জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত ধূপখোলা দখল করে সেখানে মার্কেট ও পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গত ১০ জুন সিটি করপোরেশনের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা ও করপোরেশনর সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হরিদাস মল্লিক মাঠের ভেতর ম্যাপ অনুযায়ী মাঠের চার কর্নারে খুঁটি বসান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে না জানিয়ে মাঠের মধ্যে মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনার বিষয়টি চোখের নজরে আসার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জোহা বলেন, আমরা মাঠ সংস্কার করার জন্য খুঁটি দিয়েছি। এটি সিটি করপোরেশনের কাজ। আপনারা প্রকল্প পরিচালক ও ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কথা বলেন।
সিটি করপোরেশনের প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হরিদাস মল্লিক বলেন, আমি প্রকল্প পরিচালকের আন্ডারে কাজ করি। ধূপখোলার মাঠজুড়ে মার্কেট, ক্রিকেট খেলার মাঠসহ আরও বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। আগে মাঠের চারপাশের পুরাতন ভবন ভেঙে সেখানে নতুন করে মার্কেট করা হবে। সাথে সাথে খেলার মাঠ সংস্কার করা হবে।
তিনি বিস্তারিত জানার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে পিডি মো. আবুল হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা কার জায়গা সেটা আমার মাথায় নেই। আমরা আমাদের জায়গা ডেভেলপ করব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সেটি শুধু ব্যবহার করবে।
Advertisement
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা জানান, সিটি করপোরেশনের সহায়তায় এলাকার প্রভাবশালী লোকজন মার্কেট বানাতে চাচ্ছে। এটি তাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের সহকারী রেজিস্ট্রার কাজী মনির বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা মার্কেট করছে। ইতোমধ্যে ভেতরে পিলার তুলেছে। আমরা ক্রীড়া কমিটির সভাপতি ট্রেজারার স্যারকে জানিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মোস্তফা কামাল বলেন, আজ (বুধবার) মাঠ পরিদর্শন করেছি। গেন্ডারিয়া থানার ওসি ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রকল্প পরিচালককে কঠোরভাবে বলেছি কাজ বন্ধ করতে। এছাড়াও আমরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বসব। যদি সে সুযোগ না হয়, আমরা সিটি করপোরেশনকে চিঠির মাধ্যমে অভিযোগ জানাব।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ক্রীড়াপ্রেমী আবু সালেহ আতিফ বলেন, আমাদের খেলার মাঠে কোনো মার্কেট হতে দেব না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছোট। আমরা শিক্ষার্থীরা এখানে এসে খেলাধুলা করি। সেখানে সিটি করপোরেশনের এমন পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যদি কাজ বন্ধ না হয় তাহলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
Advertisement
জানা যায়, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ধূপখোলায় তিনটি মাঠের মধ্যে একটিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে খেলার মাঠ হিসেবে দেন। এরপর থেকে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ হিসবে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এটি কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ব্যবহার করে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় তাদের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট পরিচালনা ও শরীরচর্চা করে।
রায়হান আহমেদ/বিএ/জিকেএস