কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংগ্রহণ না করেও এক শিক্ষার্থীর মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশের দায়ে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
Advertisement
সূত্রমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে এক শিক্ষার্থী মেধাতালিকায় ১২তম স্থান অর্জন করেন। এ নিয়ে ২০১৯ সালের ২৯ ও ৩০ নভেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ‘বি’ ইউনিট ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, জালিয়াতি নয় উত্তরপত্রে অন্য শিক্ষার্থী ভুলে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর রোল নম্বর ভরাট করায় ওএমআর মেশিনে এ ফলাফল চলে আসে।
পরে ১২ ডিসেম্বর পুনরায় ঘটনাটির অধিকতর তদন্ত করতে ‘উচ্চতর তদন্ত কমিটি’ গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানকে আহ্বায়ক, সহকারী রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরকে সদস্য সচিব এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আহসান উল্যাহ ও লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌসকে রাখা হয়। তদন্ত শেষে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার তথ্য সরবরাহের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
Advertisement
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুন আব্দুল কাইয়ুম তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক হলেই অনেকেই ধারণা করেন এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নেতিবাচক তথ্য (যদিও যা ঘটে সেটিই সংবাদ) সাংবাদিকদের দিয়ে প্রশাসনকে বিপদে ফেলে! আমার বিশ্ববিদ্যালয়েরও একজন সাবেক কর্তাব্যক্তি সাংবাদিকদের আমার নাম ধরে জিজ্ঞাসা করতেন যে আমি তাদের প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংবাদে উদ্বুদ্ধ করি কিনা? তথ্য দিই কিনা? সন্দেহের বশে বিভিন্ন সময় জেরার সম্মুখীন হয়ে ইঙ্গিতে ভয়ভীতিও দেখানো হয়েছে। আমি বলি কি, আমরা ছাত্রদের অযথা এমন কাজে লাগাবো ভাবতেই পারি না। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এমন ঘটনা ঘটেছে। অপরাধের তথ্য কাউকে দেয়ার জন্য হেনস্তার শিকার (শাস্তিমূলক ব্যবস্থা) হতে হবে এটি মানতে পারছি না। সেই সাথে সাংবাদিকতা বিভাগের আরেকজন শিক্ষক কাজী আনিস ভাইয়ের পদোন্নতি বাতিলের নিন্দা জানাচ্ছি। দুই বিষয়েরই সম্মানজনক সমাধানের দাবি জানাচ্ছি। যে রেজিস্ট্রার বলেছিলেন ঐ বিভাগ খুলে পাপ করেছেন, তার অপসারণ দাবি করছি।’
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে মাহবুবুল হক ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম মেধাতালিকার ১২তম অবস্থানে চলে আসার ঘটনায় ‘বি’ ইউনিটের আহ্বায়ক কিংবা সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দরকার ছিল। অথচ সাংবাদিকের সোর্স আইডেন্টিফাইয়ের নামে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
উচ্চতর তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, গণমাধ্যমের কাছে কে তথ্য দিয়েছে সে বিষয়ে আমরা বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার, তথ্য বিশ্লেষণ, মোবাইল কল রেকর্ড, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে বুঝতে পেরেছি যে মাহবুবুল হক ভূঁইয়া তথ্য সরবরাহ করেছেন। আমাদের ওপর তদন্তের যে দায়িত্ব ছিল তা আমরা সম্পন্ন করে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। তবে আমরা তার শাস্তির জন্য সুপারিশ করিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের জাগো নিউজকে বলেন, ‘বি’ ইউনিটের ভর্তির পরীক্ষা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সরবারহের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। বিষয়টি প্রবেশপত্র বাছাই কমিটি থেকেই লিক করা হয়েছে। যা আইন পরিপন্থী ও আচরণবিধি লঙ্ঘন। তদন্ত প্রতিবেদনে ওই শিক্ষককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধি-২০১৮ অনুসারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
Advertisement
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুসারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদি কোনো অন্যায় হয় তবে শাস্তি হবে বা ক্ষমাও হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ‘বি’ ইউনিটের ২০৬০৫০ রোলধারী সাজ্জাতুল ইসলাম ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও প্রকাশিত ফলাফলে তিনি ১২তম হন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তদন্ত কমিটির মাধ্যমে মো. সাজ্জাতুল ইসলামের ফল পর্যালোচনা করে।
জাহিদ পাটোয়ারী/বিএ/এএসএম