যে ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায় থাকে; তার কোনো ভয় নেই; কোনো চিন্তাও থাকার কথা নয়; আল্লাহর জিম্মা বা নিরাপত্তায় থাকতে ছোট্ট একটি কাজের কথা বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আবার তাদের জন্য বরকতময় দিনের দোয়াও করেছেন তিনি। কী সেই কাজ ও দোয়া?
Advertisement
আল্লাহ তাআলার জিম্মায় থাকার সহজ ও ছোট্ট কাজটি হলো- দিনের শুরুতে ফজরের নামাজ পড়া। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বেন; ওই ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার জিম্মায় বা নিরাপত্তায় থাকবেন বলে ঘোষণা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি তাঁর উম্মতদের মধ্যে যারা ফজরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করেছেন, তাদের জন্য বরকতময় দিনের দোয়াও করেছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-
১. হজরত সামুরাহ বিন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়ল; সে মহান আল্লাহর জিম্মায় রইল।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
২. হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়ল, সে আল্লাহর যিম্মায় থাকল। অতএব তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারিকে নষ্ট করো না। যে ব্যক্তি তাকে হত্যা করবে, আল্লাহ তাকে তলব করে এনে উল্টো মুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (ইবনে মাজাহ, তালিকুর রাগিব, আত-তারগিব ওয়াত তারহিব)
Advertisement
দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর জিম্মায় থাকতে একটি দোয়া পড়তেন। তিনি তাঁর উম্মতকে আল্লাহর জিম্মায় থাকতে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। যখনই তারা ঘর থেকে বের হবে, তখনই এ দোয়া পড়বে। তাহলো-
بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি, তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি।’
Advertisement
অর্থ : আল্লাহর নামে (বের হচ্ছি); আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো উপায় নেই; আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো শক্তিও নেই।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)
ফজরের নামাজ পড়ার আরও ৭ উপকারিতা
১. সারা রাত নামাজ পড়ার সমান। হাদিসে এসেছে-
‘যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ইশার নামাজ পড়ল, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম)
২. ফজরের নামাজ কেয়ামতের দিন নূর হবে। হাদিসে এসেছে-
‘যারা রাতের আঁধারে মসজিদের দিকে হেঁটে যায়, তাদেরকে কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও।’ (আবু দাউদ)
৩. সরাসরি জান্নাত পাবে। হাদিসে এসেছে-
‘যে ব্যক্তি দুই শীতল (নামাজ) পড়বে, (সে) জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর দুই শীতল (নামাজ) হলো ফজর ও আসর।’ (বুখারি)
৪. রিজিকে বরকত আসবে।
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘সকাল বেলার ঘুম ঘরে রিজিক আসতে বাঁধা দেয়। কেননা তখন রিজিক বণ্টন করা হয়।’
৫. দুনিয়া-আখেরাতের সেরা বস্তু অর্জিত হয় ফজরের নামাজে। হাদিসে এসেছে-
‘ফজরের দুই রাকাআত নামাজ দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুর চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’ (তিরিমিজি)
৬. আল্লাহর দরবারে ফজরের নামাজ আদায়কারীর নাম আলোচিত হয়। হাদিসে এসেছে-
‘তোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের দায়িত্বে থাকে তারা ওপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সব জানেন, তবুও ফেরেশতাদেরকে প্রশ্ন করেন- আমার বান্দাদের কেমন রেখে এলে? ফেরেশতারা বলে, আমরা তাদের নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম, তখনও তারা নামাজরত ছিল।’ (বুখারি)
বিশেষ করে...
৭. ফজরের নামাজেই দিনের সূচনা বরকতময় হয়। ফজরের নামাজ দিয়ে দিনটা শুরু করলে, পুরো দিনের কার্যক্রমে একটা বরকতময় সূচনা হয়। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন। হাদিসে এসেছে-
‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্যে, তার সকাল বেলায় বরকত দান করুন।’ (তিরমিজি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফজর নামাজ যথাসময়ে আদায় করা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। ফজরের নামাজ ও দোয়াটি পড়ার মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। সব সময় আল্লাহ তাআলার জিম্মায় নিরাপদ থাকার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ফজরের নামাজ ও দোয়া পড়ার মাধ্যমে নিজেদের আল্লাহর জিম্মায় নিরাপদ রাখার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস