করোনার উচ্চ সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১ জুলাই থেকে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের কারণে দেশের প্রায় ৩০ লাখ হোটেল শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের বকেয়া মজুরিসহ জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি শ্রমিক ইউনিয়ন।
Advertisement
শনিবার (৩ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আক্তারুজ্জামান খান ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন এই আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের কারণে বাংলাদেশের প্রায় সব হোটেল বন্ধ রয়েছে। এতে হোটেল সেক্টরেরর প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে অনাহার-অর্ধাহারে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশেষ করে যখন মোটা চাল ৪৮/৫০ টাকা, ডাল ১০০/১১০ টাকা, তেল ১৫০ টাকা, আলু ২৫ টাকা তখন দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতির এই সময়ে শ্রমজীবী জনগণ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দুবেলা দুমুঠো ডাল ভাত জোটাতে পারে না, সেরকম অবস্থায় খাবার ছাড়া এই মানুষদের ঘরে থাকার কথা বলা তাদের সাথে উপহাস ছাড়া আর কী হতে পারে! দেশের শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে- গত বছরে কোভিডের কারণে হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় ১০ লাখ শ্রমিক কর্মচ্যুত হয়েছেন।’
তারা বলেন, ‘আগে দেশের ১২শতাংশ লোক অতি দরিদ্র সীমা ও ২০ শতাংশ দরিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করত। সেই সংখ্যা বর্তমানে দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে। করোনাকালীন সময়ে ৯৮ শতাংশ হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ৯০ শতাংশ পরিবহন ও নির্মাণ শ্রমিক, ৫৯ শতাংশ বন্দর ব্যবহারকারী শ্রমিক, ৫৬ শতাংশ গার্মেন্টস শ্রমিক, ৩১ শতাংশ বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের শ্রমিক এবং সব খাতের ৭০ শতাংশ শ্রমিক কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শ্রমিক জমানো টাকা ব্যয় করেছে, ৫৩ শতাংশ শ্রমিক ধার-দেনা, ৭ শতাংশ শ্রমিক সম্পদ বিক্রি করে, ২৯ শতাংশ শ্রমিক অর্ধাহারে, ১০ শতাংশ শ্রমিক মাঝেমধ্যে না খেয়ে এই মহামারি মোকাবিলা করছে।’
Advertisement
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের সদ্য পাসকৃত বাজেটেও এই দরিদ্র জনগণের জন্য কিছুই রাখা হয়নি, এমন ক জনগণের সামাজিক নিরাপত্তায় রেশনিং চালুর প্রেক্ষিতেও কোনো বরাদ্দ হয়নি। এরকম অবস্থায় সরকার জনগণের কোনোরকম দায়দায়িত্ব গ্রহণ না করে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ চাপিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশের ভয় দেখিয়ে শ্রমিক-জনতাকে গৃহবন্দি করে রাখতে চাইছে।’
‘সরকার জনগণের জীবন ও জীবিকার দায়কে অস্বীকার করলেও সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজি ও দালালপুঁজির সাথে সম্পর্কিত গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প ও প্রতিষ্ঠান ঠিকই খোলা রেখেছে। সেই সাথে খাবার দোকান হোটেল রেস্টুরেন্ট সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অনলাইন/টেকওয়ের জন্য খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ মালিকরা হোটেল শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেনি।’
তারা বলেন, ‘পরিবহণ সঙ্কটে জীবিকার তাগিদে হোটেল শ্রমিকদের দূরদূরান্তের পথ পায়ে হেঁটে কাজে যোগ দিতে হচ্ছে। পথে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে যে প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা ছিল তাও পুলিশের বাধার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের বাধার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হোটেল শ্রমিকরা চাকরি হারা হয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে ঝুকিপূর্ণ জীবনযাপনে পতিত হচ্ছে।’
‘এবার মাসের শুরুতেই লকডাউন দেয়ায় এদের অনেককেই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে এবং অতি আসন্ন ইদুল আজহায় বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী উৎসব ভাতা ও শাটডাউন শেষে ফিরে আসলে পূর্ব কর্মস্থলে চাকরি বহাল থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে চলমান লকডাউন আরও বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। অথচ চলমান লকডাউনে সরকার পক্ষে ত্রাণ তৎপরতারও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।’
Advertisement
তারা আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার জনগণকে সম্পৃক্ত করার পরিবর্তে সেনা, বিজিবি, পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে জনগণকে ঘরে রাখতে চাইছে, তা কোনোভাবেই করোনা মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হতে পারে না এবং তার ফলাফলও আশানুরূপ হবে না।’
নেতৃবৃন্দ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন কার্যকরে ঘরে ঘরে খাদ্য, বাড়ি ভাড়া মওকুফ, ১০ হাজার টাকা নগদ প্রণোদনা প্রদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, নিত্যপণ্যে মূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালু, সব উপজেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে বিনামূল্যে পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা, ন্যূনতম জেলা পর্যায় পর্যন্ত আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ও ভেন্টিলেটরসহ সব চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চয়তার বিধান, লকডাউনে শ্রমজীবী ও কর্মজীবী জনগণের বেতন ও বোনাস প্রদান নিশ্চিত করা, করোনা পরিস্থিতিতে হোটেল শ্রমিকদের কাছ থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল আদায় বন্ধ, এনজিওদের কিস্তি আদায় বন্ধ ও সুদ মওকুফ, পূর্ব কর্মস্থলে চাকরি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এফএইচ/এমআরআর/এএসএম