দেশজুড়ে

করোনা আক্রান্ত হয়েও ৩০-এর অধিক রোগী দেখলেন চিকিৎসক

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েও রোগী দেখলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের এক চিকিৎসক। তার করোনা আক্রান্তের বিষয়টি জেনে তাকে আইসোলেশনে থাকতে ছুটি দিয়েছে তার কর্মস্থল হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আইসোলেশনে না থেকে রোববার (২৭ জুন) বিকেল পর্যন্ত বেসরকারি চেম্বারে রোগী দেখেন ওই চিকিৎসক।

Advertisement

করোনাভাইরাস পজিটিভ নিয়ে রোগী দেখার খবরে চিকিৎসকের চেম্বারে ভিড় করেন সাংবাদিকরা। পরে বাসায় ফিরে যেতে বাধ্য হন তিনি।

অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে রোগী দেখার বিষয়টি জানাজানি হলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক চিকিৎসক শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ নিয়মিত রোগী দেখেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কুমারশীল মোড়ের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় গত ১৪ জুন তার স্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার নমুনা দেন। এতে তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর চিকিৎসক শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করলে তার নেগেটিভ আগে। কিন্তু ঢাকায় পাঠানো নমুনার পিসিআর ল্যাব রিপোর্টে চিকিৎসক শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ পজিটিভ হন।

Advertisement

এর কিছুদিন পর তিনি আবার অ্যান্টিজেন টেস্ট করালে নেগেটিভ আসে। একই নমুনা ঢাকায় পাঠালে শনিবার (২৬ জুন) আসা রিপোর্টে চিকিৎসক শ্যামল রঞ্জন দেবনাথের করোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়ে।

রোববার বিকেলে জেলা শহরের কুমারশীল মোড়ে তার ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে রোগীর প্রচণ্ড ভিড়। সিরিয়াল অনুযায়ী ২-৩ জন করে রোগী অর্থোপেডিক চিকিৎসক শ্যামল রঞ্জন দেবনাথের কক্ষে ঢুকছেন। এসময় সিরিয়ালম্যান জানান, চিকিৎসক শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ আজ রোববার ৫৩ জন রোগীকে চিকিৎসা দেবেন। এরমধ্য বিকেলে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৩০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ফলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছেন তার কাছে সেবা নিতে আসা রোগীরা।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই প্রতিবেদক চেম্বারের ভেতরে ঢুকে দেখেন আরও ৩-৪ জন রোগী ভেতরে বসে আছেন। এসময় ডা. শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ আগে আবার পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। আমি তো রোগীদের আগেই সময় দিয়ে রেখেছিলাম। আরও কিছু রোগী আছে। তাদেরকে দেখে আমি চেম্বার বন্ধ করে দেব।’

এ বিষয়ে সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা পিসিআর রিপোর্ট পাওয়ার পর আক্রান্তদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি। এছাড়া ঢাকা থেকে এসএমএস পাঠানো হয়। রিপোর্ট পাওয়ার পর ডা. শ্যামলকে পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি আমাদের চিকিৎসকরা রোববার দুপুরের আগেই জানিয়েছিলেন।’

Advertisement

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। তবে করোনা পজিটিভ নিয়ে একজন চিকিৎসকের চেম্বার করা ঠিক হয়নি।’

জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ডা. শ্যামল রঞ্জন দেবনাথ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাকে আইসোলেশনে থাকতে ছুটি দেয়া হয়েছে। তিনি ছুটিতে গিয়ে যদি আইসোলেশনে না থেকে বেসরকারি চেম্বারে রোগী দেখে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসআর/এমকেএইচ