কালের সাক্ষী কান্তজীর মন্দিরের অনেক অজানা কাহিনি রয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত আর লিখিত কাহিনি থেকে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কাহিনি শোনার পর নিশ্চয়ই দুচোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে করছে মন্দিরটিকে। তাহলে আর দেরি কেন? বেরিয়ে পড়ুন আজ অথবা কাল।ইতিহাসইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ১৭০৪ সালে রাজা প্রাণনাথ এ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রচণ্ড আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও রাজা প্রাণনাথ এ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। ১৭২২ সালে রাজা প্রাণনাথের মৃত্যু হলে তার দত্তক পুত্র রাজা রামনাথ পুনরায় এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্য এবং লোকমুখে শ্রুত আছে যে, শতাধিক শ্রমিক টানা ৪৮ বছর কাজ করে ১৭৫২ সালে এ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন।অবস্থানকান্তজীর মন্দির ইটের তৈরি অষ্টাদশ শতাব্দীর মন্দির। কান্তজীর মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে এক শান্ত নিভৃতগ্রাম কান্তনগরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। বাংলার স্থাপত্যসমূহের মধ্যে বিখ্যাত এ মন্দিরটির বিশিষ্টতার অন্যতম কারণ হচ্ছে পৌরাণকি কাহিনিসমূহ পোড়ামাটির অলঙ্করণে দেয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ নবরত্ন বা ‘নয় শিখর’ যুক্ত হিন্দু মন্দিরের চুড়া থেকে আদি নয়টি শিখর ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট টেরাকোটা শিল্পের নির্দশন রয়েছে এ মন্দিরে। নির্মাণ মন্দিরের নির্মাণ তারিখ নিয়ে যে সন্দেহ ছিল তা অপসারিত হয় মন্দিরের পূর্বকোণের ভিত্তি দেয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত সংস্কৃত ভাষায় লেখা কালানুক্রম জ্ঞাপক একটি শিলালিপি থেকে। সূত্র অনুযায়ী দিনাজপুরের মহারাজ প্রাণনাথ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং তাঁর স্ত্রী রুক্ষ্মিনীর আদেশে পিতার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য মহারাজের দত্তকপুত্র মহারাজ রামনাথ মন্দিরটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন।কেমন দেখতেএ জমকালো পিরামিড আকৃতির মন্দিরটি তিনটি ধাপে উপরে উঠে গিয়েছে এবং তিন ধাপের কোণগুলির উপরে মোট নয়টি অলঙ্কৃত শিখর বা রত্ন রয়েছে যা দেখে মনে হয় যেন একটি উঁচু ভিত্তির উপর প্রকাণ্ড অলংকৃত রথ দাঁড়িয়ে আছে। মন্দিরের চারদিকে খোলা খিলান পথ রয়েছে যাতে যেকোনো দিক থেকেই পূজারীরা ভেতরের পবিত্র স্থানে রাখা দেবমূর্তিকে দেখতে পান। বর্গাকৃতির মন্দিরটি একটি আয়তাকার প্রাঙ্গনের উপর স্থাপিত। এর চারদিকে রয়েছে পূজারীদের বসার স্থান যা ঢেউটিন দ্বারা আচ্ছাদিত। বর্গাকার প্রধান প্রকোষ্ঠটিকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ ইমারত নির্মিত হয়েছে। পাথরের ভিত্তির উপর দাঁড়ানো মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুটেরও বেশি। ধারণা করা হয়, গঙ্গারামপুরের (দিনাজপুর) নিকট বাননগরের প্রাচীর ধ্বংসাবশেষ থেকে নির্মাণ উপকরণ এনে এটি তৈরি করা হয়েছিল। বাইরের দিকে উঁচু করে তৈরি তিনটি চতুষ্কোণাকার প্রকোষ্ঠের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের নকশা কেন্দ্রীয় প্রকোষ্ঠটিকে শক্তিশালী করেছে, তাই উপরের বিরাট চুড়াটিকে এ প্রকোষ্ঠটির পক্ষে ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।বৈশিষ্ট্যকান্তজীর মন্দিরের চমৎকার পোড়ামাটির অলঙ্করণের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক হলো, এতে কামদ দৃশ্যাবলির চিত্র অঙ্কন করা হয়নি, যেমনটি দেখা যায় উড়িষ্যা ও দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরসমূহে। কান্তজীর মন্দিরের দেওয়ালের ওপর পোড়ামাটির এ বিশাল অলঙ্করণ সে সময়ের জীব ও প্রাণশক্তিরই প্রকাশ ছিল এবং হাজার বছর ধরে বাংলাদেশের পলিময় মাটিতে লালিত শক্তির ভেতর থেকেই এ শিল্প বেড়ে উঠেছিল।কীভাবে যাবেনঢাকা থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব প্রায় ৪১৪ কিলোমিটার। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর থেকে রয়েছে বেশ কটি আরামদায়ক কোচ সার্ভিস। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দিনাজপুর যাওয়ার ট্রেন রয়েছে। সময় বেশি লাগলেও এতে স্বাচ্ছন্দ্যে যাওয়া যায়। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে কান্তজীর মন্দিরের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার।থাকা-খাওয়াকান্তজীর মন্দিরের আশপাশে কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তাই আপনাকে দিনাজপুর শহরের কোনো আবাসিক হোটেলে থাকতে হবে। এখানে কম বা বেশি টাকার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল।এসইউ/পিআর
Advertisement