শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ১২ রানের। ১৯ নম্বর ওভারে ২ রান দিলেন গাজী গ্রুপের অফস্পিনার শেখ মেহেদি। আর পেসার মহিউদ্দীন তারিকের করা ম্যাচের শেষ ওভারে প্রাইম ব্যাংকের জয়ের জন্য প্রয়োজন হলো ১০ রানের। হাতে ২ উইকেটে। ব্যাটসম্যান অলক কাপালি আর রুবেল হোসেন ।
Advertisement
প্রথম বলে মিড অফে সিঙ্গেলস নিয়ে অলককে স্ট্রাইক দিলেন রুবেল। অলক স্ট্রাইক পেয়েই সপাটে হাঁকালেন, বল স্কোয়ার লেগের ফিল্ডারের হাতে লেগে গিয়ে পড়লো সীমানার ওপারে, ছক্কা। পরে বলে সিঙ্গেলস আসলো অলকের ব্যাট থেকে।
তিন বলে প্রয়োজন ২ রানের। রুবেল আবার সিঙ্গেলস নিলে ২ বলে ১ রান দরকার থাকা অবস্থায় অলক মহিউদ্দীন তারেকের অফস্ট্যাম্পের ঠিক বাইরে পিচ পরা গুডলেন্থ ডেলিভারিকে শর্ট থার্ডম্যানের ফিল্ডারের নাগালের বাইরে দিয়ে ঠেলে দিলেন। বল মাটি কামড়ে চলে গেল সীমানার ওপারে।
এরই সঙ্গে গাজী গ্রুপের ১২৫ রান টপকে ২ উইকেটের দারুণ এক জয় পেল প্রাইম ব্যাংক। ১৪ ম্যাচে এটা এনামুল হক বিজয় বাহিনীর ১১ নম্বর জয়। ২২ পয়েন্ট নিয়ে সারোয়ার ইমরানের শিষ্যরা এখনো পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষেই থাকলো।
Advertisement
শেষ হাসি হাসলেও এক সময় মনে হচ্ছিল নির্ঘাত হারতে যাচ্ছে প্রাইম ব্যাংক। লক্ষ্য ছিল ছোট; ১২৬ রানের মাত্র; কিন্তু ওই সামান্য কটা রান করতেই নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল প্রাইম ব্যাংক ব্যাটসম্যানদের।
শূন্য রানে উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গে বিপাকে পড়ে যায় তারা। ইনিংসের অর্ধেক না পার হতেই (৯.২ ওভারে) ৫১ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে বসে। দুই ওপেনার রনি তালুকদার (১১), রুবেল মিয়া (০), অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় (৯), মোহাম্মদ মিঠুন (১) ফেরার পর ষষ্ঠ উইকেটে রকিবুল আর নাহিদুল ৩৬ রানের জুটি গড়েন।
রকিবুল যখন ২০ রানে সাজঘরে ফেরেন তখনো প্রাইম ব্যাংকের স্কোর ৮৭। এ অবস্থায় নাহিদুল আর অলক কাপালি হাল ধরেন। নাহিদুল প্রতিপক্ষ অধিনায়ক রিয়াদের এক ওভারে (ইনিংসের ১৭ তম ওভারে) পরপর দুই ছক্কা হাঁকানোর পর তৃতীয় বলে আবার লং অফের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে একদম সীমানার ঠিক এক গজ সামনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ২৫ বলে ৩৯ রানের ওই ইনিংস শেষে নাহিদুল যখন সাজঘরের পথে, প্রাইম ব্যাংক তখনো জয় থেকে ২৬ রান দুরে দাঁড়িয়ে।
বাকি কাজটুকু সারেন অলক কাপালি। উইকেটে এসে শূন্য রানে বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের বলে কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদন থেকে বেঁচে যাওয়া অভিজ্ঞ অলক, নিজের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চাপের মুখেও মাথা ঠান্ডা রেখে বুদ্ধি খাটিয়ে খেলে দল জিতিয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন।
Advertisement
এর আগে প্রায় একই অবস্থায় পড়েছিল গাজী গ্রুপও। ৬৫ রানে ৬ উইকেট হারানো রিয়াদের দল ১০০ পার হয় আরিফুল হক এবং আকবর আলীর হাত ধরে। প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই আউট হওয়ার পর।
চরম বিপর্যয়ের মুখে আরিফুল হক আর আকবর আলী কিছুটা হলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। সপ্তম উইকেটে তারা দু’জন ৩৮ রান যোগ করেন। আরিফুল হক ২৮ বলে ৩১ আর আকবর আলী ২২ বলে ২৪ রানের আরও একটি ইনিংস খেলেন। তাদের ওই দুটি ইনিংসের ওপর ভর করেই শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ১২৫ (৯ উইকেটে) পর্যন্ত যায় গাজী গ্রুপের স্কোর।
টপ স্কোরার মেহেদি মারুফ (৩১ বলে ৩৩)। এছাড়া সৌম্য সরকার শূন্য (১ বল), মুমিনুল ১০ (১১), ইয়াসির আলী রাব্বি ৯ (৫), অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২ (৫) ও উইকেটকিপার জাকির হাসান ৩ (১২ বলে) চরম ব্যর্থ। রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজ এবং শরিফুলের মত তিন দ্রুত গতির বোলার থাকার পরও প্রাইম ব্যাংকের সবচেয়ে সফল বোলার লেগস্পিনার অলক কাপালি।
ক্যারিয়ারের স্বর্ণ সময় পিছনে ফেলে আসা মধ্য তিরিশের অলক ৪ ওভারে ১৬ রানে ৩ উইকেটের পতন ঘটান। আর দ্রুত গতির বোলার শরিফুল ২ উইকেটের পতন ঘটান ৩৪ ওভারে (৪ ওভারে)।
এছাড়া চার বোলার পেসার রুবেল হোসেন (৪ ওভারে ১/২৯), মোস্তাফিজ (৪ ওভারে ১/২৭) ও স্লো মিডিয়াম রুবেল মিয়া (৪ ওভারে ১/১৮) ও সমীহ জাগানো বোলিং করে গাজী গ্রুপকে ১২০-এর ঘরে আটকে রাখেন।
বল হাতে ১৬ রানে ৩ উইকেট আর ১৫ বলে ২১ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে দল জিতিয়ে অনেক দিন পর আবার ম্যাচ সেরা হন অলক কাপালি।
এআরবি/আইএইচএস/এএসএম