বিশাল এক সাদা পাহাড়। সূর্যের আলোয় চকচক করে ওঠে। দূর থেকেও এই পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন সবাই। ঠিক যেন বরফে মোড়া এক পাহাড়। জানলে অবাক হবেন, এই পাহাড় লবণের।
Advertisement
৫৩০ মিটার বা ১৭৪০ ফুট উঁচু এই লবণের পাহাড়টি বিশ্বব্যাপী জননপ্রিয় এক স্থান। বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এই লবণের পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমান জার্মানিতে। সেখানকার হেসের হেরিনজেন শহরে গেলেই দেখা মিলবে সাদা চকচকে এই পাহাড়ের।
স্থানীয়দের কাছে ট্রেকিংয়ের আদর্শ এক স্থান হলো এই লবণের পাহাড়। এই পাহাড়টি স্থানীয়দের কাছে মন্টে কালি বা কালিমাঞ্জারো পাহাড় নামে পরিচিত। জানলে অবাক হবেন, এই পাহাড় মানুষ দ্বারা নির্মিত। এটিই হয়তো প্রথম লবণের পাহাড়, যেটি তৈরি করেছে মানুষ।
তবে কীভাবে তৈরি করা হয়েছে এই লবণের পাহাড়? জানা যায়, এই পাহাড়ের নির্মাণ শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। একটু একটু করে লবণ জমানো শুরু হয় পাহাড়ের স্থানে।
Advertisement
কথায় আছে, ‘ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল’। ঠিক তেমনই অল্প অল্প করে লবণ জমতে জমতে হেরিনজেনে তৈরি হয়েছে এক বিশাল পাহাড়।
জার্মানির একটি পটাস উত্তোলক সংস্থা ‘কে প্লাস এস’ রাসায়নিক সংস্থা। পটাস উত্তোলনের পর উপজাত দ্রব্য হিসাবে পড়ে থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড বা লবণ। এই লবণই সেই ১৯৭৬ সাল থেকে ওই অঞ্চলে জমাতে শুরু করে সংস্থাটি। ৪৫ বছর ধরে জমতে জমতে আজ সেটির উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ৫৩০ মিটার।
ওই সংস্থার তথ্যমতে, ২৪০ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে এই লবণের পাহাড়। সেখানে প্রায় ২০ কোটি টন লবণ জমা করা হয়েছে এ যাবৎকালে। প্রতি বছর এই পাহাড়ে জমছে প্রায় ৭০ লাখ টন লবণ। তাই প্রতিবছরেই পাহাড়ের উচ্চতা, বেড়েই চলেছে।
২০০৯ সাল থেকে এই লবণের পাহাড় দেখতে পর্যটকরা সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন। বর্তমানে স্থানটি অন্যতম এক আকর্ষণের স্থান। প্রতি বছর পাহাড়ের উপর নাচ-গানের অনুষ্ঠান হয়। এতে যোগ দেন ওই দেশের নামি-দামী সব জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পীরা।
Advertisement
তবে সারা বিশ্বে এই পাহাড়ের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়লেও; স্থানীয়দের কাছে এই পাহাড়টি অভিশাপস্বরূপ। দীর্ঘদিন ধরে লবণ জমার কারণে সেখানকার পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। জলবায়ুও বদলে যেতে শুরু করেছে।
চাষাবাদে ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি বাতাসে মিশে যাচ্ছে লবণ। এমনকি নদীর পানিতেও লবণ মিশে মারা যচ্ছে মাছ। এতো কুপ্রভাব থাকা সত্ত্বেও সংস্থাটির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না স্থানীয় প্রশাসন। কারণ ২০৩০ সাল পর্যন্ত ওই জায়গায় লবণ জমা করার লাইসেন্স আছে সংস্থাটি কাছে।
জেএমএস/এমকেএইচ