কৃষি ও প্রকৃতি

প্রশংসিত হচ্ছে যুব সমাজের শাপলা চাষ

দিনাজপুর শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে বিরামপুর-নবাবগঞ্জ সড়কের নবাবগঞ্জ উপজেলার ৩ নং গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ছোট মহশেপুর গ্রাম। ঐ গ্রামের যুব সামাজ একত্রিত হয়ে রাস্তার কাছে নয়নজলিতে লাগিয়েছে লাল শাপলা । নয়নজলিটির দৈর্ঘ ৩০০/৩৫০ ফুট, আর প্রস্থ ১০/১২ ফুট। ফুটেছে হাজারো লাশ শাপলা। এ লাল শাপলা পথচারীদের মুগ্ধ করছে প্রতিনিয়িত।

Advertisement

ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বাইসাইকেল, মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে লাল শাপলা ফুলের ছবি তোলেন ফুলপ্রেমিরা।

সাধারণত বর্ষা মৌসুমে খাল, বিল, ঝিল, দিঘী, নালা ও পুকুরে এমনকি জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মায় শাপলা। বিল, ঝিল, নদী, নালা থেকে মানুষ শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে, কেউ আবার বাণিজ্যিকভাবে শাপলার চাষ করে থাকেন, ছাদ বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও অনেকে শাপলা ফুল তালিকায় রাখেন।

কিন্তু দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের ছোট মহশেপুর গ্রামের বিষয়টি পুরোপুরি ভিন্ন। এই গ্রামের কিছু যুবক একত্রিত হয়ে রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায় নয়নজলিতে গত ৩ বছর ধরে লাল শাপলা লাগিয়ে আসছেন। এর রক্ষণাবেক্ষণও করেন তারা।

Advertisement

এখান থেকে কাউকে ফুল তুলতে দেয়া হয় না। কেউ ফুল তুলতে আসলে বা তুললে বাঁধা দেন তারা। নিজেদের ভালোলাগা আর পথচারীদের দৃষ্টি কাড়ার জন্য তারা লাল শাপলাগুলো লাগিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

প্রথম বছর তারা শাপলাগুলোর গড়াসহ গাছ সংগ্রহ করে লাগানোর পর এখন আর তাদেরকে নতুন করে শাপলা গাছ লাগাতে হয় না। বছরজুড়ে এই নয়নজলিতে লাল শাপলা ফুল ফোটে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে নয়নজলি ভর্তি থাকে। আর শুষ্ক মৌসুমে ইরি-বোরো সেচের পানি দিয়ে এই নয়নজলি ভর্তি হয়ে যায়। এতে করে সারাবছরই এই নয়নজলিতে পানি থাকে। তাই সারা বছর এখানে লাল শাপলা দেখা যায়।

সূর্যদয়ের সময় আলোকরশ্মি পড়া মাত্রই যেন মন পাগল করা এক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে ছোট মহেশপুরের নয়নজলিটি। এ ছাড়া সন্ধ্যার সূর্য ডোবার মুহূর্তে মনে হয় যেন মেঘ মালায় ঢেকে যাওয়া এক অপরূপ দৃশ্য।

ছোট মহেশপুরের নয়নজলিতে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করে ক্ষণিকের জন্য হলেও মনের ক্লান্তি দূর করা যায়। এখানে এলে হৃদয়কাড়া দৃশ্য দেখে কারোরই মন চায় না আর ফিরে যেতে। ওই গ্রামের মানুষ নয়নজলির পানিতে ফুটা লাল শাপলা গুলোকে জীবনের ভালোবাসা হিসাবে বেছে নিয়েছে।

Advertisement

ছোট মহেশপুর গ্রামের যুবক সোহাগ বলেন, আমরা ৩ বছর ধরে এখানে শাপলা ফুল আবাদ করছি, আমরা এগুলো দেখাশোনা করি, কাউকে ফুল তুলতে দেই না, অনেক যত্ন করে রাখি।

আরেক যুবক মামুন বলেন, আমরা যুব সমাজ ৩ বছর ধরে এই ফুল চাষ করছি, কাউকে ছিঁড়তে দেই না, এলাকার কেউ ছিঁড়ি না, যত্ন করে রাখি, মানুষ আসে দেখে চলে যায়। মানুষকে ভালোলাগার জন্য আমরা লাল শাপলা লাগিয়েছি।

সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম বাবু জানায়, সে প্রথমে বইয়ে শাপলা ফুল দেখেছিল এখন, এখন বাস্তবে দেখছে, গ্রামে বড় ভাইদেরকে শাপলা ফুল চাষ করছে। জাতীয় ফুল শাপলা দেখে আমি খুব খুশি। প্রতিদিন সকাল বিকাল এখানে এসে শাপলা ফুল দেখি।

বিরামপুর থেকে নবাবগঞ্জ যাওয়ার পথে লাল শাপলা ফুল দেখার জন্য দাঁড়ানো পথচারী মাহাবুবুর রহমান ও নুরে আলম জানান, তারা এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসায় সময় প্রায় দাঁড়িয়ে লাল শাপলা দেখেন।

তারা বলেন, এটি যুব সমাজের একটি ব্যতিক্রমী অসাধারণ উদ্যোগ। ফুল যেমন পবিত্র, এই শাপলা ফুলগুলো যে যুবকেরা লাগিয়েছে তাদের মনটাও তেমনি পবিত্র বলে আমরা মনে করি। ফুলগুলো দেখে কিছু সময়ের জন্য হলেও শৈশবে ফিরে যাই।

এমদাদুল হক মিলন/এমএমএফ/জিকেএস