প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল সুবিধার অন্তরায় নেটওয়ার্ক ব্যবহারে ডিভাইসের সহজলভ্যতার অভাব। তবে মানসম্মত নেটওয়ার্কিং সেবাও এই পথে বড় বাধা। একইসঙ্গে রয়েছে স্থানীয় সেবার অপ্রতুলতাও। আর তাই সমন্বিতভাবে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো মোকাবিলা করা না হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শটডাউন-লকডাউন কাজে আসবে না। তাই ডিজিটাল কানেক্টিভিটি এবং ডিভাইস এই দুইটি খাতকে মৌলিক চাহিদা হিসেবে গণ্য করে নীতিনির্ধারক এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
শনিবার (২৬ জুন) ‘বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এমন পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা।
সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় ‘প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা প্রাপ্তিতে ডিভাইসের স্বল্পতা প্রধান অন্তরায়’ শীর্ষক মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী আবু সালেহ।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রয় মৈত্র। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিআরসি কমিশনার এ কে এম শহিদুজ্জামান।
Advertisement
অতিথি বক্তা হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন প্রযুক্তিবিদ ও টেলিকম খাত বিশেষজ্ঞ টিআইএম নূরুল কবীর, বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ, অ্যামটব জেনারেল সেক্রেটারি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম ফরহাদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ৫-জি কমিটির সদস্য অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ, ক্যাব ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন এবং মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন উপদেষ্টা মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান।
এছাড়াও অংশীজনদের মধ্যে শাওমি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান, গ্রামীণফোন ডেপুটি ডিরেক্টর সরদার শওকত হোসেন, রবি আজিয়েটার চিফ রেগুলেটর অ্যাফেয়ার্স অফিসার ব্যারিস্টার সাহেদ আলম ও ফেয়ার গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ৫জি কমিটির সদস্য অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ বলেন, শাটডাউনে গেলে ভার্চুয়াল ছাড়া উপায় নেই। ফোরজির পূর্ণতা ছাড়া ফাইভজি গ্রহণ করা যাবে না তা নয়। আমাদের থ্রিজি, ফোরজি ও ফাইভজি সমন্বিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। প্রযুক্তি গ্রহণে দেরি করার সুযোগ নেই।
হ্যান্ডসেটের মান ঠিক থাকলেও আলোচনায় অংশ নিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্কের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শাওমি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান।
Advertisement
এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য হ্যান্ডসেট সহজলভ্য করার পাশাপাশি কোয়ালিটি সার্ভিস নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ক্যাব ভিপি এসএম নাজির হোসাইন।
নিজেদের প্যাকেজের কথা তুলে ধরে গ্রাহকের জন্য ভালো সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান গ্রামীণফোন ডেপুটি ডিরেক্টর সরদার শওকত হোসেন।
আলোচনায় মোবাইল অপারেটরদের হ্যান্ডসেট তৈরির সুযোগ করে দিতে দাবি জানিয়েছেন রবি আজিয়েটার চিফ রেগুলেটর অ্যাফেয়ার্স অফিসার ব্যারিস্টার সাহেদ আলম।
অপরদিকে ভোল্টি সুবিধার প্রসার এবং কিস্তি সুবিধা দিলে পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে বলে মত দেন ফেয়ার গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন।
দেশে ওয়্যার কানেক্টিভিটিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গতি পাচ্ছে মন্তব্য করে বিটিআরসির এসএম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল আলম বলেন, মহামারিতে দেখা গেছে মোবাইল বিক্রি কমেছে। কিন্তু এই সময়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। এর অর্থ, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে মোবাইলের চেয়ে ল্যাপটপ-ডেস্কটপ ডিভাইস অধিক যৌক্তিক।
দেশের মোবাইল অপারেটরদের মুনফা কম তা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ। তিনি বলেন, ফোরজি নেটওয়ার্কের মান ধরে রাখতে পারছে না দেশের মোবাইল অপারেটররা। মোবাইল ড্রাইভ টেস্টের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। একই সঙ্গে মোবাইল হ্যান্ডসেট ভেদেও নেটওয়ার্কের মানে ভিন্নতা মিলেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি কমিশনার একেএম শহিদুজ্জামান বলেন, টাওয়ার অপারেটর লাইসেন্স দিয়ে মোবাইল অপারেটরদের বিনিয়োগ চাপ কামানো হয়েছে। একইভাবে দ্রুততার বিটিএস স্পেক্ট্রামের প্রযুক্তি উন্নয়ন করার সুযোগ পেয়েছে। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামেও ফোরজির পূর্ণ সুবিধা পাবেন।
একইসঙ্গে ট্যাক্স কমালেও হ্যান্ডসেটের দাম কমানো হয়নি মন্তব্য করে এ বিষয়ে মোবাইল উৎপাদকদের নৈতিক উন্নয়নে পরামর্শ দিয়েছেন বিটিআরসি কমিশনার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সভার সকলের বক্তব্য নোট করেছেন উল্লেখ করে বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রয় মৈত্র বলেন, বিটিআরসি সকলের পরামর্শ নিয়েই ডিজিটাল কানিক্টিভিটির প্রসার ও মান উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করছে।
এইচএস/জেডএইচ/এমকেএইচ