ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান
Advertisement
কলেজ শিক্ষার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচির আধুনিকীকরণ, উন্নতিসাধন, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা বৃদ্ধিসহ কলেজের সকল বিষয় ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ক্রমাগত সেশনজটের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে উচ্চশিক্ষার দিগন্ত উন্মোচনের জন্য ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ছাত্রসংখ্যা বিবেচনায় এখন দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি কুড়িয়েছে। কিন্তু গতানুগতিক ধারায় পাঠদান না করায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়েছে।
এখানকার অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি সুবিধাদি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক ব্যাপক ও উন্নত। সারাদেশে বিস্তৃত প্রায় দুই সহস্রাধিক কলেজের প্রতিনিধিত্বকারী এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন জাতীয় শিক্ষা উন্নয়নের প্রতীকরূপে বিবেচ্য। বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষালাভের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এটি। যে দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষালাভের সুযোগ সীমিত সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযাত্রা সাধারণ শিক্ষানুরাগীদের অনুপ্রাণিত করেছে দারুণভাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা মোকাবেলা করে শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পারে নি আজও।
নানা ধরনের দুর্বলতা ও অসুবিধার কারণে শিক্ষার জ্ঞানবিকাশের যে দ্যুতি ছড়ানোর কথা ছিল তা এখনো দৃষ্টিগোচর হয় নি। বিশেষত শিক্ষক প্রশিক্ষণের মত মহান পেশায় নিয়োজিত বিএড পাঠদানকারী প্রফেশনাল কলেজগুলো প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ভীত সুপ্রতিষ্ঠিত হয় নি। বাংলাদেশে ১৪টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও ৭৫টি (২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ওয়েব সাইটে প্রচারিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে) বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অভিন্ন পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচির আলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সঙ্গত কারণে এ প্রবন্ধে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের বিএড প্রশিক্ষণের নানাবিধ সমস্যা ও সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হলো।
Advertisement
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেশনাল কোর্সসমূহের মধ্যে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) কোর্সটি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কোর্স। কেননা এ কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষা ও পাঠদানের মত মহান পেশার সাথে সরাসরি নিযুক্ত হন। তাই প্রশিক্ষণকালীন সময়ে কোনো প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে যদি কোনরূপ ঘাটতি বা দুর্বলতা থাকে তা প্রকারান্তরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে প্রভাব ফেলে। এ কারণে এ কোর্সটি পরিচালনাকারী কলেজগুলোও সতর্কতার সাথে কোর্স পরিচালনা করে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও এ কোর্সটির ভর্তি, রেজি:, পরীক্ষা ও ফলাফল যথাসময়ে প্রকাশ করে থাকে। বলা যায় কোনরূপ সেশনজটের অভিশাপ ছাড়াই এ কোর্সটি বিগত বছরগুলোতে (করোনাকালীন ব্যতীত) অনেক ভালোভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
এর সুফল এই কোর্সের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই ইতোমধ্যে ভোগ করেছেন। মাধ্যমিক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের ক্ষেত্রে এর ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানসম্পন্ন পাঠদান ও প্রশিক্ষিত দক্ষ শিক্ষক তৈরি করার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলো ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয় এ সফলতার জন্য কৃতিত্ব দাবি করতেই পারে। কিন্তু সরকার ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিএড প্রশিক্ষণের জন্য কলেজগুলোকে অনুমতি দিয়েছিল তা কতোটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে এবং যেসব শর্তাবলির উল্লেখ করে অধিভুক্তি দেয়া হয়েছিল বিগত বছরগুলোতে তার কতোটুকু অনুসরণ করা হয়েছে তা এখনো প্রশ্নাতীত নয়।
আমার জানামতে কিছু কলেজ ছাড়া অধিকাংশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত পূরণ করেছে। শর্ত পূরণে ব্যর্থ কলেজগুলো সরকারের নীতিমালার কারণে ইতোমধ্যে ঝরে পড়েছে। যারা টিকে আছে তাদেরকে আরো গতিশীল করা এবং অবশিষ্ট শর্তাবলি পূরণে সরকার ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌহার্দ্যপূর্ণ আন্তরিকতা প্রয়োজন। তবে হ্যাঁ, যেসব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তাবলি পালনে আগ্রহী নয় তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা নিতে পারে কিন্তু যেসব কলেজ শর্তাবলি পূরণে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তাদেরকে আরো কিছুটা সময় দিয়ে কলেজগুলোর উন্নয়নে সুযোগ দেয়া জরুরি। মাথা ব্যথা হলে মাথা না কেটে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
১০/১২টি শর্তসাপেক্ষে কলেজগুলোকে বিএড কোর্স পরিচালনার জন্য অধিভুক্তি প্রদান করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এসব শর্তাবলির সাথে প্রতি বছর যোগ হয় নবায়ন সংক্রান্ত নতুন নতুন শর্ত। যা পালন করে কলেজ পরিচালনা করা অনেকাংশে অসম্ভব যদি না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা করে। নবায়ন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য প্রতি বছর নবায়ন না করে ২/৩ বছরের জন্য একবারে নবায়ন দেয়া যায় কীনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গভীরভাবে ভেবে দেখতে পারে। বিষয়টিতে সুনজর দিলে কলেজগুলোর গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিএড কোর্সের মানবৃদ্ধিতেও কলেজগুলো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে।
Advertisement
বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলেও সবার আগে শিক্ষার প্রতি নজর দিতে হবে। কেননা গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ছাড়া ভালো শিক্ষক তৈরি হবে না; আর প্রশিক্ষণ ছাড়া দক্ষ শিক্ষক পাওয়া যাবে না। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত শিক্ষক প্রশিক্ষণকে মানসম্পন্ন করতে হলে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ন্যায় বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোর দিকেও সমান দৃষ্টি দিতে হবে। বেসরকারি কলেজগুলোতে বিরাজমান সমস্যাগুলো উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সেক্ষেত্রে আমার প্রস্তাবনা হচ্ছে- সরকারি বেসরকারি কোন বিভাজনের রেখা না টেনে গুণগত প্রশিক্ষণের জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন সে ব্যাপারে মাউশি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পদক্ষেপ নেবে। একথা প্রমাণিত যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন তথা বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোই ভালো করছে। যেখানে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সুনামের সাথে চলছে সেখানে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন ভালো চলবে না সে দিকে সরকারের সাথে সাথে উদ্যোক্তাদেরও নজর দিতে হবে।
চিন্তা ও মননে শিক্ষানুরাগী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, সাহসী ও উদ্যোগী ব্যক্তিদের দ্বারা স্ব-অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। কেবল ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা অর্থোপার্জনের মনোবৃত্তি সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ যেন এ সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত না থাকে সে দিকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যেসব কলেজের ভৌত অবকাঠামো সন্তোষজনক এবং যোগ্য শিক্ষক-প্রশিক্ষক আছে সেসব কলেজে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কেননা আমরা জানি, মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষকের প্রয়োজন। আর ভালো শিক্ষক পেতে হলে ভালো বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান জরুরি। আর এসব ব্যয়ভার মেটাতে হলে সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থীর আয়ের উৎসের উপর নির্ভর করা কষ্টসাধ্য। তাই যেসব কলেজে উপরিউক্ত সুবিধা বিদ্যমান তাদের আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সাথে সাথে একটিমাত্র কোর্স দিয়ে কলেজের ভবিষ্যত অক্ষুণ্ণ রাখা যে অসম্ভব তাও বিবেচনায় আনতে হবে। তাই যেসব কলেজের ভিন্ন কোর্স খোলার এবং যে কলেজগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা বিদ্যমান আছে সেসব কলেজে অন্যান্য প্রফেশনাল কোর্স খোলার অনুমতি প্রক্রিয়া সহজতর করতে হবে।
কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রশিক্ষণ অনুযায়ী পাঠদান করেন কীনা তাও মনিটর করতে হবে। বিশেষত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ প্রশিক্ষণ অনুযায়ী পাঠদান করেন কীনা তা মনিটর করার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের কাজে লাগানো যেতে পারে। ইতোমধ্যে টিকিউআই-২-এর যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ৪৪জন প্রশিক্ষককে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উন্নত দেশের চারটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি সম্পন্ন করার জন্য পাঠিয়েছে। এখনো অনেকে এ প্রশিক্ষণে যোগ দেয়ার অপেক্ষায় আছেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, শিক্ষকদের মধ্যে যাদেরকে বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হচ্ছে এই তালিকায় বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের একজন শিক্ষকেরও নাম নেই।
যদি যোগ্যতার দোহাই দেয়া হয়, তবে এসব অযোগ্য শিক্ষকগণ এমন কী পড়ান যা দ্বারা বিএড প্রশিক্ষণার্থীগণ সরকারি কলেজের চেয়েও কখনো ভালো ফলাফল করে। তাই বিমাতাসুলভ এই আচরণ থেকে শিক্ষক সমাজকে সর্বাগ্রে দূরে থাকতে হবে। যারা এই সিলেকশনের সাথে জড়িত তারা কি ভেবে দেখেছেন, বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষকদের যদি এই সুযোগের আওতায় আনা যেত তাহলে বিএড প্রশিক্ষণ মানসম্পন্ন হতো, এসডিজি-৪ এর লক্ষ্য অর্জন আরো বেশি সহজ হতো। সরকার যেখানে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সেখানে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে এমন বিভাজন আমাদের কাম্য নয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সাথে সাথে আনুপাতিক হারে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষকদের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে। এতে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষকদের কোনো ক্ষেত্রে কোনোরূপ দক্ষতার অভাব থাকলেও তা পূরণের সুযোগ পাবে। তাছাড়া গুণগত প্রশিক্ষণের জন্য পারস্পরিক যোগাযোগ ও অভিজ্ঞতার বিনিময় একান্ত জরুরি। এর দ্বারা প্রশিক্ষকগণ নিজেদের দক্ষতাকে আরো শাণিত করতে পারেন। কাজের সুযোগ সৃষ্টি না হলে অতি যোগ্যতর শিক্ষকও অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বাইরে থেকে যাবে-যা কারো কাম্য হতে পারে না। ২০১৬ সালের পরিমার্জিত বিএড কারিকুলামের উপর দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত ডেসিমিনেশন ওয়ার্কশপগুলোতে সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোর শিক্ষকদের যৌথ অংশগ্রহণের জন্য টিকিউআই-২-এর উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এরূপ সমন্বিত উদ্যোগ নিলে বিএড প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষকদের মধ্যে দক্ষতা আরো বৃদ্ধি পাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সরকারি টিটি কলেজের শিক্ষকগণ বেসরকারি টিটি কলেজগুলোর মূল্যায়ন নিয়ে যে অভিযোগ তোলেন-সে ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- বেসরকারি কলেজগুলোর পরীক্ষার প্রশ্ন, (সরকারি-বেসরকারি টিটি কলেজের একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়) পরীক্ষা গ্রহণ ও খাতা মূল্যায়ন সংশ্লিষ্ট কলেজ নয় বরং অনেকাংশে সরকারি কলেজের শিক্ষকগণই করেন এবং চূড়ান্ত ফলাফল তারাই তৈরি করেন। বেসরকারি কলেজগুলো শুধুই পাঠদান ও টিচিং প্রাকটিস করানো পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায়ও সরকারি কলেজের শিক্ষক বহিঃপরীক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। সেখানে সংশ্লিষ্ট কলেজের কোনো পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ নেই। তবে যে বিষয়টি নিয়ে অনেকে আপত্তি করেন সেটি হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কলেজে যে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হয় সেখানে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলো বেশি নম্বর প্রদান করে।
বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে এটি একটি অপবাদ মাত্র। কেননা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সাথে যদি কলেজ প্রদত্ত নম্বরের ২০% এর বেশি ভেরি করে তবে কলেজ থেকে প্রদত্ত নম্বরকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রদত্ত নম্বরের শতকরা হারে রূপান্তর করে মোট প্রাপ্তনম্বর নির্ধারণ করা হয়। কম্পিউটার সফটওয়ারের ব-দৌলতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজটি স্বচ্ছতার সাথেই করে আসছে। এখানে প্রশিক্ষণার্থীর কলেজ থেকে বেশি নম্বর পেয়ে ফলাফলে প্রভাব ফেলার কোন সুযোগ নেই। উপরন্ত কলেজ থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের চেয়ে বেশি নম্বর প্রদান করলে নম্বর আবার বেশি কাটাও যায়। অতএব, পরীক্ষা পদ্ধতিতে বা ফলাফলে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রভাব ফেলার কোনো সুযোগ নেই। তবে আমার মতে, টিচিং প্রাকটিস-এর ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। নয়তো এই বিতর্কের অবসান হবে না, বেসরকারি কলেজগুলোর প্রশিক্ষণের গুণগতমানও কাক্সিক্ষতমানে উন্নীত হবে না।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ, ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজ, ঢাকা। সভাপতি, বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতি।
এইচআর/এমকেএইচ