লাইফস্টাইল

বর্ষায় যেসব অ্যালার্জি হতে পারে, প্রতিরোধে করণীয়

বর্ষায় ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে অ্যালার্জি অন্যতম। গরমের পাশাপাশি কখনো ঠান্ডা আবহাওয়া আবার বৃষ্টি সব মিলিয়ে এ সময় শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন কমবেশি সবাই হয়ে থাকেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে অনেকেরই অ্যালার্জি বেড়ে যায়। অনেকের তো বৃষ্টির পানি গায়ে পড়লেও চুলকানি, ত্বক লালচে হয়ে ফুলে যাওয়া বা র্যাশ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য বর্ষা মৌসুম সবচেয়ে খারাপ। এ সময় ত্বকের অ্যালার্জি বা শ্বাস প্রশ্বাসের অ্যালার্জি বেড়ে যায়। বর্ষায় হওয়া অ্যালার্জির বেশিরভাগই পরাগজনিত কারণে ঘটে থাকে। এ সময় বেশ অ্যালর্জির প্রভাবে ত্বক এবং চোখের সংক্রমিত হয়ে থাকে। যেমন- কনজেক্টিভাইটিস, চুলকানি, র্যাশ ইত্যাদি বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ও অত্যাধিক আর্দ্রতার কারণে অ্যালার্জেন সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।

জেনে নিন বর্ষায় কী ধরনের অ্যালার্জি হতে পারে-

১. ত্বকের অ্যালার্জি: বর্ষায় ত্বকের অ্যালার্জি বৃদ্ধি পায়। যেখানে দূষণের মাত্রা খুব বেশি; সেখানে চলাফেরার মাধ্যমে রোগীর শরীরে অ্যালার্জি বেড়ে যেতে পারে। বর্ষা মৌসুমে জামাকাপড় এবং জুতা ভিজে যাওয়া খুব সাধারণ বিষয়, যা পরে অ্যালার্জির হটফিডে পরিণত হয়।

Advertisement

এ ছাড়াও সস্তা সিনথেটিক পদার্থ দিয়ে তৈরি রেইনকোট, জ্যাকেট এবং গ্লাভস ত্বকের সংস্পর্শে আসার কারণেও ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়িয়ে তোলে। ফলে শরীরের বিভিন্ন ভাঁজ যেমন- হাঁটু বা কনুইতে গিয়ে পৌঁছায় বিভিন্ন ছত্রাক। এর ফলে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়।

পোষা প্রাণী, পরাগ বা ধূলিকণার সংস্পর্ষে আসলে হিস্টামিনস নামক রাসায়নিক উপাদানের উৎপাদন বেড়ে যায়। এর ফলে অ্যালার্জির ট্রিগার করে থাকে। এর থেকে বাঁচতে এজন্যই বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিহিস্টামাইন জাতীয় ওষুধ মৌসুমী অ্যালার্জির চিকিত্সায় ব্যবহার করে। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, তরল, অনুনাসিক স্প্রে এবং আইড্রপসসহ বিভিন্নভোবে পাওয়া যায় এটি।

২. হাইপারপিগমেন্টেশন: বর্ষাকালের আরও একটি সাধারণ এলার্জি হলো হাইপারপিগমেন্টেশন। যা ত্বকে, বিশেষ করে মুখে গাঢ় প্যাঁচ সৃষ্টি করে। সাধারণত ত্বকের মেলানোসাইট (মেলানিন উত্পাদনকারী কোষ) যখন সূর্যের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসে; তখন হাইপারপিগমেন্টেশনের সৃষ্টি হয়। বর্ষায় যেহেতু সবসময় সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না, তাই যখন হঠাৎ সূর্যের সংস্পর্শে যাওয়া হয় তখন এই অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়।

৩. ব্রণ এবং একজিমা: বর্ষায় ব্রণ এবং একজিমার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর্দ্রতা এবং পরিবর্তিত আবহাওয়া ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব, ব্রণ এবং একজিমা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক চিকিত্সা, ত্বকের যত্ন নিলে অনেক সময় সেরে যায়। তবে বেশি সমস্যা হলে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

Advertisement

৪. ফেসিয়াল ফলিকুলাইটিস: বর্ষায় দেখা যায়, ত্বকের বিভিন্ন স্থানের লোমের ফলিকগুলো প্রদাহে পরিণত হয়। যা ফলিকুলাইটিস নামে পরিচিত। ফলিকুলাইটিস সাধারণত বাহু, উরু, পশ্চাতদেশ এবং কপালে দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা, ঘাম, ডিহাইড্রেশনের মাধ্যমে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে শরীরে। এর ফলে ত্বকে দেখা দেয় ফেসিয়াল ফলিকুলাইটিস। ঘাম নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত গোসল এবং ত্বক শুষ্ক রাখার মাধ্যমে এ ধরনের অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৫. মোল্ড অ্যালার্জি: বর্ষায় ভেজা দেওয়াল, বদ্ধ ঘরসহ পানি বা খাবারের মাধ্যমে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী ছত্রাক সংক্রমণ ঘটতে পারে। মোল্ড অ্যালার্জির ফলে ত্বকে সংক্রমণ এমনকি শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানিও হতে পারে।

৬. ছত্রাকের সংক্রমণ: বর্ষা মৌসুমে হাত বা পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দেয়। যাকে বলা হয় অ্যাথলেট ফুট। ঘাম বা পানিতে ভেজার কারণে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঘা হয়ে থাকে। চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হয়ে থাকে এর ফলে। শুধু পায়েই এ সংক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকে না বরং পুরো শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বর্ষায় অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে করণীয়-

>> ধুলাবালি এবং ধূলিকণার সংস্পর্শ এড়াতে কার্পেট, পর্দা ইত্যাদি সবসময় পরিষ্কার এবং ধুলাবালি মুক্ত রাখুন।

>> গরম পানিতে পোশাকসহ ব্যবকহৃত কাপড় ধুয়ে নিন এবং সূর্যের আলোয় ভালো করে শুকিয়ে নিন। কড়া রোদে কার্পেট, পর্দা এবং শীট ইত্যাদি শুকিয়ে নিতে ভুলবেন না!

>> ঘরে হালকা বায়ু প্রবেশ করতে দিন। এজন্য জানালা খোলা রাখুন। ঘরের দেওয়াল এবং মেঝে যতটা সম্ভব শুকনো রাখার চেষ্টা করুন।

>> এয়ার পিউরিফায়ার এবং এয়ার কন্ডিশনারের ফিল্টারগুলোতে জমে থাকা ধুলাবালি রোধে নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।

>> ঘরের পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে আপনার বেডরুমে কখনো পোষা প্রাণীকে রাখবেন না।

>> যেসব খাবার বা জিনিসের সংস্পর্শে আপনার অ্যালার্জি হতে পারে, তা এড়িয়ে চলুন।

>> কেমিকেলযুক্ত স্প্রে ব্যবহার না করে বরং নিম পাতা, লবঙ্গ ইত্যাদির মাধ্যমে ঘর থেকে পোকামাকড় দূর করুন।

>> নিয়মিত লাউ, নিম বীজ, সবুজ শাক এবং ভেষজ চা খেতে হবে। তাহলে শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর হবে। সেইসঙ্গে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।

মৌসুমী অ্যালার্জি প্রতিরোধে যেসব ভেষজ উপাদান নিয়মিত খাবেন-

>> অ্যান্টি-অ্যালার্জির বৈশিষ্ট্য আছে রসুনে। কাঁচা রসুন খেলে বিভিন্ন সংক্রমণসহ কাশি এবং সর্দি-কাশির সমস্যা দ্রুত সারে।

>> বর্ষা মৌসুমে আদা চা পান করতে পারেন। এটি কাশি থেকে মুক্তি দেয় এবং ঠান্ডা থেকেও দ্রুত স্বস্তি মেলে।

>> হলুদে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এতে অ্যান্টি-ব্যাকরেটরিয়াল বৈশিষ্ট্যও আছে, যা অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ হিসেবে এটি অত্যন্ত কার্যকরী।

>> আপেলে থাকে কোয়েসার্টিন নামক ফ্ল্যাভোনয়েড। যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে। প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে এবং বর্ষা মৌসুমে এটি বিশেষ প্রয়োজনীয়।

>> জাম এটি স্বল্প-ক্যালোরিযুক্ত ফল। এতে আছে ফোলেট, আয়রন, পটাসিয়াম এবং খনিজ জাতীয় পুষ্টি। যা বর্ষার সময় খাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ফল হিসেবে বিবেচিত।

সূত্র: বোল্ডস্কাই

জেএমএস/এমএস