করোনায় ধস নেমেছে পর্যটন এলাকার ব্যবসায়ীদের। পর্যটক না আসায় ব্যবসায় মন্দাভাব বিরাজ করছে। অনেকের দোকানে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। বেশকিছু দোকানপাটও বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক ব্যবসায়ী ঋণ করে টাকা নিয়ে পরিশোধ করতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা প্রহর গুনছে কবে প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠবে।
Advertisement
জানা গেছে, জেলায় পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত মান্দার ঐতিহ্যবাহী কুসুম্বা মসজিদ, বদলগাছীর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও জাদুঘর, হলুদ বিহার, ধামইরহাটের শালবন ও আলতাদীঘি, পত্নীতলার দেবর দীঘি, আত্রাইয়ের রবীন্দ্র কাচারী বাড়ি, সদরের গুটারবিল ও সাপাহারের জবইবিল।
বছরের দুই ঈদ ছাড়াও এসব পর্যটন এলাকায় প্রতিদিন দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব এলাকায় বেড়তো আসত দর্শনার্থীরা। পর্যটকদের আনাগোনাকে কেন্দ্র করে জন্য এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে দোকানপাট। অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের দিন চলে যেত। যা থেকে চলে অনেকের জীবন জীবিকা।
গত বছরের মার্চ মাস থেকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুভার্ব শুরু হয়। এরপর থেকে পর্যটন এলাকাগুলো বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। মাঝখানে কিছু দিনের জন্য পর্যটন এলাকাগুলো চালু করা হয়। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে আবারও পর্যটন এলাকাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
Advertisement
পর্যটন এলাকায় পর্যটকরা না আসায় সেখানকার ব্যবসাতে মন্দা ভাব বিরাজ করছে। পর্যটকের অভাবে অনেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে আবার অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। হাতেগোনা কয়েকটি দোকান চালু রয়েছে। তারপরও বেচাকেনা শূন্যের কোটায়।
ধামইরহাটের আলতাদীঘির পাড়ে দোকানী ফাতেমা বেগম বলেন, করোনার কারণে দর্শনার্থীরা আর আসে না। দিনে হাতেগোনা কয়েকজন আসে। আগে দিনে ১০-১৫ হাজার টাকা বিক্রি হত। আর এখন দিনে ৩০০-৫০০ টাকার মতো বিক্রি হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। কিস্তির টাকা ঠিকমতো দিতে পারছি না। এ নিয়ে খুব সমস্যার মধ্যে আছি। করোনার আগে পাশে একজন খাবারের হোটেলের দোকান দিয়েছিল। তারপর করোনা শুরু হলে পর্যটকদের অভাবে দোকানটাই বন্ধ হয়ে গেছে।
আলতাদীঘির পাড়ে আরেক দোকানী বুলবুল আক্তার বলেন, আগে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসত। করোনার কারণে পর্যটকদের আসা বন্ধ হয়ে গেছে। আগে দিনে ৮-১০ হাজার টাকা বিক্রি হত। সেখানে এখন ৫০০-৭০০ টাকা বিক্রি হয়। অনেক সময় পুলিশ এসে দোকান বন্ধ করে দেয়। পরিবারের ৫ জন সদস্য এ দোকানের আয় থেকে জীবন জীবিকা চলত। কিস্তি দিতে হয়। এখন পথচলা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। কবে আমাদের জীবন স্বাভাবিক হবে এক আল্লাহ ভাল জানেন।
বদলগাছীর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের গেটের পাশে মিশু কনফেকশনারীর দোকানী আসাদুজ্জামান হিট বলেন, করোনায় আমাদের দোকানদারদের অবস্থা শোচনীয়। করোনার কারণে পর্যটকরা আসতে পারে না। পর্যটকরা আসলে আমাদের বেচাকেনা হয়ে থাকে। প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হতে। দোকান খুললেই সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকার মতো বিক্রি হতো।
Advertisement
তিনি বলেন, প্রায় দেড় বছর থেকে দোকান বন্ধ। দোকানে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো মালামাল আটকে আছে। দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় ধুলোবালি পড়েছে। এছাড়া প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। আমার মতো ২২টি দোকানের একই অবস্থা। গত বছর করোনার প্রণোদনা দেবে বলে স্থানীয় মেম্বার নাম ও ঠিকানা লিখে নিয়ে গেছে। কিন্তু তারপর আর কোনো খোঁজখবর নেই।
আব্বাস আলী/এমআরএম/এমএস