জাতীয়

রিকশাচালকদের পোয়াবারো : অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের

‘আমরা তো এমনিতেই পথের ফকির। ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে না এসে কোনো উপায় নেই। ডাক্তারের কাছে দৌড়ঝাপ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধপত্র কিনতে কিনতে এমনিতেই ফকির হয়ে গেছি। সরকারের কাছে আমাদের সন্তানের জীবনের কী কোনো দাম নাই? আমাদের জন্য লকডাউনকালে সরকারের কী কোনো ব্যবস্থা নাই? আমাদের আর কত কষ্ট দেবে সরকার?’

Advertisement

সোমবার (২৮ জুন) দুপুর আনুমানিক সোয়া ১টায় শাহবাগ চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন আনুমানিক ৯-১০ বছর বয়সী ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত এক শিশুর মা।

আজ সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশু ক্যান্সার বিভাগে মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন এক দম্পতি। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফের বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তারা। গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে সোমবার সকালে এই দম্পতি নারায়ণগঞ্জ থেকে হেঁটে শাহবাগে আসেন বলে জানান শিশুটির মা।

পায়ে হেঁটে এসেছেন কেন প্রশ্ন করতেই শিশুটির বাবার ত্বরিত জবাব, ‘ভাই, এতক্ষণ আপনাকে কী বললো আমার স্ত্রী, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নারায়ণগঞ্জ থেকে বাস চলছে না। রাস্তা ভেঙে ভেঙে আসলে যাতায়াত খরচ দ্বিগুণ লাগবে।’ খরচের কথা চিন্তা করে সকালে হেঁটে আসেন তারা। যাওয়ার সময় কম টাকায় পরিবহন পেলে যাবেন নতুবা আবার হেঁটেই চলে যাবেন বলে জানান।

Advertisement

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারি নির্দেশনায় আজ (২৮ জুন) ভোর ৬টা থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তিন দিন বিধিনিষেধ সাপেক্ষে লকডাউন শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে ১ জুলাই থেকে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে।

আজকের লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শুধু নারায়ণগঞ্জের ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুটির বাবা-মা নন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসাসহ বিভিন্ন কারণে পথে বেরিয়ে হাজার হাজার মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। গণপরিবহন বন্ধ এবং রিকশা চলাচলের অনুমতি থাকায় পাড়া-মহল্লার অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক এমনকি ভিআইপি সড়কও রিকশাচালকদের দখলে চলে যায়। তাদের কেউ কেউ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০-২০ টাকা বেশি চাইলেও গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে অধিকাংশই বেশি ভাড়া হাঁকেন। বিশেষ করে একটু দূরের রাস্তা হলে ভাড়া হাঁকছেন দ্বিগুণেরও বেশি।

সরেজমিনে শাহবাগ, নিউমার্কেট, রমনা ও ধানমন্ডি থানা এলাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় রিকশা আর ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল বেশি। লকডাউন সত্ত্বেও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় বের হয়েছেন। যেকোনো গন্তব্যে রিকশাচালকদের স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া হাঁকতে দেখা যায়।

রাজধানীর ধোলাইপাড় থেকে ৩০ টাকা করে ৬০ টাকায় নিয়মিত যাতায়াত করেন বিএসএমএমইউয়ের এক কর্মচারী। তিনি জানান, আজ রিকশাচালক ভাড়া হাঁকছেন ২৫০ টাকা।

Advertisement

পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আরেক শিক্ষার্থী উত্তেজিত কণ্ঠে রাস্তায় চলাচলকারী কয়েকটি প্রাইভেটকার দেখিয়ে বলেন, ‘এ লকডাউন গরিব মারার লকডাউন। গণপরিবহন বন্ধ করে গরিব মানুষের খরচ বাড়িয়েছে আর বড় লোকের গাড়ি চলার অনুমতি দিয়েছে।’

গাজীপুরের বাসিন্দা হাসান আলী বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা শেষে শাশুড়িকে গাজীপুরের বাসায় নিয়ে যেতে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুরেও সিএনজি বা ভাড়ায়চালিত প্রাইভেটকার না পেয়ে শাশুড়ি ও স্ত্রীকে রাস্তার আইল্যান্ডে বসিয়ে হন্যে হয়ে গাড়ি খুঁজছিলেন তিনি। অনেক কষ্টে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়ায় পান। এ জন্য নিজেকে ধন্য মনে করছেন বলে জানান এই ভদ্রলোক।

আরশ আলী নামে এক রিকশাচালক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতেও সরকার তাদের রিকশা চালানোর অনুমতি দেয়ায় তারা খুশি। তা না হলে লকডাউনে না খেয়ে মরতে হবে। তিনি বলেন, মানুষে মানুষে পার্থক্য আছে।

লকডাউনের কারণে ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া চাওয়ার যুক্তি আছে বলে মন্তব্য করে আরশ আলী বলেন, ‘খুব বেশি ভাড়া চাওয়া অন্যায়।’

এমইউ/এমআরআর/এএসএম