দেশজুড়ে

সেচ লাইন থেকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের হিড়িক

কুড়িগ্রামে প্রকাশ্যে চলছে বিদ্যুৎ চুরির মহোৎসব। একাধিক মামলার পরও কোনো প্রতিকার না হওয়ায় গণভাবে সেচ লাইন থেকে নেয়া হচ্ছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। এখন আড়াল বলতে কিছইু নেই। পিডিবি কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করলেও নেয়া হয়নি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের উদ্যোগ। ফলে বেপরোয়া অসাধু কর্মকর্তাসহ লাইনম্যানরা। এতে করে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আর পকেট ভারি হচ্ছে দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তাদের। মাঝখানে লোডশেডিংয়ের ধকল পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীদের।সরেজমিনে পৌরসভার পূর্বচর ভেলাকোপা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল হরিলুট অবস্থা। এখানে প্রায় দুই শতাধিকেরও অধিক মানুষ কৃষি জমিতে সেচ সংযোগ নিয়ে বসতবাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। গত সেপ্টেম্বরে সরকার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণ করার পর অবৈধ সংযোগের মাত্রা যেন বেড়ে গেছে। বর্তমানে কৃষিতে ৩ টাকা ৮১ পয়সা এবং আবাসিকে ৯ টাকা ১৮ পয়সা নির্ধারণ করায় সেবা গ্রহীতারাও গণহারে অবৈধ সুবিধা নিচ্ছেন। ওই গ্রামের সুবিধাভোগী লালমিয়া, মাহাবুর, এরশাদুল, পিয়ার বখস্, জহুরুল, মমিনুল, আমিনুল, নজরুলসহ অনেকে জানান, সেচের লাইনের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী খালেক ঠিকাদার পিডিবিকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে লাইন সংযোগ নেন। সেখান থেকে সবাই সেচের সংযোগ বাড়িতে নিয়েছে। এজন্য আলাদাভাবে পোল বা লাইন নিতে হয়নি। পিডিবির লোকজন বিষয়টি জানেন। তাদেরকে সবাই মিনিমাম চার্জ পরিশোধ করছেন। এতে কোনো সমস্যা দেখছেন না তারা। এই কাজের ফলে বাঁশ ও বিভিন্ন গাছের উপর দিয়ে ৪ থেকে ৫`শ গজ দূর থেকে ঝুকিপূর্ণ লাইন টেনে নেয়ার ব্যাপারে কেউ সদুত্তর দেননি।এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, গ্রামের কিছু লোক সেচের কথা বলে বাড়িতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। দুর্বল লাইনের কারণে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পিডিবির অসাধু লোকজন নিজেদের পকেট ভারি করছে। এতে করে সরকারকে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব গচ্ছা দিতে হচ্ছে। কৃষি জমিতে সেচ সংযোগ নিয়ে অনায়াসে বাড়ি-বাড়ি বিদ্যুৎ ব্যবহার অন্যায় জেনেও প্রতিমাসে মাসোহারা নিয়ে দেখেও না দেখার ভান করছে পিডিবির কর্মকর্তা ও লাইনম্যানরা। গড়ে ২০ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ করে সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু নেতা এবং বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের কাছ থেকে গ্রামের মানুষ সংযোগ নিচ্ছে। সেচ লাইনে বিদ্যুৎ বিল কম আসায় তারা এই সংযোগ নেন। কয়েক মাস পরপর মোটা অঙ্কের টাকা বিদ্যুত অফিসের লোকজনকে দেন সংযোগ বিছিন্ন না করার জন্য।পৌর শাখা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক জাগো নিউজকে জানান, পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে দলের সহযোগিতায় ২০১১ সালে সাতটি পোলের মাধ্যমে পূর্বচর ভেলাকোপায় আমার আট একর জমির জন্য সেচ লাইন নিয়েছি। এখন এই লাইন আসার পর কে কিভাবে সংযোগ নিচ্ছেন আমি জানি না। যারা সংযোগ নিচ্ছেন তারা কাদের কাছে লেনদেন করছেন সেটা আমার জানা নেই।পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) অফিস সূত্র জানায়, জেলার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের চাহিদা মোতাবেক গ্রীষ্মকালীন আট মেগাওয়াট এবং শীতকালীন ছয় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। এখানে মোগবাসা ইউনিয়নসহ সংযোগ লাইন রয়েছে ৩৪১ কিলোমিটার। এতে মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৯ হাজার ৫`শ। এরমধ্যে আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা ১৫ হাজার ৮০, বিদ্যুৎ চালিত সেচ ৮৫৪টি, শিল্পকারখানা ২০৪টি, মাঝারি শিল্প ৮টি, বাণিজ্যিক তিন হাজার ১৫৫টি, অনাবাসিক ১৭৮টি এবং রাস্তাসহ অন্যান্য ২১টি সংযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত), আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল অবৈধ সংযোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আসছে। আমরা ইতোমধ্যে অবৈধ লাইন ও বকেয়া বিল আদায় এবং সেচ পাম্প সংযোগ নিয়ে আবাসিকে ব্যবহার করার উপর ৬৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে অবৈধভাবে সেচ পাম্প থেকে আবাসিকে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করার জন্য ২৫টি মামলা রয়েছে।এমজেড/পিআর

Advertisement