রাজনীতি

ক্ষুধার্ত পেট লকডাউন বোঝে না : ন্যাপ

‘নিম্নবিত্ত মানুষের জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের নিশ্চয়তা না থাকলে সরকার ঘোষিত লকডাউন বা কঠোর লকডাউন কোনোটাই কার্যকর হবে না। জনগণকে ঘরবন্দী করার আগে দরকার খাদ্যের নিশ্চয়তা। প্রান্তিক মানুষদের খুবই সমস্যা হবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মানুষের ক্ষুধা দূর করা না গেলে ভয় দেখিয়ে লকডাউন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। ক্ষুধার্ত পেট লকডাউন বোঝে না। লকডাউন সফল করতে হলে অভাবি মানুষের কাছে খাদ্য ও নগদ টাকা পৌঁছাতে হবে।’

Advertisement

সোমবার (২৮ জুন) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ’র চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এসব কথা বলেন। তারা বলেন, ‘করোনার প্রথম বছরের ক্ষয়ক্ষতি এখনো সাধারণ মানুষ সামলে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে দ্বীতিয় ঠেউ সাধারণ মানুষকে অসহায় করে তুলেছে। সামনের দিনগুলো নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে তারা। নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য এ সময়ে চলা খুব কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের পক্ষেও কিন্তু সবার জন্য খাদ্যের যোগান দেয়ার কোনো ব্যবস্থা হয়েছে বলে কারো জানা নেই। তবে, লকডাউন কার্যকর করতে হলে খেটে খাওয়া দিনমজুর, বাসের হেলপার, রিকশাওয়ালা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারের সহায়তা দিতে হবে।’

এই দুই নেতা বলেন, ‘লকডাউনে কলকারখানা, গার্মেন্টস, সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। এর চেয়ে অমানবিকতা, নির্মমতা আর কী হতে পারে। যারা এই ঘোষণা দিয়েছে তারা না হয় ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়েন, কিন্তু গার্মেন্টসকর্মী, কারখানার শ্রমিক, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী যারা তারা যাওয়া আসা করবেন কীভাবে? সরকার মূলত কারখানা, গার্মেন্টস মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় সব খোলা রাখছেন, কিন্তু শ্রমিকদের বুকে লাথি মেরে।’

তারা বলেন, ‘মালিকরা ঠিকই গাড়িতে করে গিয়ে কোন শ্রমিক সময়মতো কাজে যোগ দেননি তার হিসাব করে বেতন কাটা শুরু করবে। আর চাকরি বাঁচানোর দায়ে শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে, ঘরভাড়ার টাকা থেকে কয়েকগুণ বেশি রিকশাভাড়ায় কারখানায় যোগ দেবে। জনমনে প্রশ্ন, যারা এসব প্রজ্ঞাপন লেখেন তারা কি আসলে মানুষের কথা ভাবেন? তারা কি এসব বোঝেন না? নাকি সব জেনে বুঝে শুনেও তামাশা করেন। জনগণের সঙ্গে মশকরা করাই কি তাদের কাজ?’

Advertisement

ন্যাপ নেতৃদ্বয় বলেন, ‘যারা প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন তারা যুক্তি দিতে পারেন রিকশা তো চলবে। কিন্তু, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন যাত্রাবাড়ি থেকে পল্টন বা মতিঝিল রিকশা ভাড়া কত? আর সাধারণ মানুষের আয় কত? সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষরা যদি দিনে ১৫০-২০০ টাকা রিকশা ভাড়াই দেন তাহলে তারা চাল কিনবেন কী দিয়ে আর সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাবেন কীভাবে।’

তারা আরও বলেন, ‘সবার আগে প্রয়োজন শতভাগ মাস্কপরা নিশ্চিত করা। সরকারকে মনে রাখতে হবে, ঘরে খাবার না থাকলে, বাচ্চা দুধের জন্য কাঁদলে লকডাউন, শাটডাউন দিয়ে কিছুই হবে না। মানুষ ঘরের বাইরে যাবেই। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, করোনার এই ভয়াবহতা মোকাবিলা করতে সরকার আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকরী এবং জনবান্ধব পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বার বার। তাদের সকল সিদ্ধান্ত হঠকারিতা আর সমন্বয়হীনতা। সকালে এক ঘোষণা তো বিকেলে আরেক। রাজনীতিবিদ আর জনপ্রতিনিধিদের দূরে রেখে আমলা দিয়ে দেশ পরিচালনার ফলেই এই অবস্থা। এই সর্বগ্রাসী যুদ্ধটা স্বার্থপর, জনবিচ্ছিন্ন আমলাদের দিয়ে মোকাবিলা করা বা জয় করা কোনোভাবেই সম্ভব না। সরকার যত দ্রুত এই সত্যিটা অনুধাবন করবে ততই মঙ্গল।’

কেএইচ/এমকেএইচ

Advertisement