নোয়াখালীর সূবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সোহাগ মিস্ত্রির ছেলে মো. সুজন। দীর্ঘ ১২ বছর ঢাকার মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে রমনা ফার্মেসিতে চাকরি করেন। মগবাজার গ্রীণ ওয়েতে স্ত্রী জান্নাত (২৩) ও ৯ মাসের কন্যা সুবহানা তায়েবাকে নিয়ে সুখেই কাটছিল তার সংসার। কিন্তু রোববারের বিস্ফোরণ সবকিছু তছনছ করে দেয়। বিস্ফোরণে প্রাণ হারান সুজনের স্ত্রী জান্নাত বেগম ও মেয়ে সুবহানা।
Advertisement
সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে তাদেরকে সুজনের শ্বশুরবাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের বাট্টা ইউনিয়নে দাফন করা হয়েছে।
মো. সুজন জাগো নিউজকে জানান, বিস্ফোরণের ঘটনার পাশেই তার কর্মস্থল রমনা ফার্মেসি। ঘটনার সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। বিস্ফোরণের পর কয়েকজন আহত নারীকে ড্রেসিংসহ প্রাথমিক চিকিৎসাও দেন তিনি। কিন্তু পরে জানতে পারেন বিস্ফোরণে তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালকও আহত হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, সন্ধ্যায় মেয়ে সুবহানা আর ১৩ বছরের ভাই রাব্বিকে নিয়ে মগবাজার আড়ংয়ের উল্টো দিকে শর্মা হাউজে খেতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী জান্নাত।
Advertisement
পরে খবর পেয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে স্ত্রীর লাশ পান। একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় নয় মাসের মেয়ে। আর শ্যালক রাব্বি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
হাসপাতালের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জান্নাতকে রাত ৯টার দিকে যখন হাসপাতালে নেয়া হয়, তার পুরো শরীর ছিল ধুলাবালিতে ভরা, ক্ষত আর রক্তও দেখা যাচ্ছিল। আহতদের ভিড় আর হাসপাতালের কোলাহল ছাপিয়েও তার আহাজারি শোনা যাচ্ছিল।
ট্রলিতে শুয়ে অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত যাওয়ার সময় জান্নাত বারবার শুধু বলছিলেন, ‘আমাকে বাঁচান, আমার স্বামীকে ডাকেন।’
ঘণ্টা দেড়েক পর জান্নাতের স্বামী সুজন যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান, ততক্ষণে জান্নাত না ফেরার দেশে।
Advertisement
বাকরুদ্ধ সুজন বলেন, ‘আমার সব শেষ, আমার আর কিছু রইল না।’
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ংয়ের শো-রুম লাগোয়া ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৬০ জনেরও বেশি মানুষ।
আহতদের মধ্যে ১৭ জনকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইকবাল হোসেন মজনু/ইএ