দেশজুড়ে

এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় সাতক্ষীরা

আজ ৭ ডিসেম্বর। সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা। শত্রুর বুলেটের আঘাত সহ্য করেও সাতক্ষীরার সন্তানরা ১৬টি সম্মুখযুদ্ধের মোকাবেলা করেছিল। যুদ্ধে অংশ নেয়া সেইসব মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ স্বাধীনতার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অযত্ন অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বধ্যভূমি ও গণকবরের স্মৃতিচিহ্ন। তাই বধ্যভূমি ও গণকবরের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের।১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তান বিরোধী মিছিলে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। আর এখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া। মুক্তিযুদ্ধের খরচাদি বহনের জন্য সাতক্ষীরা ট্রেজারি হতে অস্ত্র লুট আর ন্যাশনাল ব্যাংক হতে অলংকার, টাকা পয়সা লুটের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম। ৮ম ও ৯ম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ শেষে ২৭ মে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে আবদুল গফুর এমএনএ ও ইপিআর সুবেদার আইয়ুবের নেতৃত্বে প্রথম সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় পাক সেনাদের দুই শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘণ্টাব্যাপি এ যুদ্ধে শহীদ হয় তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হয় আরও দুইজন। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এসব যুদ্ধে শহীদ হয় ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। লাইটের আলোয় অসুবিধা হওয়ায় ৩০ নভেম্বর টাইম বোমা দিয়ে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভীত সন্ত্রস্ত করে ফেলে পাক সেনাদের। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে পাক সেনারা। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বেনেরপোতা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে পাকবাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় মেতে উঠে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা।মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে সাতক্ষীরার যে সকল বীর সন্তান শহীদ হন তারা হলেন-শহীদ আব্দুর রাজ্জাক, কাজল, খোকন, নাজমুল, হাফিজউদ্দিন, নূর মোহাম্মদ, আবু বকর, ইমদাদুল হক, জাকারিয়া, শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রহমান, আমিনউদ্দিন গাজী, আবুল কালাম আজাদ, সুশীল কুমার, লোকমান হোসেন, আব্দুল ওহাব, দাউদ আলী, সামছুদ্দোহা খান, মুনসুর আলী, রুহুল আমীন, জবেদ আলী, শেখ হারুন অর রশিদ প্রমুখ।সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসনে মশু জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা হানাদার মুক্ত দিবস ৭ ডিসেম্বর। এই দিনে ১৯৭১ সালে সাতক্ষীরাকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধরা। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছরই এই দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে আসছি। তিনি আরও বলেন, অযত্ন অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বধ্যভূমি ও গণকবরের স্মৃতিচিহ্ন। তিনি এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি জানান।এসএস/এমএস

Advertisement