বর্ষা মৌসুমে ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ বেড়ে যায়। এ সময় স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের কারণে ছত্রাকজনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
Advertisement
চর্মরোগ হিসেবে নখকুনি থেকে শুরু করে নখে ফাঙ্গাসসহ দাদ, অ্যাকজিমায় অনেকেই ভুগে থাকেন। এসব চর্মরোগের কারণ হতে পারে ছত্রাক সংক্রমণ। এসব থেকে বাঁচতে বাড়তি সতকর্তা অনুসরণ করা উচিত। জেনে নিন করণীয়-
দাদ
শরীরের বিভিন্ন স্থানে দাদ হতে পারে। এক্ষেত্রে চামড়ার ওপর গোল চাকার মতো লালচে ক্ষতস্থানের সৃষ্টি হয়। ফলে ক্ষতস্থানে চুলকানি হয়। ঘাড়, পায়ের পাতা, বগলে এ ধরনের ক্ষত হতে পারে। এ সমস্যার সমাধানে নিয়মিত কাপড় পরিষ্কার করতে হবে।
Advertisement
ক্ষতস্থানে নখ দ্বারা বেশি চুলকানো যাবে না। এর ফলে ক্ষত আরও মারাত্মক হতে পারে। প্রয়োজনে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রিম লাগাতে হবে। এরপরও যদি দাদের সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে হবে।
অ্যাথলেট ফুট
বর্ষায় স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া ও পা ভেজা থাকার কারণে নখের ফাঁকে ফাঁকে ছত্রাক বাসা বাঁধে। ছত্রাক সক্রমণের ফলে দেখা দেয় অ্যাথলেট ফুট। সাধারণত পায়ের পাতা কিংবা দুই আঙুলের মাঝখানে চুলকানি বা জ্বালা অনুভূত হয়। ভালো করে পা ধুয়ে পরিষ্কার রাখা উচিত এ সমস্যা মোকাবিলায়।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, বেশিক্ষণ পা ভেজা অবস্থায় রাখা যাবে না। পা নিয়মিত সাবান দিয়ে ধুয়ে ভালো করে নখের ফাঁকে ফাঁকে পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। টাইট জুতা পরবেন না। খোলা জুতা পরতে হবে।
Advertisement
অ্যাকজিমা
ছোট-বড় সবাই অ্যাকজিমার মতো চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে ত্বকে জ্বালা, ত্বক ফেটে যাওয়া, চুলকানি হয়ে থাকে। সাধারণত শুষ্ক ত্বকে অ্যাকজিমার সমস্যা প্রকট হয়ে থাকে। তাই সবসময় ত্বক ময়েশ্চারাইজড রাখতে হবে। ক্ষতস্থান বেশি চুলকানো যাবে না।
এক্ষেত্রে নারকেলের তেল ব্যবহারে আরামবোধ হবে। সব সময় সুতির কাপড় পরতে হবে। অ্যাকজিমার সমস্যা বাড়ন্ত হলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। পাশাপাশি অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহারে এ সমস্যার সমাধান হবে।
টিনিয়া ক্যাপিটিস
এই চর্মরোগের কারণে মাথার ত্বকে দাদ হয়। তবে এই ছত্রাকজনিত রোগের ফলে ক্ষতস্থান দেখা যেতে পারে ভ্রু ও দাড়িতেও। ছোঁয়াচে রোগ এটি। এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিকে সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এই রোগ।
এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্যরা যাতে স্পর্শ না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এমনকি তোয়ালে, চিরুনি, টুপি, বালিশের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই চর্মরোগ। এক্ষেত্রে চুল বা দাড়িতে অ্যান্টি ফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
ফোঁড়া
ত্বকের ফোঁড়ার সাধারণ লক্ষণগুলো হলো লালচেভাব, ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং হলদেটে তরলে ভরা একটি ছোট ত্বকের ফুসকুড়ি। যা প্রচণ্ড ব্যথাযুক্ত। ফোড়ার স্থানে গরম ভাঁপ নিলে ওই স্থানে রক্ত সঞ্চারনের পরিমাণ বাড়বে। প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট করে ৩-৪ বার ফোড়ার স্থানে গরম ভাঁপ নিলে ব্যথা কমবে।
হলুদ গুঁড়োতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। এসব বৈশিষ্ট্য ফোঁড়ার ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি দেয়। দীর্ঘদিন ধরে যদি ফোঁড়ার ব্যথায় ভুগেন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অ্যালার্জি
বর্ষায় ব্রণ এবং একজিমার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর্দ্রতা এবং পরিবর্তিত আবহাওয়া ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব, ব্রণ এবং একজিমা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়াও বর্ষায় দেখা যায়, ত্বকের বিভিন্ন স্থানের লোমের ফলিকগুলো প্রদাহে পরিণত হয়। যা ফলিকুলাইটিস নামে পরিচিত। ফলিকুলাইটিস সাধারণত বাহু, উরু, পশ্চাতদেশ এবং কপালে দেখা দিতে পারে।
বর্ষাকালের আরও একটি সাধারণ এলার্জি হলো হাইপারপিগমেন্টেশন। যা ত্বকে, বিশেষ করে মুখে গাঢ় প্যাঁচ সৃষ্টি করে। এ সময় শরীরের বিভিন্ন ভাঁজ যেমন- হাঁটু বা কনুইতে গিয়ে পৌঁছায় বিভিন্ন ছত্রাক। এর ফলে ত্বকে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়।
সূত্র: জি নিউজ
জেএমএস/এমকেএইচ