আইন-আদালত

সালিশে কিশোরীকে চেয়ারম্যানের বিয়ের ঘটনা তদন্তে হাইকোর্টের নির্দেশ

পটুয়াখালীর বাউফলে সালিশ বৈঠকে এসে কিশোরীকে পছন্দ হওয়ায় তার সঙ্গে চেয়ারম্যানের বিয়ের ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি), জেলা নিবন্ধক ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আলাদা তিনটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

Advertisement

সেই সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার কেন কর্তৃত্ববহির্ভুত হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে এবং ওই কিশোরীকে নিরাপত্তা দিতে এসপিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবর আমলে নিয়ে রোববার (২৭ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এই আদেশ দেন। আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৮ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছেন। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

আদালত শুনানিতে বলেছেন, ‘পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে যা বুঝলাম, সালিশ করার জন্য ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষমতার অপ্যবহার করেছেন চেয়ারম্যান।’

Advertisement

প্রকাশিত খবরটি উপস্থাপন করার পর এর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আইনজীবী আমাতুল করিম ও একরামুল হক টুটুল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খায়রুন্নেসা নাসিমা, সীমা জহুর ও কানিজ ফাতেমা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

আমাতুল করিম জানান, পটুয়াখালীর বাউফলে সালিশ কিশোরী মেয়েকে দেখে পছন্দ হওয়ার পর বিয়ে করা সেই চেয়ারম্যানের ঘটনায় তিনটি বিষয় নিয়ে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

তিনি আরও বলেন, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ক্ষমতার অপব্যবহার তদন্ত করবেন, পিবিআই ফৌজদারি অপরাধের বিষয়ে তদন্ত করবেন এবং জেলা নিবন্ধক বিয়ে নিবন্ধনের বিষয়ে তদন্ত করবেন। এ ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ নেয়া হলে সেটাও জানাতে হবে।

গত শুক্রবার (২৫ জুন) দুপুরে বাউফলের কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে বিয়ে করেন।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একই ইউনিয়নে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই কিশোরীর। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাতে তারা দুজন পালিয়ে যায়। বিষয়টি কিশোরীর বাবা কনকদিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানান। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেয়ার কথা বলে শুক্রবার কনকদিয়া ইউপি কার্যালয়ে ছেলে ও মেয়ের দুই পরিবারকে আসতে বলেন চেয়ারম্যান।

সে অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে দুই পরিবারের সদস্যরা ইউপি কার্যালয়ে আসেন। সেখানে মেয়েটিকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের। তিনি মেয়েটিকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। শুক্রবার দুপর ১টায় স্থানীয় কাজি মো. আবু সাদেককে বাড়িতে ডেকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে ওই কিশোরীকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার

বিয়ের পর এ ঘটনা জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার (২৬ জুন) ওই একই কাজীর মাধ্যমে তালাক সম্পন্ন হয়।

শাহিন হাওলাদার জানান, ওই মেয়ে তাকে স্বামী হিসেবে মেনে না নেয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে মেয়েটিকে তার বাবার সঙ্গে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

এফএইচ/এমএসএইচ/এমএস