রাজধানীর মগবাজারে ফাস্টফুড শপ শর্মা হাউসে জমে থাকা গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়ে থাকতে হতে পারে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ও পুলিশ। বিস্ফোরণের প্রাথমিক পর্যায়ে এসি বিস্ফোরণের কথা জানা গেলেও পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কর্মকর্তারা এসে গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের কথা জানান।
Advertisement
রোববার (২৭ জুন) সন্ধ্যার এ ঘটনার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘৭টা ৩৪ মিনিটে আমরা খবর পাই। আমাদের টিম এখানে আসে। এটি একটি তিনতলা ভবন। এর নিচতলায় ফাস্টফুডের দোকান, দ্বিতীয় তলায় সিঙ্গারের একটি গোডাউন ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের কারণে ব্লাস্ট ওয়েভ ও সাউন্ড ওয়েভ সৃষ্টি হয়। এতে আশপাশের ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ভবনের সব পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি এখনই বলতে পারি এই ভবন বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, গ্যাস বা এ জাতীয় কোনো কিছুর মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। আমরা পরীক্ষা করছি। গ্যাস জাতীয় কিছু থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে। এ ঘটনায় ৩৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছে ১৭ জন। মোট আহত হন ৬০ জনেরও বেশি মানুষ।’
Advertisement
এর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনাটি কোনো নাশকতা নয়। এখানে বোমা বিস্ফোরিত হলে বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে বাসসহ আশপাশের লোকজন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত। এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় গ্যাসের বিস্ফোরণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বিস্ফোরিত ভবনের নিচতলার শর্মা হাউসে গ্যাস জমে ছিল। এ কারণে বিস্ফোরণের সূত্রপাত ঘটতে পারে। এ গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে আশপাশের সাতটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তিনটি বাস পুড়ে গেছ।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তারা চাইলে পুলিশ কমিটিতে থাকবে।’
এ ধরনের দোকানে নিরাপত্তা বিধানে পুলিশের ভূমিকা কী, তদারকির বিষয়টি তো পুলিশের ওপর বর্তায়- এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে এখানে দায় তো আমাদের না। গ্যাসের সংযোগটা বৈধভাবে নেওয়া হয়েছে কি-না, গ্যাসের লাইনটা সাইনটিফিক্যালি লিক-প্রুফ ছিল কি-না, সেটার এক্সপার্ট তো আমি না। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে। তারা এটা দেখভাল করবে। এরপর ব্যবস্থা গ্রহণের সময় যদি বাধা দেয়া হয়, আমরা দেখব।’
Advertisement
ওই ভবনে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী শাহাদত আলী বলেন, ‘আমি মনে করেছি আমাদের এখানে এসি বিস্ফোরণ অথবা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু কীভাবে এই বিস্ফোরণ তা জানা যাচ্ছে না।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বাবুল হোসেন বলেন, ‘এমন ভয়াবহ শব্দ জীবনেও শুনিনি। মনে হয়েছে ভবনটা কেঁপে উঠল। বিস্ফোরণের শব্দে ভবনের কাচ ভেঙে পড়তে শুরু করে।’
শফিক নামে একজন পথচারী বলেন, ‘হঠাৎ করে বিকট শব্দে আঁতকে উঠি। চোখের সামনে তাকিয়ে দেখি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কখনো এই ধরনের বিস্ফোরণ দেখিনি। জীবনে এমন ভয়ংকর কিছু এভাবে কাছ থেকে দেখিনি। অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।’
টিটি/এমএইচআর/এআরএ