রাজশাহীর দুর্গাপুরের অটোমেকানিক সোহরাব আলী (৩৫)। দুর্গাপুরের আলীপুর বাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। হঠাৎ করোনাক্রান্ত হওয়ায় স্ত্রীসহ ভাড়া বাড়ি ছেড়ে বাবার বাসায় যান সোহরাব। তবে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় নিজ বাড়িতেও ঠাঁই হয়নি তার। বাড়িতে ঠাঁই না হওয়ায় সস্ত্রীক বাড়ির পাশের একটি আমবাগানে খোলা জায়গায় টিনের ছাউনিতে বসবাস শুরু করেন।
Advertisement
এভাবে দুদিন অতিবাহিত করেন তারা। পরে এক প্রকার বাধ্য হয়েই কল করেন ৯৯৯ নম্বরে। ফোন পেয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুরে ঘটনাস্থলে হাজির হয় দুর্গাপুর থানা পুলিশ। ঘটনা শোনার পর স্ত্রীসহ সোহরাবকে আমবাগান থেকে উদ্ধার করে বাবার বাড়িতেই একটি কক্ষে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করেন দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসমত আলী।
দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামে এমনই ঘটনা ঘটেছে। তিনি ওই গ্রামের সোনারপাড়া এলাকার খয়বর আলীর ছেলে। দুই স্ত্রীর মধ্যে ছোট স্ত্রীকে নিয়ে আলীপুর বাজারের পাশেই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বড় স্ত্রীর সন্তানসহ থাকেন সোহরাবের বাবার বাড়িতেই।
পুলিশ জানায়, হঠাৎ সর্দি-জ্বর হওয়ায় গত মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে নমুনা পরীক্ষার পর সোহরাবের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তবে তার ছোট স্ত্রীর শরীরে করোনা সংক্রমিত হয়নি। তারপরও তিনি করোনা আক্রান্ত স্বামীর সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকার জন্য যান। কিন্তু বাবা খয়বর আলী, সোহরাবের মা ও তার বড় স্ত্রী তাদের বাড়িতে থাকতে দেননি। বাধ্য হয়ে ছোট স্ত্রীকে নিয়ে বাবার বাড়ির পাশের একটি আমবাগানে টিনের ছাউনি ঘরের নিচে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করেন সোহরাব আলী।
Advertisement
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য (মেম্বার) মো. মানিক আলী জাগো নিউজকে জানান, সোহরাবকে বাবা-মা বাড়িতে উঠতে না দিলে স্ত্রীসহ তিনি খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করতে থাকেন। এভাবে দুদিন কেটে যায়। তাদের এ অসহায় অবস্থাকে দেখে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। পরে ফোন পেয়ে পুলিশ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার ওসি হাসমত আলী জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের আমলে দেয়ায় তারা করোনাক্রান্ত সোহরাবের পরিবারকে কিছু খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দেন। সেটিও তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে যেন কোনো প্রকার অবিচার না ঘটে সেজন্য মাঝে মধ্যে তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
তবে সোহরাব আলীর পরিবারের কেউ এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
দুর্গাপুর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ঘটনা আর কোথাও ঘটলে আমরা সে বিষয়টিতেও সজাগ থাকব। সোহরাবের মতো আর কেউ যেন এমন অমানবিক আচরণের শিকার না হন।’
Advertisement
ফয়সাল আহমেদ/এসআর/জিকেএস