অনিয়মিত জীবনধারণের কারণে বর্তমানে বেশিরবাগ মানুষই অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন। কেউ কড়া ডায়েট মানতে গিয়ে শারীরিক নানা সমস্যার সম্মুখীন তো আবার অনেকেই জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করতে ব্যস্ত।
Advertisement
অতিরিক্ত শরীরচর্চার ফলে উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই ওজন কমাতে ভরসা রাখতে পারেন আয়ুর্বেদ উপায়ে। চাইলে খুব সহজে এবং দ্রুত ওজন কমাতে পারবেন আয়ুর্বেদ উপায় মেনে। জেনে নিন করণীয়-
দিনের আলোয় খাবার খান
আমরা সাধারণত দুপুরবেলা ভারী খাবার খেয়ে থাকি। তাই যদি দিনের আলো থাকাকালীন আপনার আহারের কাজটি সম্পন্ন করেন; তাহলে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী। কারণ আমাদের লিভার মধ্যরাতে খাবারের হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
Advertisement
তাই যদি রাতের বেলা অতিরিক্ত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা হয়; তাহলে সেটি পাকস্থলীর জন্য অতিরিক্ত হয়ে যায়৷ ফলে ওজন বাড়তে থাকে। তাই আপনি যখন রাতে খাওয়া কমিয়ে দিবেন; তখন আপনার অতিরিক্ত ওজনও কমতে শুরু করবে।
গরম পানি পান
পরিপাক ক্রিয়াকে জাগ্রত করতে প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে লেবুর রস খান। যা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সহায়ক।
ব্যায়াম
Advertisement
স্বাস্থকর উপায়ে ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করাই যথেষ্ট। তাই প্রতিদিন সকালে হাঁটাহাঁটি এবং শরীরচর্চার জন্য ৪০-৬০ মিনিট ব্যয় করুন।
মেডিটেশন বা ধ্যান
সকালে অন্তত ৫-১০ মিনিট বা তারও বেশি সময়ের জন্য মেডিটেশন বা ধ্যান করুন। ওজন বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ স্ট্রেস। মেডিটেশন বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মনে শান্তি আসে। এই অভ্যাসটি আপনাকে ঠান্ডা মাথায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও সহায়তা করবে।
৩ বেলা খাবার নীতি
কোনো রকম জলখাবার বা স্ন্যাকস বাদ দিয়ে তিনবেলা খাবার গ্রহণ করুন। খাদ্য আমাদের দেহে জ্বালানী হিসেবে কাজ করে। যখন দেহে পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত খাবার যায়; তখন সেটি ফ্যাটে পরিণত হয়।
তাই সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে প্রাতঃরাশ গ্রহণ করুন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে দুপুরের খাবার গ্রহণ করুন। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খান। প্রতিবেলার খাবারের পরিমাণের দিকে নজর রাখুন। অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
মৌসুমের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া
মৌসুমি ফল ও শাক-সবজি খেলে দেহ সহজেই পুষ্টিকর উপাদানগুলো পায়। যা প্রাকৃতিকভাবে হজমে সহায়ক। গ্রীষ্মকালে দেহ শীতল ও উজ্জীবিত রাখতে উচ্চ-কার্বোহাইড্রেট যুক্ত ফল এবং তাজা শাকসবজি খান। শরৎ এবং শীতকালে, ঠান্ডা থেকে বাঁচতে শাক-সবজি, বাদাম, ফল, মাংস এবং শস্যদানা খেতে পারেন।
বসন্তে প্রচুর পরিমাণে মৌসুমী ফল, নতুন সবুজ শাক খান। যা শীতকালীন আমেজ কাটাতে আপনার শরীরকে উপযুক্ত করে তুলবে। এভাবে বিভিন্ন ঋতুতে মৌসুমী খাবারগুলো গ্রহণ করুন। যা প্রাকৃতিক আয়ুর্বেদ উপায়ে আপনাকে সঠিক কৌশলে খাদ্যাভাস পরিচালনা করতে সহায়তা করবে। এতে নিয়ন্ত্রণে থাকবে ওজন।
৬ স্বাদ একত্রীকরণ
আয়ুর্বেদিক ডায়েট অনুসারে, ৬টি প্রধান স্বাদের খাবার খেতে হবে। মিষ্টি, টক, নোনতা, কড়া বা তীব্র (পেঁয়াজ, রসুন, আদা ইত্যাদি), তেঁতো এবং কষযুক্ত (আমলকি, মূলা, শষা, ডালিম ইত্যাদি)। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই ৬ স্বাদ একত্রিত করুন। মিষ্টি, টক এবং নোনতা স্বাদের খাদ্যগুলো পুষ্টিকারক খাদ্য।
যা প্রোটিন তৈরি করে এবং এগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রয়োজন তীব্র, তিক্ত এবং উদ্বেগজনক খাদ্য, বিপাকীয় কাজে সহায়ক। তবে মনে রাখতে হবে যেকোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর।
খাওয়ার পর হাঁটা
প্রতিবেলা খাবারের পরে হাঁটাহাঁটি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি হজমে সহায়তা করে। দুপুরের খাবার শেষে মাঝারি গতিতে ১০-২০ মিনিট হাঁটা যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি খাদ্য গ্রহণের পরই শুয়ে থাকতে চান; তাহলে অবশ্যই ১০ মিনিট হেঁটে নিবেন এবং বাম পাশ হয়ে বিশ্রাম নিবেন।
সূর্যকে অনুসরণ
আপনার শারীরে একটি বড় হরমোনাল-ভারসাম্য তৈরি করতে সূর্যাস্তের সময় বিছানায় যান এবং সূর্যোদয়ের সঙ্গে জেগে উঠুন। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে আপনার দেহ স্বাভাবিকভাবে ধীরগতির হয়ে যায়। এরফলে শরীর ভার হয়ে যায়। ঘুমাতে যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে আপনার সব কাজগুলো গুছিয়ে নিন। রাত ১০টার আগে বিছানায় যান।
প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন। এতে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ হবে দ্রুত। ফলে পরবর্তী দিনের জন্য পুনরায় শরীর অ্যানার্জি পাবে। এভাবে আপনার দৈনিক জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনলেই ওজন কমবে দ্রুত।
সূত্র: হার জিন্দেগি
জেএমএস/জিকেএস