করোনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতিগ্রস্ত আরও ২ লাখ ২২ হাজার খামারিকে ২৮৬ কোটি টাকা প্রণোদনা দেবে সরকার। ছোট ছোট প্রান্তিক খামারিদের ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে এ প্রণোদনা দেওয়া হবে।
Advertisement
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার পাশাপাশি খামার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতিগ্রস্ত ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৭৪ জন খামারিকে প্রায় ৮৪৬ কোটি কোটি টাকার নগদ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের সংস্থান রেখে জরুরি কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়। এর মধ্যে প্রাণিসম্পদ সেক্টরের ডেইরি ও পোল্ট্রি খাতে ১৫টি ক্যাটাগরিতে ৬ লাখ ২০ হাজার খামারির জন্য প্রায় ৭৪৬ কোটি টাকা এবং মৎস্য সেক্টরের ৭৮ হাজার ৭৪ জন খামারির সাতটি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন হারে ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনার সংস্থান রাখা হয়।
জানা গেছে, করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতিগ্রস্ত ২ লাখ ২১ হাজার ৯৯৩ জন খামারিকে ২৮৬ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে ২ লাখ ১৮ হাজার ১৪৮ জন খামারিকে ২৮১ কোটি ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা এবং মৎস্য খাতে ৩ হাজার ৮৪৫ জন খামারিকে ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা । রোববার (২৬ জুন) বিকেলে খামারিদের মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এ প্রণোদনার টাকা বিতরণ করা হবে।
এর আগে প্রথম ধাপে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষতিগ্রস্ত ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৬ জন খামারিকে ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার ২৫০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ৪ লাখ ১ হাজার ৮৫২ জন খামারিকে ৪৬২ কোটি ৩৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়। মৎস্য খাতে ৭৪ হাজার ২২৯ জন খামারিকে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়।
Advertisement
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের দেয়া প্রণোদনার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে। এতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছেন তারা। ফলে করোনাকালীন দুধ-ডিম-মাংসের পর্যাপ্ত জোগান সম্ভব হয় এবং এই দুঃসময়ে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। প্রণোদনা পাওয়ায় অনেক খামারি সঙ্কট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ধাপে খামারিদের প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রাব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনায় লকডাউনের কারণে খামারিদের ইনপুট সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয় এবং তাদের বিপণন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। এই দুই জায়গায় তারা মনোবল অনেকটা হারাতে বসে। এমন অবস্থায় সরকার তাদের পাশে দাঁড়ায়। তাদের জন্য একদিকে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে তাদের ইনপুট সরবরাহের ব্যবস্থা অটুট রাখে। অন্যদিকে নগদ আর্থিক সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায়। ফলে খামারিরা আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি তাদের মনোবল ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এতে উৎপাদন ব্যবস্থা অটুট রয়েছে।’
মৎস্য খামারিদের প্রণোদনার বিষয়ে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত মহাপরিচালক) খন্দকার মাহবুবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে নতুন করে ৩ হাজার ৮৪৫ মৎস্য খামারিকে ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়া হবে। এই ৩ হাজার ৮৪৫ জনকে প্রণোদনার টাকা আগেই দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। যেহেতু প্রাণিসম্পদ খাতের প্রণোদনার টাকা এখন দেয়া হচ্ছে, তাই একই সাথে মৎস্য খামারিদের প্রণোদনার টাকাও দেয়া হচ্ছে। উপজেলা পর্যায় থেকে তালিকা পাঠানোর পর বিকাশ-নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের কাছে পাঠানো হলে কারও কারও নম্বর ভুল পাওয়া গেছে। অনেকের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ভুল পাওয়া গেছে। এসব কারণে একটি অংশকে আবার মাঠ পর্যায় থেকে ভেরিফাই করে উপজেলা কমিটি ও ইউএনওদের স্বাক্ষর পাঠাতে হয়েছে। সেগুলোকেই নতুন করে দেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা রোববার ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা দেব। এর আগে প্রথম ধাপেও খামারিদের প্রণোদনা দিয়েছি। দ্বিতীয় ধাপে যাচাই-বাছাই করে খামারিদের চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের এ প্রণোদনার টাকা দেয়া হবে। ফলে খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা করছি।’
Advertisement
সার্বিক বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার খামারিকে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এ প্রণোদনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে খামারিদের মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে ৪ লক্ষাধিক খামারিকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। করোনা সংকটে সরকার খামারিদের পাশে আছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ও আওতাধীন দফতর-সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে এত বড় প্রণোদনা অতীতে কখনই দেওয়া হয়নি। এটি এ খাতের জন্য নিঃসন্দেহে মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
আইএইচআর/এসএইচএস/এমকেএইচ