অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির দায়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, চট্টগ্রামে নকল ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বাধার মুখে পড়া, ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন নারী রোগীকে হাসপাতালের কর্মী কর্তৃক যৌন হয়রানি, শিশুদের যথেচ্ছভাবে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের ঘটনাগুলো স্বাস্থ্যখাতের বেহাল চিত্রকেই তুলে ধরে। অথচ মৌলিক চাহিদা হিসেবে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। এ খাতে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাটাই হবে এই মুহূর্তের করণীয়। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে স্বাস্থ্যখাতে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। সরকারি বেসরকারি উভয় পর্যায়েই অগ্রগতি হয়েছে এ খাতের। বেসরকারি পর্যায়ে বড় বড় নামী-দামী অনেক ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং হাসপাতালও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেসব জায়গা থেকে লোকজন সেবাও পাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাঝে মধ্যে এসব নামী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ আসে যেগুলো অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং দুর্ভাগ্যজনকও বটে। গত রোববার রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এক অভিযানে ল্যাবএইড হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ল্যাবএইড হাসপাতালের এক চিকিৎসকের সহকারীকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওষুধ প্রশাসনের (ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কোনো অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ওষুধ আমদানি ও বিক্রি করতো তারা। এ ওষুধগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। তাই অবৈধভাবে এসব ওষুধ রাখায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া একই অভিযোগে শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটের আল রাজী হাসপাতালকে ছয় লাখ এবং আদাবরের এসপি, এসপি-২ হাসপাতালকে ১৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।অন্যদিকে চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওষুধের দোকানে অভিযান চালাতে গেলে মালিকদের সংঘবদ্ধ বাধার কারণে এক পর্যায়ে অভিযান বন্ধ রেখে ফিরে যায়। এই ধরনের প্রবণতা অন্য এলাকাতেও দেখা যায়। দোকান মালিকরা হয়রানির অভিযোগ এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতকেই উল্টো কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। সহযোগী একটি দৈনিকের সংবাদ অনুযায়ী, শিশুদের ওপর যথেচ্ছভাবে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ওষুধ ব্যবসার লাভের এক তৃতীয়াংশ আসে এই এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ বিক্রি করে। তাই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে চিকিৎসকরা শিশুদের এন্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহারের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরও ইন্ধন আছে। চিকিৎসকরা যে কোম্পানির ওষুধ যত বেশি ব্যবস্থাপত্রে লিখবেন তিনি তত বেশি কমিশন পাবেন ওই কোম্পানি থেকে। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। এছাড়া ওষুধের মান, নকল ও ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার, ইচ্ছেমত ওষুধের দাম রাখা, বিশেষ করে বিদেশি ওষুধের লাগামহীন মূল্যের কারণে জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন নারী রোগীর যৌন হয়রানির বিষয়টিও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় চিকিৎখাতের এই অতিগুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো আমলে নিয়ে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পিছু না হটে জোরদার করতে হবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। জনস্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নতিকল্পে এর কোনো বিকল্প নেই। এইচআর/এমএস
Advertisement