জাগো জবস

জনবল নিয়োগে নতুনদের প্রাধান্য দেই : সাবিনা ইয়াসমীন

সৃজনশীল জগতের বাসিন্দা সাবিনা ইয়াসমীন। ১৮ বছর ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন নিজের প্রতিষ্ঠিত প্রচিত ইন্টেগ্রিটেড মার্কেটিং কমিউনিকেশন্স লিমিটেডে। ১৯৯৮ সালে নিজের প্রচেষ্টায় দাঁড় করান এ প্রতিষ্ঠান। তখন অ্যাডভারটাইজিং অ্যান্ড মার্কেটিং কোম্পানি নামে শুধু একটি বিভাগ থাকলেও বর্তমানে এর সহযোগী হিসেবে প্রচিত আইএমসি লিমিটেড, প্রচিত হলিডেজ, প্রচিত আইটিএস যুক্ত হয়েছে। একইসঙ্গে রয়েছে লাইফস্টাইল বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘রোদসী’।এসবের বাইরে তিনি একজন ভাল লেখক। সময় পেলেই লিখেন কবিতা, প্রবন্ধ, ছোট গল্প ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নিবন্ধ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবস্থাতেই ‘আমরা বাউল’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এরইমধ্যে ঘুরে এসেছেন আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ভারত, নেপাল, ভুটান এবং থাইল্যান্ডসহ ৭ টি দেশ। আধুনিক সৃজনশীল শিল্পে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা ও বিজ্ঞাপন জগতের নানা দিক নিয়ে জাগো জবসের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেছেন গোলাম রাব্বী।জাগো জবস : শুরুতেই আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাইবো-সাবিনা ইয়াসমীন : এইচএসসি পর্যন্ত কুমিল্লাতেই ছিলাম। এরপর চলে আসি ঢাকায়। ভর্তি হই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। সেখান থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করি। এছাড়া জাতীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান নিমকো থেকে ফিল্ম ডিরেকশন অ্যান্ড স্ক্রিপ্ট রাইটিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেই। জাগো জবস : সৃজনশীল পেশায় কখন থেকে?সাবিনা ইয়াসমীন : ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাস। মাত্রই অনার্স শেষ করেছি। অনার্স পরীক্ষা দিয়েই ভাবলাম এখন তো কিছু একটা করা দরকার। সে চিন্তা থেকেই নিজের পছন্দ খুঁজে ফেরা। এরপর প্রচিত অ্যাডভারটাইজিং শুরু করি। বিজ্ঞাপনের মতো সৃজনশীল অঙ্গনকেই কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিলাম। সেই থেকে আজ অবধি চলছে।জাগো জবস : একটি প্রতিষ্ঠান চালানোর সাহস কীভাবে পেলেন?সাবিনা ইয়াসমীন : আমি বরাবরই খুব সাহসী ছিলাম। আশপাশের কোন কথা বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে কখনোই পাত্তা দেইনি। তারচেয়েও বড় কথা হলো- পরিবারের কেউ এ পথে হাঁটতে আমাকে নিষেধ বা নিরুৎসাহিত করেনি।জাগো জবস : বিজ্ঞাপন শিল্পে কাজ করার মানসিকতা কীভাবে এলো?সাবিনা ইয়াসমীন : বাংলা সাহিত্যে পড়ালেখা আর শৈশব থেকে বইপড়ার সহজাত বৈশিষ্ট্যটা খুব কাজে লেগেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অ্যাডভারটাইজিংয়ে কাজ করার একটা সার্কেল হয়ে যায়; যেটা আমার সৃজনশীল মাধ্যমে যাত্রাটা অনেক সহজ করে দেয়।জাগো জবস : বিজ্ঞাপন নিয়ে কোথাও কি পড়াশোনা বা কাজ করেছেন?সাবিনা ইয়াসমীন : বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিটপী’তে কপি রাইটার পদে কাজ করার মানসিকতা থেকে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকি। বেশ পড়াশোনা করি। সে পড়াশোনা থেকে টেকনিক্যাল জ্ঞান এবং এ বিষয়ে কাজ করার একটা ভালো ধারণা পাই। বিষয়টির প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয়। তারপর সময় অপচয় না করে নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান দেওয়া ও অ্যাডভারটাইজিং বিজনেস শুরু করি।জাগো জবস : এ ধরনের কোর্সে কতটা কাজ হয় বলে মনে করেন?সাবিনা ইয়াসমীন : অ্যাডভাটাইজিং পেশার বেসিক ধারণাগুলো পেতে এ ধরনের কোর্স বেশ ফলপ্রসু হয় বলে আমি মনে করি।জাগো জবস : এ পেশায় সফল হতে উদ্যোক্তার কী কী গুণ থাকা জরুরি?সাবিনা ইয়াসমীন : প্রথমেই বলবো, সামাজিক অর্থনীতি সম্বন্ধে ভালো ধারণা থাকা জরুরি। বর্তমান সময়ে অ্যাডভারটাইজিং সেক্টরটা পুরোপুরি প্রফেশনাল এবং কমার্শিয়াল একটা জায়গা। এখানে সব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে ভালো করা কষ্টকর। জাগো জবস : নতুন কারো জন্য আপনার পরামর্শ কী?সাবিনা ইয়াসমীন : বিষয়গুলি সম্বন্ধে তাকে অবশ্যই জানতে হবে। তা নাহলে নিজে তো খারাপ করবেই পাশাপাশি একটা কোম্পানিরও অনেক ক্ষতি হতে পারে। মনে রাখতে হবে, একটা সফল ক্যাম্পিং একটা কোম্পানিকে অনেক উপরে তুলে দিতে পারে। ব্যর্থ হলে ঠিক এর উল্টোটা ঘটতে পারে।জাগো জবস : প্রচিত আইটিএস কী ধরনের কাজ করবে?সাবিনা ইয়াসমীন : এটা হবে একটা আন্তর্জাতিক কোম্পানি। ইন্টারন্যাশনালি কাজ করার জন্যই মূলত এটি করা হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে সেভাবে। এটা হবে প্রচিতরই একটা অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।জাগো জবস : আপনার প্রতিষ্ঠানে নতুনদের কাজের সুযোগ কেমন?সাবিনা ইয়াসমীন : আমি জনবল নিয়োগে সবসময় নতুনদের প্রাধান্য দেই। বয়সে তরুণের চেয়েও মননের তারুণ্যকে বেশি পছন্দ করি। কেননা ক্রিয়েটিভ শিল্পে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই সবসময় মন-মানসিকতায় নতুনত্বের সঙ্গে থাকার প্রবল আগ্রহ থাকতে হবে।জাগো জবস : ক্রিয়েটিভ সেক্টরে কোন কোন বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে?সাবিনা ইয়াসমীন : কোম্পানির সিইও থেকে শুরু করে অধঃস্তন পর্যন্ত প্রত্যেকটি পদেই কাজ করার সুযোগ আছে। বিশেষ করে ক্রিয়েটিভ ডিপার্টমেন্ট, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স, ব্রান্ড ডেভেলপমেন্ট, এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিন, অ্যাকাউন্টস এবং আইটি বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও আমাদের ক্লায়েন্টদের নতুন পণ্য ও সেবার প্রচার-প্রচারণার জন্য পার্ট টাইমার ছেলে-মেয়ে দরকার হয়। এককথায় এ মাধ্যমে সব বয়সী তরুণ-তরুণীর কাজের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।জাগো জবস : এ পেশায় আগ্রহীদের করণীয় কী? সাবিনা ইয়াসমীন : চোখ-কান খোলা রেখে পত্রিকা বা অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করতে হবে। এছাড়াও এসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে এইচআর বিভাগের ই-মেইলে সিভি জমা দিয়ে রাখলেও ভালো হয়। পরে চাহিদামতো ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রয়োজন মাফিক রিটেন ও ভাইভা নেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে প্রার্থীর আইকিউ, কমিউনিকেশন্স ও কনসেপ্ট ডেভেলপমেন্টের দক্ষতা যাচাই করা হয়।জাগো জবস : সৃজনশীল পেশায় জনবল নির্বাচনে কোন দিকটি বিবেচনা করা হয়?সাবিনা ইয়াসমীন : এ মাধ্যমে কাজ করার জন্য প্রচণ্ড আগ্রহ, ইচ্ছা, পরিশ্রম করার মানসিকতা, চাপ নেওয়ার ক্ষমতা ও টিমে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। অন্ততপক্ষে যারা বিজ্ঞাপন শিল্পে কাজ করতে চান, তাদের অবশ্যই মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা আর ইন্টারন্যাশনাল ভাষা হিসেবে ইংরেজি শুদ্ধভাবে বলতে-লিখতে পারতে হবে। বানানটাও খুব জানা দরকার। আর প্রযুক্তি জ্ঞান না থাকলে গ্রাফিক্স আর এডিটিং কিভাবে করা সম্ভব হবে! কেননা বিভিন্ন কনসেপ্ট ও স্ক্রিপ্টকে জীবন্ত করে তুলতে প্রযুক্তি জ্ঞান আবশ্যক।জাগো জবস : বিজ্ঞাপন শিল্পে চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?সাবিনা ইয়াসমীন : আগের তুলনায় আমাদের দেশের ক্লায়েন্টদের চাহিদা ও টেস্ট এখন অনেক উন্নত এবং আধুনিক হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠান বা পণ্যকে ব্রান্ডিং করার জন্য যেভাবে সহায়তা করা দরকার, প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে ততটা সহযোগিতা করতে পারছে বলে মনে হয় না। কোন পণ্য বা সেবাকে ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠার চিন্তা দূর হলে ঐ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করা আমাদের জন্য সহজ হবে।জাগো জবস : আপনার সফলতার কারণ কী?সাবিনা ইয়াসমীন : নিজেকে নারী মনে না করে সমাজের একটা অংশ মনে করি। যখন বলি এটা করবো; তখন ওটা আমি করবোই। আগের ব্যর্থতার কথা মাথায় রাখি না। ভয়কে জয় করলেই সফল হওয়া যায়।এসইউ/পিআর

Advertisement