নওগাঁর মান্দা উপজেলায় সম্প্রতি বেড়েছে চোরের উপদ্রব। কোনোভাবেই চোরদের দৌরাত্ম থামানো যাচ্ছে না। চোরেরা যেন চুরির অভয়ারণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে এই উপজেলাকে। গবাদিপশু, দোকানের মালামাল, অটোরিকশা, শ্যালোমেশিন, মোটরসাইকেল, স্বর্ণালংকার কোনোকিছুই ছাড়ছে না চোরের দল। এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগ করা হলেও কোনোভাবেই চোরের উপদ্রব না থামায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
Advertisement
জানা গেছে, গত বছরের ২৬ অক্টোবর মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) যোগ দেন শাহিনুর রহমান। এরপর গত আট মাসে উপজেলায় অন্তত ১৫টি গরু, বেশকিছু দোকান এবং মাঠের ৬টি শ্যালোমেশিনসহ অনেকগুলো চুরির ঘটনা ঘটেছে।
চলতি বছরের গত ১৩ জুন বিকেলে উপজেলার প্রসাদপুর দুধের বাজারের পাশে অটোরিকশা চুরি ঘটনা ঘটেছে। রোজার মাসে প্রসাদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর খাঁ-পাড়া গ্রামের রাসেল নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে গরু চুরি হয়। গত ২৭ মে রাতে উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের বালিচ গ্রামে শাহিন আলম নামে এক ব্যক্তির খামারের সিঁদ কেটে দুটি অস্ট্রেলিয়ান গাভী নিয়ে যায় চোরেরা।
২৫ মে পলাশবাড়ি বাজারে আব্দুল্লাহেল বাকির দোকানের ছাউনির টিন কেটে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। ১ মার্চ তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কুরকুচি বিলে এক রাতে ৯টি শ্যালোমেশিন চুরি হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় মেসার্স আরাফাত ট্রেডার্সে নগদ অর্থসহ প্রায় ৯ লাখ টাকার মালামাল চুরি যায়। ২১ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের চৌদ্দমাইল মোড়ে নৈশপ্রহরীকে বেঁধে রেখে ৬টি দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরের দল।
Advertisement
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর গণেশপুর ইউনিয়নের কাঞ্চন পশ্চিমপাড়া গ্রামে সাইফুল ইসলামের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেল, ১২ হাজার টাকা ও স্বর্ণের একটি চেইন চুরি হয়। ৯ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের তেপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের বাড়িতে তিনটি গরু চুরি হয়েছে। এছাড়াও ওই সময় এক সপ্তাহে এই গ্রামে তিন পরিবারের ৭টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। ২৯ নভেম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের রুবেল হোসেনের গোয়াল ঘরের তালা ভেঙে দুটি অস্ট্রেলিয়ান গাভী চুরি হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদারকি ও টহল না থাকায় অহরহ চুরির ঘটনা ঘটছে উপজেলা জুড়ে।
পুলিশের সঠিক তদারকি না থাকা এবং থানার কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চুরি করে পার পেয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোর চক্র। মূল্যবান সম্পদ এবং আয়ের উৎস হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে। এই সংঘবদ্ধ চোরদের কাছ থেকে রক্ষা পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
স্থানীয়রা বলছেন, আমরা এখন অনেক ভয়ে থাকি কখন সবকিছু চুরি হয়ে যায়। অতি দ্রুত এই সংঘবদ্ধ চোরদের গ্রেফতার করা না হলে চুরি থামবে না। তাদের অভিযোগ, চুরির পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এরপর আর খোঁজ থাকে না। সাধারণ মানুষ হিসেবে আর কী করার আছে আমাদের? নিজেরা চুরি যাওয়া মালের সন্ধান করে এক সময় থেমে যেতে হয়।
Advertisement
ভুক্তভোগী দোকান মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, চুরি হওয়ার পর থানায় অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। একজনকে ধরে পুলিশের কাছে দিয়েছিলাম। ওই চোর পুলিশের কাছে দুইজনের নামও বলেছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করেনি। এখানে পুলিশের ভূমিকা নীরব। এর পিছনে যদি কিছু টাকা খরচ করি সেটাও লোকসান হয়ে যাবে। এ কারণে আর সামনে বাড়িনি।
প্রসাদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর খাঁ পাড়া গ্রামের রাসেল বলেন, ‘এ বছর ঈদুল ফিতরের দুইদিন আগে রোজার মধ্যে আমার তিনটি গরু চুরি হয়। এর পরেই থানায় অভিযোগ করেছি। তবে অভিযোগ করে কোনো ফল পাইনি। পুলিশও আর যোগাযোগ করেনি। যদি আবারও থানায় যাই তাহলে একটা খরচের ব্যাপার থাকে। পরে মনে করলাম এ বিষয়ে পুলিশের পেছনে যা খরচ করব তা লোকসান হবে। এখনও গরু উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো কাজ করেনি পুলিশ।’
বালিচ গ্রামে শাহিন আলম বলেন, ‘গরু চুরির পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেছিলাম। কিন্তু কোথাও পাইনি। গরু দুটির আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করেছিলাম। তিনি থানা পুলিশকে জানিয়েছিলেন বলে শুনেছি।’
এ বিষয়ে ভারশোঁ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, ‘চুরি ও মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগ থানায় দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। আর এ কারণে বাড়ছে মাদক ও চুরির হিড়িক।’
এ ব্যাপারে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ‘চুরি রোধ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এখনও চেষ্টা করছি। কিছু উদ্ধার করেছি এবং কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে যে কয়টা অভিযোগ এসেছে সেসব বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া উদ্ধারও করা হয়েছে।’
আব্বাস আলী/এসএস/এমএস