বিশেষ প্রতিবেদন

মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বন্ধ হচ্ছে না খেজুরের কাঁচা রস পান

খেজুরের কাঁচা রস পানে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে তা জানা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিষাক্ত এই রস পান করছেন। গত ১৪ বছরে শীত মৌসুমে গাছ থেকে সরাসরি খেজুরের কাঁচা রস সংগ্রহ করে তা পান করে ২৯৮ জন নারী-পুরুষ ও শিশু বাদুরবাহিত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণঘাতি এ রোগে এ সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে দুইশতাধিকেরই মৃত্যু হয়েছে। ২০১৫ সালে আক্রান্ত ৯ জনের ৬ জন ও ২০১৪ সালে ২৭ জনের ১৪ জন মারা যায়। মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক প্রফেসর ড. মাহমুদুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, দেশের ৩১ জেলায় শীতকালে গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ ও বিক্রি করা হয়।তিনি জানান, চলতি বছর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে (প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা) বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাতকার গ্রহণ করে দেখেছেন সাক্ষাতদানকারীদের মধ্যে শতকরা ২৩ ভাগই মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে জেনেও গত মৌসুমে খেজুরের কাঁচা রস পান করেছেন। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্কে প্রদাহ, জ্বরসহ মাথাব্যথা, খিঁচুনি, প্রলাপ বকা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। দেশে এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশী। জেনে শুনে বিষ পান প্রবাদের মতো এভাবে খেজুরের কাঁচা রস পানে যে কোন সময় বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, মানুষের মধ্যে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও আরও অধিক গণসচেনতা সৃষ্টিতে তারা দুই মিনিটের টিভি স্পট তৈরি করেছেন। খুব শিগগিরই তা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে প্রচার করা হবে বলেও জানান তিনি।চলতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) তাদের ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশে কি বাদুরবাহিত নতুন কোন ভাইরাসের প্রাদুর্ভার ঘটতে পারে’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রামের অর্ধেক মানুষ খেজুরের কাঁচা রস পান করছে। মানুষগুলোর এক তৃতীয়াংশ খেজুরের কাঁচা রস পানে মৃত্যুঝুঁকি জেনেও রস পান করছে। ২০০১ সালে প্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও এত বছর পরও সচেতনতার হার আশানুরূপ নয়। ওই গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে ২০০১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ২০৯ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ২০০৪ সালে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২২ ব্যক্তির মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। শুধু বাদুর থেকে মানুষেই নয়, বাদুর থেকে গবাদিপশুর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা।গবেষকরা নাইট ভিশন ক্যামেরা স্থাপন করে দেখেছেন গাছে রস সংগ্রহের পাত্রে বাদুর ডুব দিয়ে রস খাওয়ার পাশাপাশি লালা ও মূত্র ত্যাগ করে। আইইডিসিআর পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান জানান, গত সপ্তাহে তারা বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় শীতকালে তাদের অঞ্চলে খেজুরের কাঁচা রস পান থেকে মানুষকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন। সচেতনতা সৃষ্টিতে যে টিভি স্পটটি তৈরি করা হয়েছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মাসিক সভায় উপস্থাপন করে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উঠান বৈঠকের আয়োজন করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান। এমইউ/এআরএস/পিআর

Advertisement