পিকনিক শব্দটি শুনলেই ছোট-বড় সবার মনেই আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করে। ঘরে-বাইরে সবখানেই পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদেরকে সঙ্গে নিয়ে পিকনিক করা যায়। অনেকেই পরিবার নিয়ে বাড়ির ছাদে সপ্তাহান্তে বা মাসে একবার হলেও পিকনিক করে থাকেন। যদিও এদেশে বর্ষার মৌসুমে পিকনিক বা বনভোজন তেমন জমে ওঠে না। কারণ পিকনিকের জন্য সবাই শীতকালকে বেছে নেয়।
Advertisement
আজ আন্তর্জাতিক পিকনিক ডে বা বনভোজন দিবস। প্রতি বছর ১৮ জুন পালিত হয় আন্তর্জাতিক পিকনিক ডে। বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পালিত হয়ে আসছে এ দিবসটি। আন্তর্জাতিক বনভোজন দিবসটি কবে থেকে শুরু হলো বা কারা শুরু করলো- সেটা জানা যায়নি।
তবে কেউ কেউ মনে করেন, ফরাসিরাই এর উদ্যোক্তা। ফরাসি বিপ্লবের আগে বড় পার্কগুলোয় সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারত না। ফরাসি বিপ্লবের পর সাধারণ মানুষের জন্য প্রথমবারের মতো পার্কগুলো খুলে দেওয়া হয়। আর মানুষজন তখন পার্কে গিয়ে খোয়া দাওয়া করতো, মজা করত। ‘পিকনিক’ শব্দের উৎপত্তিও কিন্তু ফরাসি ভাষা থেকেই।
বনভোজন সাধারণত পরিবারের সদস্যদের ঘিরে হয়ে থাকে। কখনও আবার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিশাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পিকনিক করা হয়। নির্দিষ্ট স্থানে রান্না আয়োজনের মধ্যবর্তী সময়কালে অথবা ভোজন পরবর্তী সময়ে খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের নির্মল আনন্দ দেওয়ারও ব্যবস্থা রাখা হয়।
Advertisement
এ বছরও করোনা আবহেই পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পিকনিক ডে। তবে করোনার কারণে এ বছর পছন্দসই খাবার প্যাক করে ঢাকার আশেপাশের কয়েকটি পিকনিক স্পটে ঘুরে আসুন পরিবারসহ। জেনে নিন ঢাকার অদূরে অবস্থিত কয়েকটি পিকনিক স্পটের হদিস—
পদ্মা রিসোর্ট
ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং নামক স্থানে এই রিসোর্টের অবস্থান। প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এই রিসোর্টটি দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।
ছুটির দিনে পরিবারসহ সময় কাটানোর জন্য একেবারেই উপযুক্ত একটি স্থান এটি। পদ্মা নদীতে চড়ের উপর এই রিসোর্টটি অবস্থিত। পদ্মা নদীর পারে অবস্থিত বলেও জায়গাটি অতি মনোরম আর সুন্দর। বর্ষায় এই রিসোর্টের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
Advertisement
যেভাবে যাবেন: ঢাকার গুলিস্তান, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী থেকে এই রুটের বিভিন্ন পরিবহনে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে সড়কপথে এই জেলার ভাড়া ৬০ টাকা। মাওয়া ফেরিঘাট থেকে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য রিসোর্টের নিজস্ব স্পিডবোট আছে।
বেলাই বিল
গাজীপুরের বেলাইবিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা। বিকেলে এই বিলের চারপাশে অপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়, সঙ্গে শাপলার ছড়াছড়ি। ঘুরে বেড়ানোর জন্য মনোরম একটি জায়গা। চেলাই নদীর পাশেই বেলাই বিলের অবস্থান। এখানে ইঞ্জিনচালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দু’টোই পাওয়া যায়। সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নিতে পারেন এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিলে নিজেরাই চালিয়ে ঘুরতে পারেন।
যেভাবে যাবেন: প্রথমে গাজীপুর সদরে যেতে হবে। সেখানে নেমে টেম্পুতে কানাইয়া বাজার যাবেন। ভাড়া নেবে ১০ টাকা জনপ্রতি। রিকশাতেও যেতে পারেন। কানাইয়া বাজারে নেমেই সামনে ব্রিজ আছে, ব্রিজ পার হয়েই নদীতে বাঁধা নৌকা ঠিক করে উঠে পড়ুন।
নুহাশ পল্লী
হুমায়ূন আহমেদের ‘নুহাশ পল্লী’ সম্পর্কে সবাই জানেন। নুহাশপল্লী গাজীপুরে অবস্থিত একটি বাগানবাড়ি। নুহাশ পল্লীর পুরো জায়গাটিই সবুজ গাছপালায় ঘেরা। দেখলেই মন ভরে উঠবে। আছে অনেক প্রজাতির এবং অনেক রকমের গাছ। আরও রয়েছে সুইমিংপুলসহ ছোট্ট পুকুর। সেখানকার সবচেয়ে সুন্দর আকর্ষণ হলো গাছের উপরের ঘর। পরিবারসহ পিকনিক করার জন্য সেরা এক স্থান হলো নুহাশ পল্লী।
যেভাবে যাবেন: প্রথমে গুলিস্তান থেকে প্রভাতী-বনশ্রী বাসে হোতাপাড়া বাজারে নামবেন। সেখান থেকে ছোট টেম্পুতে করে পৌঁছে যাবেন নুহাশ পল্লী। এপ্রিল থেকে নভেম্বর নুহাশ পল্লী দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। ১২ বছরের উপরে জন প্রতি টিকেট লাগবে ২০০ টাকা।
গোলাপ গ্রাম
সাদুল্যাপুর গোলাপ বাগান সম্পর্কে নিশ্চয় আপনার জানা আছে! খুবই সুন্দর এই স্থানে গেলে দেখতে পারবেন গোলাপের বাগান। চারপাশে যেন লাল-সবুজের গালিচা বিছিয়ে রাখা। কীভাবে গোলাপের চাষ করা হয়, কীভাবে তা সংগ্রহ করা হয় তা নিজ চোখে দেখতে পারবেন। গোলাপের চারা তৈরি, গোলাপ ক্ষেত পরিচর্যা, গোলাপ তোলা দেখতে দেখতে আপনার মন হারিয়ে যাবে ফুলের রাজ্যে। পরিবারসহ ঘুরতে যেতে পারেন গোলাপ গ্রামে।
যেভাবে যাবেন: সাদুল্যাপুর- ঢাকা থেকে যেতে হলে মিরপুর মাজার রোড হয়ে বেড়িবাঁধ সড়কে যাবেন। এ ক্ষেত্রে মিরপুর-১ থেকে বাস, টেম্পো, অটোরিকশা বা রিকশায় চড়তে হবে। বেড়িবাঁধ তুরাগের তীর তথা শিন্নিরটেক ঘাট থেকে ট্রলারে উঠতে হবে। এই জলযান আপনাকে সাদুল্যাপুর ঘাটে নিয়ে যাবে। তবে শুকনো মৌসুমে নদী পার হয়ে বেশ খানিকটা পথ হাঁটতে হবে।
আড়াইহাজার মেঘনার চর
ঢাকার কাছে আড়াইহাজার চর এলাকা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খুব অল্প সময়ে। বিস্তীর্ণ এলাকায় এরকম মনোরম পরিবেশ আর কোথাও নেই শহরের আশেপাশে। সারাদিনের জন্য ঘুরতে আসতে পারেন এখানে। নদীর তীরে ট্রলারে সন্ধ্যার সময়টা কাটাতে পারেন।
যেভাবে যাবেন: গুলিস্তান থেকে দোয়েল বাসে স্বদেশ পরিবহন এ মদনপুর যাবেন। ভাড়া নিবে ৪৫ টাকা। সেখানে নেমে আড়াইহাজার এর জন্য সিএনজি নেবেন। ভাড়া নিবে ৫০ টাকা। মদনপুর নামার পর আশেপাশে অনেক দোকানপাট বা হোটেলে খেয়ে নিতে পারেন।
জেএমএস/এসইউ/এমএস