জাতীয়

লকডাউনে রাজপথে হতদরিদ্রদের ‘বোবা কান্না’

শনিবার মধ্যদুপুর। রাজধানীর নিউমার্কেট থানার বিপরীত দিকে নীলক্ষেত স্কুলের সামনে খাদ্য অধিদফতরের ওএমএসের চাল ও আটা কিনতে লম্বা লাইন। লাইনে চার ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন লালবাগের শেখ বাজারের বাসিন্দা নয়নমনি। তার স্বামী জুতা সেলাইয়ের কাজ (মুচি) করেন।

Advertisement

পাঁচ সদস্যের পরিবারটি স্বামীর রোজগারেই চলে। চলমান লকডাউনের কারণে আয় পুরোপুরি বন্ধ। গত দুদিনে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ের কেউ কোনো আর্থিক বা খাদ্য সাহায্যে নিয়ে তাদের কাছে আসেনি, কোথাও সাহায্য দিচ্ছে বা কোথায় গেলে পাওয়া যাবে, তাও জানেন না।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘খুব বেকায়দায় আছি। স্বামীর আয় বন্ধ। ঘরে পাঁচজন খানেওয়ালা। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আগের জমানো কিছু টাকা থেকে চাল কিনতে এসেছি। নিয়ে গেলে রান্না হবে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের তৃতীয় দিনে ওএমএসের চাল ও আটার জন্য নয়নমনিদের মতো হতদরিদ্রদের অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ২৩ টাকা দরে কিনছেন। একজন সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি করে নিতে পারেন।

Advertisement

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, নারী ও পুরুষরা পৃথক লাইনে দাঁড়িয়ে ওএমএসের চাল ও আটার জন্য অপেক্ষা করছেন। বেশিরভাগই হতদরিদ্র। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চাল ও আটা পাচ্ছেন।

সালাম নামের এক দিনমজুর জানান, লকডাউনের কারণে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে। আজ নিয়ে গত তিনদিন কোনো কাজ নেই, আয় রোজগার নেই। আয় রোজগার না থাকলেও পেটের ক্ষুধা তো বোঝে না। ঘরে স্ত্রী ও সন্তানসহ চারজন খানেওয়ালা।

লকডাউন দিলে সরকারিভাবে যেন তাদের কথা চিন্তা করা হয় সে দাবি জানান তিনি।

নীলক্ষেতের বাসিন্দা গুলনাহার জানান, লকডাউনের সময় তিনি স্থানীয় অনেকের কাছে গেলেও কোনো সাহায্য পাননি। একবেলা-আধবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান।

Advertisement

খাদ্য অধিদফতরের ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রেতা এজেন্ট জানান, তারা প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ জনের কাছে চাল ও আটা বিক্রি করেন। করোনাকালে চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। তারা কার কাছে কী পণ্য বিক্রি করছেন তা রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখেন।

এমইউ/এমএইচআর/এএসএম