মাহমুদ সোহেল
Advertisement
অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় ঢাকা। ভোগান্তি কত প্রকার ও কী কী তা হাড়ে হাড়ে টের পান অফিসগামীরা। ফেসবুকে স্থান পায় রম্য প্রচারণা। বৃষ্টি থামলেই আবার অসহ্য গরম। শীতকালে ঢাকার আরেক নাম ধূলার শহর। বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি থাকে তখন। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্কের (একিউআই) পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকার বাতাস তখন গড়ে প্রতি তিন দিনে একদিন বিশ্বের সেরা দূষিত বাতাস হয়। তার মানে শীত, গরম বা বর্ষা কোনো সময়ই ঢাকায় শান্তি নেই। দুর্ভোগ লেগে থাকে সব সময়। ইদানিং দেখা যাচ্ছে বৃষ্টি হলেও গরম কমছে না। ঢাকায় এতো গরম কেন? এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এই শহরের প্রকৃতি হারিয়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। জলাশয় ভরাট হচ্ছে। এখন আর পাখির ডাক শোনা যায় না। গাছ কাটা হচ্ছে নির্বিচারে। মজার ব্যাপার হলো ঢাকায় পুকুর কাটতে অনুমতি লাগে। জলাশয় ভরাটে লাগে না। ঢাকার চারপাশে নদী ছিল তা খেয়ে ফেলেছে খাদকরা। খালগুলোও বেদখলে। রাজনীতির ক্ষমতা তাদের এ কাজের টিকিট দিয়েছে।
আরও মজার ব্যাপার হলো এ শহরে বা দেশে বৃক্ষরোপণের হিসাব আছে, কর্তণের খবর নেই। বন বিভাগের কর্তাদের মাঝেও দেখা যায় বৃক্ষরোপণে তারা খুব অ্যাক্টিভ। গাছ পরিচর্যায় আগ্রহ নেই। পরিবেশবিদরা বলেন, বৃক্ষরোপণে বাজেট থাকে। সেখানে টাকা আছে। তাই বন বিভাগ সে কাজে তৎপর। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে বার্ষিক বন উজাড় হওয়ার হার বৈশ্বিক গড়ের প্রায় দ্বিগুণ (২ দশমিক ৬ শতাংশ)। বন বিভাগের হিসাব বলছে, সারাদেশে দখল হয়ে গেছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৩ একর বনভূমি। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি। দুঃখজনক হলেও সত্য বেদখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধারে কোনো চেষ্টা চোখে পড়ে না।
ঢাকায় পানি ধারণের জায়গা কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর পানির স্তর নিচে নামছে। এভাবে চললে আগামী প্রজন্ম সুপেয় পানি পাবে না। পানির হাহাকারে ঢাকা ছেড়ে পালাবে সবাই। ঢাকায় এতো গরম কেন? এই একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হবে। কারণ এই গরমের পেছনে আছে পরিবেশ ধ্বংসের করুণ সব কাহিনি। এসব তুলে ধরার দায়িত্ব গণমাধ্যমের। কিন্তু গণমাধ্যম তা কি করছে? কতটুকু করছে, তা জনগণ ঠিকই জানে। যত যুক্তি তর্কই দেন, গণমাধ্যম এখন মানুষের আস্থার সংকটে ভুগছে। এটাই সত্য। মানুষ চায় তার সমস্যা ও সমাধানের কথা শুনতে। ঢাকার পরিবেশ ইস্যুতে অন্তত সেই কাজটি গণমাধ্যম করছে না। কেন এ শহর বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে? এসব কিছু যতটুকু আলোচনা হয়, তার চেয়ে বেশি দেখা যায় রাজনীতির সংবাদ কাভারেজে। পরিবর্তিত পৃথিবীতে বা ফেসবুকের এ যুগে বাংলাদেশের তরুণরা রাজনীতি আর আগের মতো খায় না। মানুষ চায় সংবাদে তাদের কষ্টের কথা থাকুক। উঠে আসুক তাদের জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়। প্রতিবেদন হোক তাদের দুর্ভোগ নিয়ে।
Advertisement
সচেতনভাবে চিন্তা করে দেখুন তো আমাদের গণমাধ্যম কি গণমানুষের চাওয়া–পাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে? প্রতিদিন দেশের ৩৩টি টেলিভিশন চ্যানেলের লিড নিউজ লক্ষ্য করুন। কি নিয়ে সাজানো হচ্ছে সংবাদ বুলেটিন। সেখানে মানুষের কথা আছে কতটুকু? ঢাকার আড়াই কোটি মানুষের দৈনিক ভোগান্তির চিত্র আছে কি সেখানে? থাকলেও তা কতটুকু? দু-চারটি ছাড়া বাকি পত্রিকাগুলোরও একই অবস্থা। এসব কিছুই বলে দেয় জনগণ কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে গণমাধ্যম থেকে। পত্রিকাগুলোতে পরিবেশ বিট নেই। দু-একটি পত্রিকায় পরিবেশ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিপোর্টার থাকলেও তিনি কাভারেজ কম পান। পরিবেশকে এখনো জরুরি মনে করছেন না গণমাধ্যমের কর্তারা। কারণ তাদের মাঝেও পরিবেশ সাংবাদিকতার প্রয়োজনীতা নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে। পরিবেশ নিয়ে গণমাধ্যমের এই উদাসীনতা বড়ই দুঃখজনক।
গত ৫ জুন ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়, যা গত ১০ বছরের বৃষ্টিপাতের ইতিহাসে এই দিনের রেকর্ড। অথচ সেদিনও তীব্র গরম ছিল ঢাকায়। আবহাওয়া অফিস বলছে, ৫ জুন ঢাকায় রেকর্ড বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। বোঝা যাচ্ছে শহরের গরম– বৃষ্টিতেও কমছে না। পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিকতা করি আমি। এ জন্য ঢাকার ভ্যাপসা গরম নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন করার সুযোগ হয়েছে আমার।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু শহরের গরম কমছে না। এটি প্রকৃতির অস্বাভাবিক আচরণ। এর কারণ এ শহরের পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে। একদিনে হয়নি এটি। বছরের পর বছর ধরে চলছে দূষণের এই কাণ্ড। এই শহরের গাছ কাটা হচ্ছে নির্বিচারে। সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের ইতিহাস বিজড়িত গাছ কাটা হলো। ভেবেছিলাম কোনো বিজ্ঞ আইনজীবী হয়তো আদালতে রিট করবেন এ নিয়ে। হয়নি। ভেবেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী যশোর রোডের শতবর্শী গাছের মতো এ নিয়ে মাঠে নামবেন সবাই। কিন্তু তাও হলো না। রাজনীতিবিদরা হাজার বিষয় নিয়ে টক শো করেন গভীর রাতে। নিজ দলের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে–এমন স্লোগান শুনলাম না সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ রক্ষায়। বোঝা গেল এই শহরের পরিবেশ রক্ষার রাজনীতি কেউ করে না। করে ক্ষমতার। সেটার নিশ্চয়তা পেলেই তারা খুশি। শহর গোল্লায় গেলেও তাদের দরকার মসনদ। দরকার টাকা।
অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেল ঢাকা। চরম ভোগান্তি অফিসগামীদের। নিউজের এই শিরোনাম বর্ষাকালের নিত্যদিনের। রাজনীতিকরাও এখানে ইস্যু পান না। এ নিয়ে কথা বলার সময় নেই তাদের। নিজ দলের শীর্ষ নেতাদের খুশি রাখাই পদ পাওয়ার বড় গ্যারান্টি। মানুষ এসব বুঝে গেছে। তাই আগের মতো রাজনীতিবিদদের প্যাচাল আর বিশ্বাস করে না। বদলে যাওয়া পৃথিবীতে বদলে যাচ্ছে দেশের চা–দোকানের অলস রাজনৈতিক আড্ডাও। আমাদের রাজনীতি মানুষের স্বার্থ বা জীবন ঘনিষ্ঠ নয়। দল ঘনিষ্ঠ। নতুন প্রজন্ম এসব ভন্ডামী বোঝে বলেই আমার বিশ্বাস। এটাই আশার দিক।
Advertisement
সবার উদাসীনতার সুযোগে ঢাকার ভূমিদস্যুরা ফাঁকা মাঠে গোল দিচ্ছে। বলতে পারেন দর্শক ছাড়া। এসব ভুমিদস্যু আবার কিছু গণমাধ্যমেরও মালিক। তাই তাদের দাপট চোখে পড়ার মতো। যে কোনোভাবে জমির মালিক হলেই চলে। ভবন বানানোর অনুমোদন দিতে রাজউক বসেই আছে পাত্তির বিনিময়ে। তাই এ শহরে জলাশয় ভরাট কোনো অপরাধ নয়। বরং সুউচ্চ ভবন নির্মাণকে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। সরকারে বা প্রশাসনে থাকা মাথা মোটা শিক্ষিতরাও এতে সুর মেলান। তারা বিশ্বের উন্নত দেশের সব খবরই রাখেন। জানেন। পরিবেশ সুরক্ষায় সেই সব দেশ কী কী করছে নিজ চোখে তা দেখেছেন। তারপরও দেশে এসে জ্ঞানপাপির মতো উল্টো কথা বলেন। সহমত পোষণ যেন এদের পদোন্নতির বড় গ্যারান্টি। দেশের বারোটা বাজলেও নিজের আখের গোছানোটাই বড় তাদের কাছে।
এমন নানা উদাসীনতায় এ শহর দিনকে দিন বাস যোগ্যতা হারাচ্ছে। তিলে তিলে শেষ করা হচ্ছে তিলোত্তমা ঢাকাকে। সরকারি–বেসরকারি নানা উন্নয়নের আড়ালে পরিবেশের বারোটা বাজছে। অথচ নীরব সবাই।
শক্তভাবে বলা যায়, এমন অপরিকল্পিত নগরায়ন ঢাকার প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে। গাছ নেই, নেই পশু–পাখির অভয়অরণ্য, জলাশয় ভরাট হচ্ছে দৈনিক। এসব কারণে ঢাকায় ষড়ঋতু উধাও–বলছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। এ শহরে যেভাবে বন উজাড় হচ্ছে তাতে শুধু পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণেই ঢাকা বাসযোগ্যতা হারাতে পারে। অবশ্য গাছ কেটে বন উজাড় করার এ ঘটনা ঢাকার বাইরেও কম নয়।
দেশের এমপি–মন্ত্রীদেরও ধারণা শপিংমলে কোটি টাকার লেনদেন হলেই দেশ উন্নত হয়ে যাবে। এমন ভ্রান্ত ধারণা ঢাকার পরিবেশের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনছে। ভেবে দেখুন, এ শহরে মতিঝিল এলাকায় থাকলে আপনার যে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হবে, ঠিক একই সময় রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে হাঁটলে আপনি শীতল অনুভব করবেন। কাজেই পরিবেশ সচেতন হতে গবেষক হওয়া লাগে না।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জানান, একটি দেশের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে মোট ভূমির ২৫ শতাংশ বনাঞ্চল থাকা দরকার। বাংলাদেশে আছে মাত্র ১০–১২ শতাংশ। ঢাকায় তার পরিমাণ অর্ধেকেরও কম। ঢাকার পরিবেশের এই বিরূপ আচরণ মনুষ্য সৃষ্ট। উন্নত দেশে আধুনিকভাবে বিল্ডিংয়ে বৃক্ষ স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশে তা মানা হচ্ছে না। রাজউক দ্রুত তা বাস্তবায়ন না করলে এই শহর বাসযোগ্যতা হারাবে। সবাই শুধু নগরায়নের উন্নয়ন দেখছে। কিন্তু পরিবেশ নষ্ট করে এ শহরে কেউ শান্তিতে বাস করতে পারবে না। এই সত্যটি এখনো কেউ বুঝতে চাচ্ছে না।
সবুজ–শ্যামল ও ছায়া ঢাকা এই বাংলার রূপ আজ কোথায় গেল? পাখির ডাকে ঘুম ভাঙা এখন অতীত। যখন বৃষ্টির দরকার তখন হচ্ছে না। হচ্ছে অসময়ে। পানির অভাবে অনেক কৃষিজাত বাংলাদেশ থেকে হারাতে বসেছে। বৃষ্টির সাথে অধিকাংশ ফসল উৎপন্ন জড়িত। জলাশয় ভরাটের কারণে শহরে শুধু জলজট হয় না। সুপেয় পানির স্তরও নিচে নেমে যায়। এই বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পানির অপচয় ঠেকাতে বিদ্যুতের মতো মিটার লাগানোর পরামর্শ এসেছে বাপা’র সেমিনার থেকে।
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টের বায়ুর গবেষণা চালিয়ে বাতাসে নতুন ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ধুলায় ৮ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন তারা, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। এর কারণে এ শহরের মানুষের পেটের পীড়া, ফুসফুসে আক্রান্ত হওয়াসহ শ্বাসকষ্টজনিত নানা অসুখ দেখা দেবে। এই গবেষণাটি এখনো চলমান বলে জানায় গবেষক টিম।
পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রকৃতি সুরক্ষায় এখনই উদ্যোগী না হলে অচিরেই বাসযোগ্যতা হারাবে ঢাকা। তারা বলছেন, প্রকৃতির ওপর নির্বিচারে অত্যাচারের কারণে সময় মতো বৃষ্টি হচ্ছে না। বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমছে না। কৃষি খাত হুমকিতে। বৃষ্টি না হওয়া ও তীব্র দাবদাহে দেশের কৃষি ঝুঁকিতে আছে। হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা। প্রকৃতির ইকো–সিস্টেম ফিরিয়ে না আনলে মানুষের জন্য নিরাপদ থাকবে না দেশ। বিশ্ব হারাবে বাসযোগ্যতা। তাই তো এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ইকো সিস্টেম পুনরুদ্ধার’।
শুধু তাই নয়, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলে–স্থলে সব জায়গায় সমান তালে চলছে পরিবেশ ধ্বংসের মহোৎসব। পরিবেশের ওপর চলমান অত্যাচারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশের উপকূল ঝুঁকিতে আছে। সাগরের পানি বাড়লে তলিয়ে যাবে বিরাট এলাকা। খোদ পরিবেশ মন্ত্রীই বলেছেন, এতে বাস্তুহারা হবে বাংলাদেশের অন্তত ষাট লাখ মানুষ।
মানুষকে সচেতন করা গেলেই কেবল পরিবেশ সুরক্ষা পাবে। পরিবেশ ধ্বংস করে দেশের কোনো উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না। উন্নয়ন হবে, তবে পরিবেশকে মেরে ফেলে নয়। পানি, বায়ু, নদী, পাহাড়সহ প্রকৃতির নানা উপাদানের ব্যাপারে সব পক্ষকে যত্নবান হতে হবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কাজের ছাড়পত্র দেয়া বন্ধ করতে হবে।
কোটি টাকার শপিংমলের কেনা–কাটার ভিড় উন্নয়নের প্রমাণ নয়। বরং আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ গড়াই টেকসই উন্নয়ন। এই শহরের কয়েক কোটি মানুষ বায়ুদূষণে আক্রান্ত। সচেতনার অভাবে মানুষ তা বুঝতে চাচ্ছে না। একটি দেশের স্বাস্থ্যখাতে বার্ষিক অধিক ব্যায় প্রমাণ করে দেশটি কতখানি স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। মনে রাখা দরকার পরিবেশ ধ্বংস হলে ধনী–গরিব কেউ রেহাই পাবে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, ধূলার কারণে আলো-বাতাস পাচ্ছে না ঢাকার গাছ। টকসিড বাড়ছে বাতাসে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। করোনাকাল মানুষের চলাফেরা কম ছিল। গাড়ি কম চলেছে। রাস্তায় ধুলা কম ছিল। ঢাকাসহ সারাদেশের প্রকৃতি প্রাণ পেয়েছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইকোসিস্টেম ঠিক না থাকলে বিশ্ব অশান্ত থেকেই যাবে। করোনাসহ নানা মহামারিতে প্রাণ যাবে। তীব্র তাপে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার হারাবে মানুষ।
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস যে আচরণ করলো তা সুনামির মতো। ভারতের দিঘা শহরে যে পানি উঠলো এবং সুন্দরবন যেভাবে ভেসে গেল তা পরিবেশের ইকোসিস্টেম নষ্ট করার ফল। সুষ্ঠু স্বাভাবিক ও টেকসই পরিবেশ ছাড়া পৃথিবীকে শান্ত রাখা যাবে না। এগুলো বাংলাদেশে নষ্ট হচ্ছে বলে বৃষ্টি হচ্ছে না। তীব্র দাবদাহে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় আম-লিচু আকারে ছোট হয়েছে। নেত্রকোনার হাওড় এলাকায় ধানে প্রচুর চিটা হয়েছে। এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে বাংলাদেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
দেশের উপকূল, পাহাড়, জলাভূমি, সমতলে নানভাবে ইকোসিস্টেম বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ও নগরায়নের প্রভাবেও পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে। বক্ষব্যাধি চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘদিন বায়ুদূষনের শহরে বাস করা মানুষের করোনায় অক্সিজেন সংকট বেশি দেখা দিচ্ছে। বায়ু দূষণপ্রবণ এলাকায় করোনার মৃত্যু হার বেশি। তাই গ্রামের চেয়ে ঢাকায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ এলাকার মানুষের ফুসফুস এমনিতেই দুর্বল থাকে। এমন দেহে করোনা সহজেই বাসা বাঁধতে পারে। লম্বা সময় দূষিত বাতাসে শ্বাস গ্রহণকারী ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হলে তার মৃত্যু ঝুকিও বেশি। ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে যে সমস্যা সৃষ্টি হয় বায়ুদূষণ তা আরও জটিল ও তীব্র করে। করোনায় শহরে মৃত্যুর হার বেশি, গ্রামে কম। এর বড় কারণও বায়ুদূষণ। নানা কারণে গ্রামের চেয়ে শহরে বায়ু দূষণ বেশি। ঢাকার রাস্তায় বায়ু দূষণ, ঘরে আলো–বাতাসহীন আবদ্ধ পরিবেশ। গ্রামের মানুষ কায়িক পরিশ্রম করে, শহরে সুযোগ নেই। তাই রাজধানীতে রোগ–বালাইও বেশি।
বিশ্ব করোনা পরিস্থিতির ওপর করা এক আন্তর্জাতিক গবেষণার তথ্যমতে এখন পর্যন্ত করোনায় বিশ্বে যত মানুষ মারা গেছে তার ১৫ শতাংশের কারণ বায়ুদূষণ। ঢাকার দূষণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শহরের দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন প্রতিবাদ করছেন পরিবেশবাদীরা। এবার চিকিৎসকদের কথায়ও উঠে এলো দূষণের ক্ষতি। তারা আক্ষেপ করে বলেন, আর কত মৃত্যুর মিছিল দেখলে ঘুম ভাঙবে ঢাকাবাসীর, সচেতন হবে সরকারের কর্তারা? লেখক : পরিবেশ সাংবাদিক ও সভাপতি মেরিন জার্নালিষ্ট নেটওয়ার্ক।
এইচআর/এমএস