জাতীয়

লকডাউন-সংক্রমণ ঝুঁকি-ভোগান্তি সত্ত্বেও ছুটছে মানুষ

রাজধানী ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড মোড়ে একটি ছোট্ট শিশুকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নোয়াখালীর চাটখিলের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব রহিমা খাতুন। সম্প্রতি সৌদি প্রবাসী ছেলেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদায় দিতে আসেন। যখন ঢাকায় আসেন তখন নোয়াখালী রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সাত জেলায় লকডাউন ও ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে বাইরের জেলা থেকে জরুরি পরিবহন ছাড়া সব যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা তিনি জানতেন না।

Advertisement

আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায় সাভারের হেমায়েতপুর থেকে রওনা হয়ে তিন দফা গাড়ি বদলে সাইনবোর্ডে এসে আটকা পড়েন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রহিমা খাতুন বলেন, বাড়িতে অসুস্থ মেয়েকে রেখে এসেছি। তাই কষ্ট হলেও বাড়ি ফিরতে হবে। এজন্য গাড়ি বদলে সামনে এগোছি।’

তিনি জানান, মাইক্রোবাসে প্রতি সিট ১ হাজার টাকা এবং ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে এক হাজার ৬০০ টাকা ভাড়া চায়। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না বলে হেঁটেই সামনে এগোতে থাকেন।

Advertisement

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাত জেলায় (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, গাজীপুর, রাজবাড়ি ও গোপালগঞ্জ) সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা ও ঢাকার বাইরে থেকে এসব জেলায় যানবাহন এবং মানুষের প্রবেশ ও প্রস্থানে কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে। ফলে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে টহল বসিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ থেকে বিআরটিসিসহ বিভিন্ন ছোট ছোট বাস নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত চলাচল করছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা এসব গাড়িতে যাচ্ছেন।

একাধিক যাত্রীর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, লকডাউন ও সংক্রমণের ঝুঁকি জেনেও তারা একটু একটু করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। সাইনবোর্ড এলাকা থেকে যানবাহন আবার ঢাকায় ফিরিয়ে দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা গেছে, শত শত মানুষ, যে যেভাবে পারছেন গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। যাত্রীরা কেউ কুমিল্লা, কেউ নোয়াখালী-চট্টগ্রাম বা আশপাশের কোনো জেলায় যাচ্ছেন। লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার যান চলাচল করবে না জেনেই তারা রওনা হয়েছেন।

যাত্রীরা বাসে যেতে না পারলেও মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে, কয়েকবার বাহন বদলে নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন। লকডাউনের কারণে যান চলাচল না করায় নারী, শিশু ও বয়স্কদের ভোগান্তি হচ্ছে বেশি। 

কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুসারে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ ও বের হতে দেয়া হচ্ছে না।

মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে মানুষ পরিবহনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, তারা সেসব বাহন চিহ্নিত করেও মামলা দিচ্ছেন। সকাল থেকে ছয়টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করেছেন বলে জানান।

এমইউ/এমএইচআর/জিকেএস