিণতি ও বিপদ থেকে মুক্তি দিতে পারেন নিমিষেই। পেরেশানি দূর করে প্রশান্তি দিতে পারেন মুহূর্তেই।
Advertisement
তাই যে কোনো অশুভ পরিণতি, বিপদ-আপদ, পেরেশানি থেকে মুক্ত থাকতে এ দোয়াগুলো পড়া জরুরি। তাহলো-
১. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কোনো কাজ কঠিন হয়ে দেখা দিত, তখন তিনি এ দোয়াটি পড়তেন-
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ
উচ্চারণ : ‘ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছ।’ (তিরমিজি)
অর্থ : ‘হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্ব চরাচরে ধারক! আমি তোমার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে এ দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকে ছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন-
لَّا إِلَهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ : ‘লাই ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তুমি মহাপবিত্র। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’
তাই যদি কোনো মুসলিম বিপদে এ দোয়া পড়ে; তবে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন। ’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, মিশকাত)
৩. إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ
উচ্চারণ : ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৬)
অর্থ : ‘নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব।’
৪. اَللّهُمَّ أَجِرْنِي فِي مُصِيْبَتِي وَ اَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আঝিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফলি খাইরাম মিনহা।’ (মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে কষ্টের দরুণ সওয়াব দান করুন এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করুন।’
প্রকৃত মুমিনের বৈষ্টিশ্য হলো
হঠাৎ বালা-মুছিবতের সম্মুখীন হলে ধৈর্য সহকারে এ দোয়াগুলো পাঠ করা। হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বিপদগ্রস্তের দোয়া হচ্ছে-
اَللّهَمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُوْ فَلَاتَكْلِنِي اِلَي نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ وَّ أَصْلِحْ لِيْ شَانِي كُلُّهُ لا اِلَهَ اِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাহমাতিকা আরঝু ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি ত্বারফাতা আইনিও ওয়া আসলিহলি শানি কুল্লুহু লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার দয়া কামনা করি। তুমি আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের হাত ছেড়ে দিও না। বরং তুমি স্বয়ং আমার সমস্ত ব্যাপার ঠিক করে দাও। তুমি ব্যতীত কোনো মা’বুদ নাই।
এমএমএস/জেআইএম