অর্থ না থাকলেও দান-সাদকার সাওয়াব পাওয়া যায় বলেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। তিনি হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় তা তুলে ধরেছেন। আবার দান-সাদকায় মেলে দুনিয়া ও পরকালের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও মর্যাদা। কিন্তু কীভাবে পাওয়া যাবে দান-সাদকার এসব সাওয়াব ও ফজিলত?
Advertisement
আল্লাহর দেওয়া জীবিকা থেকে তারই পথে দান-সাদকা করার কথা এসেছে কুরআনে। আল্লাহ তাআলা বারবার তারই পথে খরচ করার কথা বলেছেন। যারা সম্পদের মালিক তাদের জন্য দান-সাদকা করা সহজ ও সাওয়াবের কাজ। তবে অর্থ না থাকলেও দান-সাদকার সাওয়াব ও ফজিলত পারওয়ার সুযোগ রয়েছে।
দান-সাদকার বিশেষ ফজিলতযারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে তারাই মুত্তাকি। কুরআনুল কারিমে মুত্তাকি মানুষের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন-‘মুত্তাকি তারাই; যারা অদৃশ্য বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রিজিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২-৩)
হাদিসের একাধিক বর্ণনায় দুনিয়া ও পরকালে দান-সাদকার বিশেষ ৫টি সাওয়াব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। তাহলো-১. ‘দান-সাদকা মানুষের গোনাহের কাফফারা।’ (বুখারি)২. দান-সাদকায় মাল ও সম্পদের বরকত হয়।’ (বুখারি)৩. দান-সাদকার আমলে ভয়ংকর মৃত্যু থেকে মুক্তি পায় মানুষ।’ (তিরমিজি)৪. দান-সাদকার আমলেই আল্লাহর আরশের ছায়ায় ধন্য হবে মানুষ।’ (বুখারি)৫. দান-সাদকার আমলকারী বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি)
Advertisement
দান-সাদকার সাওয়াব ও ফজিলত পাওয়ার উপায়যাদের অর্থ-সম্পদ নেই বা থাকলেও পর্যাপ্ত নেই; চাইলে তারাও কর্মের মাধ্যমে দান-সাদকার সাওয়াব ও ফজিলত পেয়ে ধন্য হওয়ার সুযোগ আছে। হাদিসে পাকে এমন অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়; যেখানে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা এভাবে বর্ণনা করেছেন-১. ‘তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ।’২. ‘তোমার সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশও তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ।’৩. ‘পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ।’৪. স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়া তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ। অর্থাৎ দৃষ্টিহীনকে পথ দেখানোও সাদকা)’৫. চলার পথে পড়ে থাকা পাথর, কাঁটা ও হাড় বা কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ।’৬. ‘নিজ বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেওয়াও তোমার জন্য সাদকাস্বরূপ।’৭. কাউকে পানি পান করানোর চেয়ে বেশি নেকি আর কোনো সাদকাতে নেই।’৮. তাসবিহ পড়াও সাদকা। যেমন-> ‘একবার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলাও একটি সাদকাহ।> ‘একবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলাও একটি সাদকাহ।> ‘একবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলাও একটি সাদকাহ।> একবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলাও একটি সাদাকাহ।
৯. নিজ হাতে লাগানো গাছের পাতা, ফল কোনো প্রাণীকে খাওয়ানোও একটি সাদকাহ।১০. কাউকে একটি বোঝা তার বাহনে তুলে দিতে সহযোগিতা করা একটি সদাকাহ।১১. কাউকে একটি বোঝা তার বাহন থেকে ওঠাতে বা নামাতে সহযোগিতা করাও একটি সাদকাহ।১২. বিবাদমান দুই ব্যক্তির মাঝে মিমাংশা করাও একটি সাদকাহ।১৩. মানুষের সঙ্গে উত্তম কথা বলাও একটি সাদকাহ।১৪. নামাজের জন্য মসজিদের পথে যাওয়ার সময় প্রতিটি পদক্ষেপও একটি সাদকাহ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি দান-সাদকার করার তাওফিক দান করুন। সম্পদ না থাকলে কাজের মাধ্যমে হলেও দান-সাদকার সাওয়াব ও উল্লেখিত বিশেষ ফজিলতগুলো পাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ
Advertisement