দেশজুড়ে

গ্রাম লকডাউন, বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে করোনা রোগী

মেহেরপুরের গাংনীর সীমান্ত এলাকার তেঁতুলবাড়িয়া ও হিন্দা এবং মুজিবনগরের আনন্দবাস গ্রামে লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি গ্রাম তিনটিকে লকডাউন ঘোষণা দেয়। পরে বিকেলে গাংনী ও মুজিবনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে লাল পতাকা টাঙিয়ে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেন।

তবে এ লকডাউন মানছেন না গ্রামের লোকজন। করোনা সংক্রমণ নিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা, বাজারে যাতায়াতসহ নানা কাজে ব্যস্ত তারা। আবার যারা করোনা সন্দেহে নমুনা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন তারাও হোম আইসোলেশনে থাকছেন না। আবার নতুন করেও কেউ আসছে না পরীক্ষার জন্য। ফলে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সংক্রমণ।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার তেতুল বাড়িয়া গ্রামে ১৮ জন, হিন্দা গ্রামে ২৩ জন করোনায় আক্রান্ত। গত ১২ জুন ওই এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প করে নমুনা সংগ্রহ করলে ২৯ জনের মধ্যে ১৬ জনের দেহে করোনা পজিটিভ হয়। পরদিন থেকে কেউ আর নমুনা দিতে আসেনি।

Advertisement

করোনা পজিটিভ যারা তারাও ঘরে থাকছেন না। বাড়ির পাশে মাচায় বা চায়ের দোকানে থাকছেন। তাদের আত্মীয়রাও অন্যান্য রোগীর মতো দেখতে আসছেন। অনেক করোনা রোগী বাজারে ওষুধ কেনার জন্য আসছেন। আবার কেউ কেই গো-খাদ্য সংগ্রহের জন্য ক্ষেত খামারে যাচ্ছেন। ফলে সংক্রমণের হারটা বেড়ে চলেছে।

হিন্দা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত ইউনুস আলীর ছেলে রিপন আলী বাড়ি নেই। তিনি ওষুধ কিনতে গাংনী বাজারে গেছেন।

করোনা সংক্রমণ নিয়ে বাজারে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনুস আলী উল্টো অভিযোগ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাদের খোঁজখবর নেন না। বাধ্য হয়ে অন্য ডাক্তার ও ফার্মেসিতে যেতে হচ্ছে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনদিন করোনার প্রকোপ বাড়লেও সতর্কতামূলক কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো না। স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের কোনো প্রচার প্রচারণা বা সতর্কবাণী নেই। এছাড়া করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালের বিশেষ আইসোলেশনও নেই। গেল বছর করোনার সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনে ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি কক্ষ আইসোলেশন হিসেবে ব্যবহৃত হলেও গত তিনমাস আগে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে।

Advertisement

অন্যদিকে, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় এ উপজেলার জন্য বরাদ্দ তিন লাখ টাকার কোন কাজ না করায় তা ফেরত দেয়া হয়েছে। চলতি বছরে করোনার জন্য বরাদ্দ দেয়া টাকা আজো আসেনি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম কে রেজা বলেন, ‘এলাকার লোকজন যে অভিযোগ করেছে সেটি সঠিক নয়। হিন্দা ও করমদি এলাকার করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনের জন্যও মোবাইল ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে। আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর জন্য হাসপাতাল বাউন্ডারির অন্য ভবনে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম বলেন, ‘ওই তিনটি গ্রামের যারা আক্রান্ত তাদেরকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। নিয়মিত পরিদর্শন করে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। অনেকেই বুঝতে না পেরে ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

আসিফ ইকবাল/এসজে/এমকেএইচ