মতামত

প্রতীকেও লিঙ্গবৈষম্য!

আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যেই মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাই পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।  স্থানীয় সরকার (পৌরসভা নির্বাচন) বিধিমালা-২০১০ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর জন্য মোট ৪০টি প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১২টি, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ১০টি ও সাধারণ আসনের জন্য ১২টি প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু কিছু কিছু নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সংক্ষরিত নারী আসনের প্রার্থীদের জন্য এমনসব প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যেগুলো একেবারেই সনাতন ধ্যান ধারণার। শুধু তাই নয় নারীর জন্য তা অবমাননাকরও। প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যও করা হয়েছে। তাই এ ধরনের প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক হতে হবে। যদিও এর আগেও নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত প্রতীকগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছিল, কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের জন্য ১০টি প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এসব প্রতীকের মধ্যে রয়েছে- গ্যাসের চুলা, কাঁচি, চকোলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটি ব্যাগ, মৌমাছি, আঙুর ও হারমোনিয়াম। এর আগে চলতি বছর অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সংরক্ষিত মহিলা পদের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে এ ধরনের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হলে এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ তখন আশ্বাস দিয়েছিলেন, আগামী নির্বাচনগুলোয় এ ধরনের প্রতীক পরিবর্তন করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ফলে নারী সমাজ ক্ষুব্ধ। ১৩ ডিসেম্বর যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে তা ওই নির্ধারিত প্রতীকের মধ্য থেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার মধ্য দিয়ে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। এতে নারীর প্রতি পশ্চাৎপদ মানসিকতারই পরিচয় ফুটে উঠছে। নির্বাচন কমিশনের মানসিকতাও এর মধ্যে দিয়ে পরিস্ফুটিত হয়েছে। এই ধরনের হীন মানসিকতা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্যেই যেখানে সংরক্ষিত আসনে নারীদের নির্বাচিত করে নিয়ে আসা হচ্ছে, সেখানে এ ধরনের অবমাননাকর প্রতীক বরাদ্দ স্পষ্টতই নির্বাচন কমিশনের স্ববিরোধিতা। এ ধরনের প্রতীক বরাদ্দ থেকে বোঝা যায় নারীদের শাড়ি, চুরি পরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নারী সেই দেশে নারীর ক্ষমতায়ন কোন পর্যায়ে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অবস্থায় প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক মানসিকতার পরিচয় দেয়াটা অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে বলে আমরা আশা করছি। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের মতামতও নেয়া যেতে পারে। এইচআর/এমএস

Advertisement