আসন্ন পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঠেকাতে ঢাকা ছেড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রের অধিকাংশ নেতাই এখন নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে বিশেষ তোড়জোর শুরু করেছেন।সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ জানান, আমাদের হিসাব অনুযায়ী ৭১টি পৌরসভায় বিকল্প প্রার্থী রয়েছে। এটি নির্বাচনের কৌশলও বটে। এসব প্রার্থীরা ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবে বলে দল মনে করে। আশা করছি, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আমাদের আর কোনো বিকল্প বা বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সেভাবেই কাজ করছেন।দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সারাদেশে ২৩৫টি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রায় শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। তৃণমূল তথা জেলা, উপজেলা থেকে নেতৃবৃন্দের পাঠানো তালিকায় এসব প্রার্থীর নাম ছিল না। আবার যাদের নাম ছিল কিন্তু কেন্দ্র অনুমোদন দেয়নি, তাদের মধ্য থেকেও কেউ কেউ মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই দলের ত্যাগী এবং জনপ্রিয় নেতা। স্থানীয় এমপি বা জেলার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকার কারণেই তাদের চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে সূত্রটি উল্লেখ করে। আসন্ন নির্বাচনে এসব প্রার্থীদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে দলের মধ্যে। ইতোমধ্যেই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বক্তব্য, বিবৃতি দিয়েছেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিষ্কার করা হবে বলেও কেউ কেউ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বুঝিয়ে কিভাবে বসিয়ে দেয়া যায় সে ব্যাপারে করণীয় ঠিক করতে শুক্রবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সংসদ সদস্য নন এমন কেন্দ্রীয় নেতাদের তৃণমূলে থাকতে হবে। একইসঙ্গে বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাত সাংগঠনিক সম্পাদককে নির্দেশ দেয়া হয়।একই বিষয়ে শনিবার দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে সাত বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিদ্রোহী দমনে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয় । সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর রোববার থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা স্ব স্ব এলাকায় গেছেন।নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে এলাকায় অবস্থান করছেন তারা। সরকার দলীয় সংগঠনের এমপিরা ঘরোয়া বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। মন্ত্রীরা সরকারি সফরের সুযোগ নিয়ে এলাকায় দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীদের কাজ করতে সংগঠিত করছেন। রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নানা কারণেই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ কারণে বড় দল হিসেবে সমস্যা কিছুটা থাকতেই পারে। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নেতাকর্মীরা কাজ করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কেন্দ্রীয় নেতারাও সে লক্ষে কাজ করছে। উল্লেখ্য, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৩ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। আসছে ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এএসএস/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি
Advertisement