লাইফস্টাইল

যে কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়, প্রতিকারের উপায়

ডা. ইসমাইল আজহারি

Advertisement

বিশ্বে প্রতি বছর ৩৮ লাখ পুরুষ এবং ৩৪ লাখ নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মধ্যে প্রতি ৪ জনের একজনের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে করোনারি হার্ট ডিজিজ বা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ। যা মূলত এথোরোসক্লেরোসিস এর ফলাফল।

এথোরোসক্লেরোসিস কি?

এথোরো+সক্লেরোসিস থেকে এথোরোসক্লেরোসিস শব্দটা এসেছে। এথোরো মূলত অ্যাথেরোমা থেকে এসেছে। আর্টারি বা ধমনির ওয়ালে ফ্যাটি ম্যাটেরিয়াল বা চর্বি জাতীয় বস্তু জমা হয়। তখন ধমনীর ওয়ালসমূহ মোটা হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ধমনীর লুমেন সরু হয়ে যায় এবং রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং আর্টারিসমূহ শক্ত হয়ে যায়। এই অবস্থাকে এথোরোসক্লেরোসিস বলা হয়।

Advertisement

সহজ কথায়, যদি কোনো ফ্যাটি প্ল্যাক এর কারণে রক্তনালী দিয়ে রক্ত চলাচল সীমিত হয়ে যায়; তখন এই অবস্থাকে এথোরোসক্লেরোসিস বলে। এথোরোসক্লেরোসিস বলতে মূলত হার্টের ধমনীসমূহে তথা করোনারি আর্টারিসমূহের মধ্যে ডিজেনারেটিভ পরিবর্তনকে বোঝানো হয়।

তবে এথোরোসক্লেরোসিস শরীরের যেকোনো রক্তনালিতে হতে পারে। হাতে-পায়ে হলে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ বলা হয়। শরীরে যদি অতিরিক্ত এলডিএল ক্লোরেস্টেরল থাকে; তখন সেটা রক্তনালীতে জমা হয়ে এথোরোসক্লেরোসিস তৈরি করে।

করোনারি আর্টারিতে এথোরোসক্লেরোসিস হলে সেখানে রক্ত প্রবাহ কমে যায় কিংবা রক্ত সঞ্চালন বাঁধাগ্রস্ত হয়। আর যেখানেই রক্ত প্রবাহ কমে যায়; সেখানে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। কারণ রক্তের হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে মিশেই অক্সিজেন সারা দেহে সঞ্চালিত হয়।

শরীরের কোনো টিস্যুতে চাহিদার তুলনায় অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেলে তাকে ইসকেমিয়া বলে। হার্টের মধ্যে যদি অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়; তাহলে এই অবস্থাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলে।

Advertisement

হার্ট অ্যাটাক

হার্ট এর মাংশপেশীসমূহ সচল রাখতে এর মধ্যকার দুইটি রক্তনালী-রাইট এন্ড লেফট করোনারি আর্টারি বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই করোনারি আর্টারিসমূহে ফ্যাট কিংবা চর্বি জমে যদি রক্ত সঞ্চালনে বাঁধাগ্রস্ত হয়; তাহলে এই অবস্থাকে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলে। এই অবস্থাকে আবার হার্ট ব্লক ও বলা হয়। আর ফ্যাট জমে আর্টারি মোটা আর শক্ত হয়ে যাওয়াকে এথোরোসক্লেরোসিস বলে।

এথোরোসক্লেরোসিস হলে যেকোনো মুহুর্তে রক্তনালী ছিড়ে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। রক্তনালীর ভিতর যদি রক্ত জমাট বাঁধে; তাহলে রক্ত চলাচলে বাঁধাগ্রস্ত হয়। ফলে হার্টের রক্তনালীতে যদি রক্ত চলাচল করতে না পারে; সেক্ষেত্রে হার্টের মাংসপেশিসমূহ অক্সিজেন পায় না। অক্সিজেন না পেলে হার্টের টিস্যুসমূহ ড্যামেজ হতে থাকে। হার্টের পেশীসমূহে যদি পরিমিত অক্সিজেন দিতে না পারে; তখন হার্টের টিস্যুসমূহ ড্যামেজ হয়ে যায়। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। এ সময় খুব দ্রুত রক্ত সরবরাহ চালু করতে না পারলে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। এক্সেত্রে রোগীর প্রচণ্ড বুকে ব্যাথা হয় সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ঘাম, ঘাড়-হাত-পিঠে বা থুতনিতে তীব্র ব্যথা হতে পারে।

ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ এর উপসর্গ:

ব্লাড প্রেশার নিয়মিত চেক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্লাড প্রেশার পরিমাপ না করায়, রোগী হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যুবরণ করতে পারেন। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে নিম্নের কিছু উপসর্গ দেখা দেয়-

১. চলতে ফিরতে বুকে ব্যথা২. শ্বাসকষ্ট৩. খাওয়ার পরে বুকে ব্যথা৪. একটু টেনশন করলে বুকে ব্যথা৫. মাথা ঘোরানো এবং মাথা ব্যথা৬. ঘাড় কিংবা বাহুতে ব্যথা৭. বমি বা বমির ভাব

ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের কারণ-

১. উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন ২. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যথা- গরুর গোস্ত, ডিম বা ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার ইত্যাদি৩. সিগারেট স্মোকিং বা জর্দা ইত্যাদি ৪. অবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন৫. অ্যালকোহল ও কোমল পানীয়৬. পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করা৭. শারীরিক পরিশ্রম না করা৮. সবসময় শুয়ে থাকা ইত্যাদি

ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ এর কারণে জটিলতা-

১. হার্ট অ্যাটাক হতে পারে২. ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে

প্রতিকার-

১. ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।২. ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।৩. ওজন স্বাভাবিক বিএমআই অনুযায়ী রাখা জরুরি।৪. অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে এবং লবণ কম খেতে হবে।৫. নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।৬. স্বাভাবিক শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।

চিকিৎসা:

১. লাইফস্টাইল মোডিফাই করতে হবে এবং অতিরিক্ত ওজন কমার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

২. ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সেজন্য নিয়মিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত খেয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মেডিসিন বাদ দেওয়া যাবে না।

সময়মতো ওষুধ খেতে হবে। এ ছাড়াও যেকোনো জটিলতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বুকে ব্যথা হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

লেখক: চিকিৎসক, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স এন্ড রিসার্চ

জেএমএস/এমএস