জাতীয়

কড়াকড়িতে ‘কিছুটা সন্তোষজনক’ লকডাউন

রোববার বিকেল সাড়ে ৪টা। ঢাকা সিটি কলেজের সামনে মিরপুর রোডে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। যানবাহন থামিয়ে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। চেকপোস্টের কাজের তদারকি করছেন সেনা সদস্যরাও।

Advertisement

রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা খুব কম নয়। তবে যারা বেরিয়েছেন, সবাই কোনো না কোনো জরুরি কাজে বেরিয়েছেন। তল্লাশির মুখে পড়াদের অধিকাংশই সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক-নার্স, ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মী, রোগী ও তাদের স্বজন।

লকডাউন ঠিকভাবে প্রতিপালন হচ্ছে কি-না প্রশ্নে কর্তব্যরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছেন। লকডাউনের প্রথমদিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হলে পথে পথে চেকপোস্টে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত তিনদিনে অপ্রয়োজনে বের হওয়া বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে মামলা ও আর্থিক জরিমানা এবং অকারণে রাস্তায় বের হওয়ায় শত শত মানুষকে আটক ও গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে লকডাউনের চতুর্থ দিনে সরকারি নির্দেশনা মেনে নগরবাসী নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। এজন্য গত তিন দিনের তুলনায় আজ অপ্রয়োজনে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম।

Advertisement

লকডাউনের চতুর্থদিনে আজ রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত তিন দিনের তুলনায় রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে নগরের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্ভোগ এড়াতে অনেকেই যানবাহন নিয়ে বের হননি। যারা বের হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই জরুরি কাজে বেরিয়েছেন। এর মাঝেও কেউ কেউ ফাঁকা রাস্তা পেয়ে প্রয়োজন ছাড়াও বের হয়েছেন।

বিকেলে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে প্রাইভেটকার চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক তরুণ। চেকপোস্টে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তার মা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি ও বাসা ধানমন্ডি চার নাম্বার বলে জানান। কিন্তু একপর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি রাস্তা ফাঁকা পেয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বাসায় ফেলে এসেছেন বলে জানান। এ সময় তার বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে মামলা করা হয়।

প্রয়োজনে বের হয়েও হেনস্থার শিকার হয়েছেন অনেকে, এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, সারাদিন কাজ করে ৫০০ টাকা মজুরি পাই। বিএমএ ভবন থেকে সার্জিক্যাল পণ্যসামগ্রী ঢামেক হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের কাছে পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে পলাশীতে ট্রাফিক পুলিশ মোটরসাইকেল থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমি পরিচয়পত্র দেখালেও দুই হাজার টাকার মামলা দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে এটা জুলুম করা হলো। চারদিন কাজ করে আমি যা মজুরি পাই, তা এক মামলায় নিয়ে নিলো। আমি কীভাবে সংসার চালাব?’

Advertisement

ঢাকা সিটি কলেজের সামনে দায়িত্বরত এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘গত চার দিনের কাজের অভিজ্ঞতার বলতে পারি—লকডাউন বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর। নগরবাসীরও সচেতনতা বেড়েছে। আজ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু হ্রাস পাবে বলে আশাবাদী।’

এমইউ/এএএইচ/জিকেএস