দেশজুড়ে

লকডাউনে কেউ পান কিনতে, কেউ ঝাড়ফুঁক করাতে, কেউবা বের হন ঘুরতে!

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউনে বরিশাল নগরীর ফাঁকা রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন ইমন তালুকদার (২০) নামে এক তরুণ। মাস্ক, হেলমেট কিছুই ছিল না তার। সঙ্গে ছিল না ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা মোটরসাইকেলের কাগজপত্রও।

Advertisement

শনিবার (৩ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর পোর্ট রোডে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জেরার মুখে পড়েন ইমন। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও তার ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চান আদালতের বিচারক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মো. হেলাল উদ্দিন। এই তরুণ তখন দাবি করেন, তিনি জন্ডিসে আক্রান্ত। তাই কবিরাজের কাছে ঝাড়ফুঁক করাতে বের হয়েছেন। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মো. হেলাল উদ্দিন তার কাছে প্যাথলজি পরীক্ষার রিপোর্ট বা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখতে চান। এসবের কিছুই দেখাতে পারেননি ইমন। পরে স্বাস্থ্যবিধি পালনের অঙ্গীকার করিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে কাগজপত্র না থাকায় জব্দ করা হয় তার মোটরসাইকেলটি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মো. হেলাল উদ্দিন জানান, নগরীতে যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া ব্যক্তিদের জরিমানা করা হচ্ছে। তবে যার জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মারুফ দস্তগীরের নেতৃত্বে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত জেলখানার মোড়, নাজিরের পোল, হাসপাতাল রোড, নতুন বাজার, বিএম কলেজ রোডসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়।

Advertisement

তিনি বলেন, হাসপাতাল রোড এলাকায় দেখা যায়, শেখ নাসির নামে এক ব্যক্তি রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার মুখে ছিল না মাস্ক। বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, ঘরের মধ্যে বিরক্ত হচ্ছিলেন। তাই একটু ঘুরতে বেরিয়েছেন। মাস্ক ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে শেখ নাসির বলেন, অল্প সময় বাইরে থাকবেন। তাই মাস্ক পরেননি। কোনো কারণ ছাড়াই অযথা ঘুরে বেড়ানোয় তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করে বাসায় পাঠানো হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মারুফ দস্তগীর আরও বলেন, নাজিরের পোল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রহমত আলী নামে এক ব্যক্তি এক খিলি পান কিনতে বাইরে বেরিয়েছেন। তার মুখে ছিল না মাস্ক। জেরার মুখে রহমত আলী বলেন, ঘন ঘন পান খাওয়ার অভ্যাস। মুখে মাস্ক থাকলে পান খেতে সমস্যা হয়। তাই মাস্ক পরেননি। এরপর তাকে মাস্ক পরিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

প্রায় একই সময় ওই এলাকার একটি ওষুধের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন দুই যুবক। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের মধ্যে একজন বলেন, প্যারাসিটামল ও অ্যালার্জির ট্যাবলেট কিনতে এসেছেন। অন্য জন এসেছেন তার সঙ্গী হয়ে। ওষুধ নিয়ে তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

পৃথক এই দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে পরিচালনার সময় বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

এদিকে, কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে লোকজনের উপস্থিতি কম ছিল। তবে গত দুই দিনের তুলনায় শনিবার রিকশা ও মোটরসাইকেল কিছুটা বেশি চোখে পড়েছে। কিছু কিছু মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। নগরীর চেকপোস্টগুলোতে তাদেরকে আটকানো হলেও কর্মস্থলের পরিচয়পত্র প্রদর্শন বা জরুরি নানা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়ার অজুহাত দেখিয়েছেন তারা। তবে বিকেল গড়াতেই প্রধান প্রধান সড়কেও মানুষের উপস্থিতি বেড়ে যায়। নগরীর বিভিন্ন এলাকার অলি-গলি ও পাড়া মহল্লার মধ্যে খাবার হোটেল, সেলুন-মুদি-চায়ের দোকানসহ অনেক দোকান ছিল খোলা। দোকানে বসে মানুষ সমানে গল্প করেছে। আড্ডা দিয়েছে।

জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার জানান, জেলায় করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। শনাক্তের হার গতকাল শুক্রবার ৪১ দশমিক ৪২ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার হয়েছে ৪৯ দশমিক ৫২ ভাগ। অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষার অর্ধেক ব্যক্তিই করোনায় আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় সংক্রমণের হার কমাতে লকডাউন শতভাগ কার্যকরের বিকল্প নেই।

জেলা প্রশাসক বলেন, লকডাউনের বিধিনিষেধ কার্যকরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন। তৃতীয় দিনে জেলায় ২১ টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করেছে। বিধিনিষেধ অম্যান্য করায় ১৮০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ লাখ ২২ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তবে জরুরি প্রয়োজনে মানুষের চলাচলে বাধা দেয়া হয়নি।

সাইফ আমীন/এসএস