ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছে রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। গভীর রাতে ওই ক্লাবে গিয়ে মদ চেয়ে পরীমনির ভাঙচুরের ঘটনায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
Advertisement
তারা বলছে, যেহেতু মামলাগুলো চলমান, মামলার বাদীকে (পরীমনি) অবশ্যই প্রয়োজনে সব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত শেষে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লাবের ঘটনাটি আমাদের গুলশান টিমের এলাকায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করবো। এ বিষয়ে যেকোনো ধরনের অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Advertisement
ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা জেনেছি গত ৮ জুন গভীর রাতে পরীমনি ওই ক্লাবে গিয়েছেন, ৯৯৯-এর একটি ফোনে ওখানকার ঘটনাটি জানতে পারে পুলিশ। তবে পরবর্তীতে এটা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো।
এর আগে বোট ক্লাবের ঘটনায় পরীমনির অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এ বিষয়ে পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি মামলা হয়েছে ঢাকা জেলাতে। যেহেতু মামলাগুলো চলমান, মামলার বাদীকে (পরীমনি) অবশ্যই প্রয়োজনে সব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত শেষে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা যাবে।
গত ৮ জুন গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে ক্লাব কর্মকর্তাদের বিরোধ হয়। ওই রাতে পরীমনি ও তার সঙ্গীরা কী কী করেছেন তা বুধবার (১৬ জুন) রাতে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্লাবে কিছুদিন আগে (৮ জুন) ছোট্ট একটি অঘটন ঘটেছিল। আমাদের ক্লাব বন্ধের সময় হয়ে এসেছিল। তখন কয়েকজন লোক ক্লাবে আসেন। গেটে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ডরা ফোন করে জানান, তারা কিছুক্ষণ আগে একবার এসেছিলেন। তখন তারা ফোন ও কিছু কাগজ রেখে গেছেন। সেগুলো নেয়ার জন্য আবার এসেছেন।’
Advertisement
আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের নিজস্ব কিছু নিয়মকানুন আছে। কেউ যদি ক্লাবে আসে তাহলে তাকে কিছু ড্রেস কোড মেনে আসতে হয়। সেদিন এখানে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হাফপ্যান্ট ও স্যান্ডেল পরা। তখন আমাদের কর্মকর্তারা বলেন, আপনারা তো ক্লাবের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। তাদের ক্লাব থেকে এটা বলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে তারা যে সদস্যদের মাধ্যমে ক্লাবে আসেন তিনিও তাদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু তারা যেতে চাননি। পরে বাধ্য হয়ে আমাদের সেই সদস্য চলে যান। এর মধ্যে আমাদের ক্লাবের সব কর্মকর্তা চলে যান। শুধু দুজন ওয়েটার ছিল। একপর্যায়ে উনারা ৯৯৯ -এ ফোন করে পুলিশ কল করেন। তখন পুলিশ আসে, পুলিশ এসে দেখতে পান যে, উনি এগুলা ছুড়ে মারছেন। তখন পুলিশ উনাদের জিজ্ঞেস করেন আপনারা এখানে কেন আসছেন, কেন আমাদের কল করছেন? তখন তারা বলে যে, আমাদের সাথে এই হয়েছে, ওই হয়েছে। উনারা (পুলিশ সদস্যরা) বলেন যে, এরকম তো কিছু দেখছি না। তখন কেউ ছিলও না। দুইজন ওয়েটার ছিল আর এই তিন চারজন মানুষ।’
উল্লেখ্য, গত রোববার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেন এই অভিনেত্রী। স্ট্যাটাসে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার সহায়তা চান। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাভার থানায় একটি মামলা হয়। এরপর গ্রেফতার হন মূল অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ পাঁচজন। তাদের কাছ থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৬৫) ও তুহিন সিদ্দিকী অমির (৩৩) সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মঙ্গলবার পরীমনিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে কথা বলার জন্য ডাকা হয়।
সেখান থেকে বের হয়ে পরীমনি বলেন, ‘পুলিশ বন্ধুসুলভ আচরণ করেছে। পুলিশ, হারুন স্যার অনেকটা ম্যাজিকের মতো সবকিছু করেছেন। এতোটা তাড়াতাড়ি বন্ধুসুলভ ম্যাজিকের মতো পুলিশ আমাকে সহযোগিতা করবে সেটা আমি ভাবতে পারিনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেখলাম গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমি অভিযোগের ব্যাপারে সঠিক বিচার পাবো। পুলিশের ওপর আমার আস্থা আছে।’
টিটি/এআরএ/জেআইএম