মতামত

খুলে দাও দ্বার

ফেসবুকের দিকে যারা চাতকের মতো তাকিয়ে আছেন তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অচিরেই ফেসবুক খুলে দেবার বক্তব্যকে কতোটা আশাবাদ হিসেবে নিয়েছেন সেটি আন্দাজ করতে না পারলেও বাংলাদেশ সরকারের সাথে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে আমি স্বাগত জানাই। টেলিকম প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম খুব যৌক্তিক কারণে অতি দ্রুত ফেসবুককে চিঠি লিখে বৈঠকে বসার ব্যবস্থা করায় তাকে অভিনন্দনও জানাই। বস্তুত মাত্র কয়েক মাস আগে টেলিকম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর তিনি প্রথমেই একটি বিশাল কাজে হাত দেন। অনিবন্ধিত সিমকে নিবন্ধনের আওতায় আনার তার সেই প্রচেষ্টা ছিলো এদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তার ইতিহাসে একটি মাইলফলক। লাগামহীনভাবে টেলিকম অপারেটররা কেবল তাদের ব্যবসার প্রসারের জন্য পুরো রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিকে যেভাবে বিপন্ন করে তুলেছিলো তিনি সেটি ঠেকানোর জন্য দৃঢ়তার সাথে পদক্ষেপ নেন। যে বিটিআরসির দায়িত্ব ছিলো সিম নিবন্ধন নিশ্চিত করা এবং যাদের কাজ ছিলো অনিবন্ধিত সিমের জন্য সিম  প্রতি ৫০ ডলার জরিমানা করা তার চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস তখন প্রতিমন্ত্রীর সাথেও দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। তাতে এটি বোঝা গিয়েছিলো যে বিটিআরসির সেই কর্মকর্তা টেলিকম অপারেটরদের কেনা গোলাম ছিলেন। অন্যদিকে জুনায়েদ আহমদ পলককে ধন্যবাদ দিতে চাই কেবল এজন্য নয় যে ফেসবুকের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন বলে। বরং তিনিই প্রথম দেশে একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং অতি দ্রুত তেমন একটি আইনের খসড়া তিনি প্রস্তুতও করে রেখেছেন। বিষয়টির প্রতি তার যে পরিমাণ আগ্রহ আমি দেখেছি তাতে তার প্রশংসা করতেই হবে।আমাদের স্মরণে রাখা দরকার যে একটি স্বাধীন দেশের নিরাপত্তা কর্মীদের যে সচেতনতা, জ্ঞান ও মেধা থাকা দরকার সেটির কোনো নমুনা আমরা এতো বছরেও দেখতে পাইনি। আপনাদের মনে থাকার কথা যে এক সময়ে এদেশে বিনামূল্যের সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের প্রস্তাব এসেছিলো, সেটি তখনকার সরকার নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। আমার নিজের ধারণা  সেই সরকারের তথাকথিত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সরকারকে তখন বিপথে পরিচালিত করেছিলো। পাশের দেশ মিয়ানমার এবং ভারত তাতে যুক্ত হলেও বাংলাদেশ বলেছিলো সেই সাবমেরিন ক্যাবল লাইনে যুক্ত হলে আমাদের দেশের সকল তথ্য পাচার হয়ে যাবে। তখনই মার্কিন স্যাটেলাইট থেকে বাংলাদেশের সেনানিবাসসমূহের প্রতি ইঞ্চি মাটির ছবি তোলা হচ্ছিলো। আামাদের নিরাপত্তা বিষয়ক নেতারা সেটি চোখে দেখেননি-সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে তথ্য পাচারের অলীক স্বপ্ন দেখেছিলেন। একইভাবে স্মরণ করুন যে, দেশে নির্বাচনের দিন মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হতো। যুক্তি ছিলো যে সন্ত্রাসীরা মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নির্বাচন বানচাল করতে পারে। একই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বহু বছর মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিলোনা।জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেইসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেন এবং ৯৬ সালে যেমন করে তথ্যপ্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেন তেমনি ২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এর সুফলও আমরা জানি। দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সংযোগ, সাড়ে ৫ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক ও ১ কোটি ৭০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী দেশটিকে ডিজিটাল যুগে স্থাপন করেছে। বস্তির মানুষটি থেকে শুরু করে জনসংখ্যার প্রায় পুরোটাই যেমন মোবাইলে যুক্ত তেমনি ইন্টারনেট ছাড়া জীবনের কথা ভাবাই যায় না। ফেসবুকও এখন কেবল বন্ধুত্ব, স্ট্যাটাস বা ছবির প্লাটফর্মে নেই। এটি ব্যবসা-বাণিজ্য-শিক্ষা-রাজনীতি সবকিছুর কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।এমন একটি সময়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে সফল মিটিং হবার পরিপ্রেক্ষিতে এই সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাটিতে তালা মেরে রাখার কোনো কারণ নেই। অনুরোধ করি ফেসবুক খুলে দিন। সমস্যা যদি থাকে তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে বসে তার সমাধান করুন। আমরা যতোটা শুনেছি ফেসবুক বাংলাদেশ সরকারের বিষয়গুলোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে এবং সরকার এখন তাদের সহযোগিতা আশা করতেই পারে। এমন অবস্থায় আমরা দেশের মানুষ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় থাকতে চাই না।লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ,  কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনকmustafajabbar@gmail.com, www.bijoyekushe.net,  www.bijoydigital.comএইচআর/এমএস

Advertisement