নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি সাভারের ইয়াপুরে দাফন করা হয়েছে।
Advertisement
রোববার (২০ জুন) সন্ধ্যায় আসরের নামাজের পরে জানাজা শেষে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।
জানা যায়, মরদেহগুলো ইয়াপুর ইউনিয়নের খাঁ বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাদের স্বজনেরা ও প্রতিবেশীরা। এ ঘটনায় পুরো গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতদের এক পলক দেখার জন্য ওই বাড়িতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। তবে বাড়িতে নেই কাঁদার মতো কোনো লোকজন।
একই পরিবারের নারী-শিশুসহ পাঁচজন নিহত ও আরও পাঁচজন গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
Advertisement
রোববার নিহতদের মধ্যে দুজনের মরদেহ প্রথম আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নে আনা হয়। পরে বিকেলে বাকি তিনজনের মরদেহও আনা হয়।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, সাভারের আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার ছাইফুলের স্ত্রী মুক্তি আক্তার (৩০) ও তার ছেলে সাদেকুল (৮), রশিদের স্ত্রী রুবি আক্তার (৩৩) ও তার মেয়ে রাহিমা (৩) ও হারুনের শাশুড়ি রোকেয়া বেগম (৫২)।
আহতরা হলেন, নিহত রাহিমার বাবা রশিদ (৪০), রাজিয়া (৪০), জাহের আলীর ছেলে কাজিম উদ্দিন (৪২), সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাইফা (১২), হারুন মিয়ার স্ত্রী শারমীন (২৮) ও মেয়ে ইসরাত জাহান (৮) এবং কাদির মিয়ার স্ত্রী সামসুন্নাহার (৬০)।
দুর্ঘটনায় আহত রবিউল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত ৩টার দিকে পরিবারের ১২ সদস্য মিলে আশুলিয়া থেকে মাজার জিয়ারতের জন্য সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। শনিবার সকাল ৮টার দিকে তারা মাজারে জিয়ারত করে আশপাশে ঘোরাফেরা করেন।
Advertisement
এরপরে তারা জাফলংয়ে যান। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে শনিবার সন্ধ্যায় রওনা হন তারা। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নরসিংদীর পাঁচদোনা ঘোড়াশাল টঙ্গী আঞ্চলিক সড়কের সাকুড়ার মোড়ে পৌঁছালে একটি ট্রাক তাদের ওভারটেক করতে গিয়ে পেছন দিক দিয়ে ধাক্কা দেয়।
এতে গাড়ির পেছনের দুই সিটে থাকা পাঁচজন মারা যান। সামনের সিটে যারা ছিল তারা সামান্য আহত হন। এ ঘটনায় পাঁচজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাস ও ট্রাকের চালকরা সহযোগিতা করলেও ঘটনাস্থলে তিনজন মারা যাওয়ায় তারা পালিয়ে যান।
আহত রশিদ বলেন, প্রথমেই আমাদের বাধা পরেছিল। আমার স্ত্রী রুবিনা ও মেয়ে ইসরাত জাহান পেছনের সিটে ছিল। হঠাৎ করে কী হলো?- বুঝতে পারলাম না। আমি দেখি গাড়িতেই বসে আছি। আর মানুষজন আমাদের সামনে এসে হাউকাউ করছে। আর আমাদের বের করার চেষ্টা করছে। আচমকা সব শেষ হয়ে গেল- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
নিহত মুক্তির স্বামী ও সাদেকুলের বাবা সাইফুল শুধু পাগলের মতো এদিক-সেদিক ঘুরছেন আর বলছেন, ‘আমি কোনোদিনই ভাবতে পারিনি আমার স্ত্রী-সন্তান এভাবে মারা যাবে। আমি এখন তাদের কোথায় পাবো?’
সাইফুল ইসলামের চাচাতো বোন সুরাইয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছোট মেয়ে রাহিমাটা একটু একটু কথা বলতে পারতো। সেও মরে গেছে। তার দিকে তাকানোই যাচ্ছে না। তার চেহারাই চেনা যায় না।’
প্রতিবেশী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। একই পরিবারের পাঁচজন নিহতের ঘটনায় আমরা মর্মাহত। তারপরও শেষবারের মতো দেখতে এসেছি তাদের মরদেহ।’
উল্লেখ্য, শনিবার রাতে নরসিংদীর পাঁচদোনা গোড়াশাল টঙ্গী আঞ্চলিক সড়কের সাকুড়ার মোড়ে দ্রুতগামী ট্রাক ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। বাকিদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে আরও দুইজন মারা যান।
আল-মামুন/এসএমএম/জেআইএম