তুরস্কে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে আরোপ করা কারফিউ পুরোপুরি উঠে যাচ্ছে। শুধু কালচারাল মিউজিক ব্যবস্থাপনাসমূহ রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
Advertisement
সম্প্রতি রাজধানী আঙ্কারায় রাষ্ট্রপতি কমপ্লেক্সে মন্ত্রিপরিষদের সাড়ে ৩ ঘণ্টা বৈঠক শেষে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রেসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
এ সময় এরদোয়ান বলেন, একই দিনে তুরস্ক আন্তঃনগর ভ্রমণের সীমাবদ্ধতা এবং নগর পাবলিক ট্রান্সপোর্টের উপর নিষেধাজ্ঞাও সরিয়ে নেয়া হবে। এইচইএস কোডের ব্যবহার অব্যাহত থাকবে এবং তা প্রসারিত হবে। ১ জুলাই থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলোতে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতায় ফিরে আসবে।
২১ জুন দেশটিতে ২ লাখ ২১ হাজার ৫২ জনকে করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ২৯৪ জন। ওই দিন মারা গেছেন ৫১ জন। এছাড়া সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৫ হাজার ৯৩ জন।
Advertisement
উল্লেখ্য, তুরস্কে ২০২০ সালে ১১ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ১৫ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়। করোনার কারণে ১১-১২ এপ্রিল ২০২০ থেকে শুরু হওয়া লকডাউন আগামী ১ জুলাই ২০২১ এ শেষ হতে যাচ্ছে। যার অনেকগুলো ধাপ ছিল, যেমন প্রথম প্রথম শুধু সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার ও রোববার ছিল লকডাউন। পরবর্তীতে অবস্থা অনুযায়ী কখনো পুরোপুরি কখনোবা রাতের বেলায় লকডাউন অব্যাহত ছিল।
১১ মার্চ ২০২০ থেকে ২১ জুন ২০২১ তুরস্কে করোনভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৫৩, ৭৫, ৫৯৩ এবং বিদ্যমান রোগীদের ৮০৮ জন নিবিড় পরিচর্যা করা হচ্ছে; এখন পর্যন্ত সুস্থ সংখ্যা ৫২,৩৭, ৭৩১ এবং মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা মোট ৪৯,২৩৬ জন। এখন পর্যন্ত ৫,৮৭,৭৩,৮৩৫টি পরীক্ষা করা হয়েছে।
যে প্রক্রিয়ায় টিকা দিচ্ছে তুরস্ক
নাগরিকদের টিকা দেয়ার জন্য উৎসাহ দিতে তুরস্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. ফাহেরেটিন কোজা এবং বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্যদের সরাসরি টিকা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৩ জানুয়ারি ২০২১। প্রথম ৬৫ বয়সের ঊর্ধ্বে, তারপর ৫০-৬৪, এখন ১৮-৪৯ বয়সের সবাইকে দেয়া হচ্ছে।
Advertisement
তুরস্কে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ডোজ করে দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে জনসংখ্যার তুলনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি টিকা দিয়েছে দেশটি।
২১ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভ্যাকসিন ইনফরমেশন প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুসারে, তুরস্কে মোট দেয়া ভ্যাকসিনের সংখ্যা ৪, ২৬, ৭৭, ২১৪ প্রথম ডোজ নেয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা ছিল ২, ৮১, ৮৩, ৫১ এবং দ্বিতীয় ডোজ নেয়াদের সংখ্যা ছিল ১, ৪৪, ৯৪, ১৬৩।
টিকা দেয়ার সিরিয়াল আসলে সময়মতো প্রত্যেকেই গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং জনগণকে টিকার বিষয়ে প্রোপাগান্ডার দিকে মনোযোগ না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, টিকা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিজ্ঞানী ও ডাক্তারের কথা শুনে নেয়া উচিত।
তুর্কি-মার্কিন সম্পর্ক
সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে তুরস্ক ও আমেরিকার সম্পর্কের বিষয়ে এরদোগান বলেন, ব্রাসেলসে ন্যাটো সম্মেলনে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পর দুটি দেশই ইতিবাচক এবং গঠনমূলক ভিত্তিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। তুরস্ক বাইডেনের সঙ্গে অর্জিত সুন্দর জলবায়ুকে উভয় দেশের সর্বোচ্চ উপকারে রূপান্তর করতে বদ্ধপরিকর।
তুরস্কের একমাত্র দাবি হলো সকল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার সার্বভৌম অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সমর্থন, বলেছেন এরদোগান।
বৈঠকের পরে বাইডেন বলেছিলেন, তুরস্কের সঙ্গে তার ফলপ্রসূ সাক্ষাৎ হয়েছে। ন্যাটো সদর দফতরে দুই প্রেসিডেন্টের বৈঠক ৪৫ মিনিট পর্যন্ত চলে। জানুয়ারিতে বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবারের মতো দু্ই নেতার বৈঠক হয়েছিল।
কারাবখের শুশা শহরে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান
নাগর্নো-কারাবখের জয়ের পর এই প্রথম প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সেইখানকার শুশা শহর সফর করেন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠারে অংশগ্রহণ করেন। আজারবাইজানের পার্লামেন্টে বক্তব্য দেন।
সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে, গত সপ্তাহে আজারবাইজান সফর পর্যালোচনা করে এরদোগান বলেন, আজারবাইজান এবং অঞ্চল উভয়ের পক্ষে নাগরোণো-কারাবাখের মধ্যে সেই দেশের বিজয়ের অর্থ আগামী বছরগুলোতে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
আজারবাইজানের বিজয়ের ফলে যারা তাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য বিশ্বকে হাতিয়ার করে তাদের খেলাগুলো ব্যর্থ করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, তার প্রতিবেশী আর্মেনিয়া হবেন তাদের মধ্যে অন্যতম যারা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন যদি তারা তাদের সুযোগটি গ্রহণ করেন এবং তারা এই সুযোগটি কাজে লাগায়।
তিনি বলেন, আমরা সেখানে দুদিন কাটিয়েছি আমাদের আজারবাইজানীয় ভাই-বোনদের আন্তরিক স্নেহও আমাদের আনন্দিত করেছে। আশা করি, আমরা সবাই মিলেমিশে এই প্রক্রিয়াটি ককেশাসে নতুন যুগের সূচনা করব।
৪৪ দিনের সংঘাত, যা নভেম্বরের দশ তারিখে মস্কোর মাধ্যমে যুদ্ধবিরতিতে শেষ হয়েছিল। আজারবাইজান আর্মেনিয়ার প্রায় তিন দশকের দখল থেকে নাগরোণো-কারাবাখের (উচ্চ কারাবাখ) বেশ কয়েকটি শহর এবং প্রায় ৩০০টি জনবসতি এবং গ্রামগুলোকে মুক্তি দিয়েছে।
এই যুদ্ধবিরতি আজারবাইজানের একটি জয় এবং আর্মেনিয়ার পরাজয় হিসাবে দেখা হচ্ছে। যার সশস্ত্র বাহিনী চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরে এসেছিল।
এমআরএম/জেআইএম