জাতীয়

উপকূলের উন্নয়নে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে একের পর এক দুর্যোগ আঘাত হানছে। ফলে সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তাই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে সরকারের সব উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়বে। এজন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৫ জুন) আন্তর্জাতিক সংস্থা কেএনএইচ জার্মানি ভার্চুয়াল সেমিনারে সংসদ সদস্যসহ নাগরিক সংগঠন ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এ দাবি জানান।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফেইথ ইন অ্যাকশন আয়োজিত এ সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র।

সেমিনারে খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুখী, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই উন্নয়নের ঢেউ উপকূলীয় অঞ্চলেও পৌঁছেছে। কিন্তু ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে সেই উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়েছে। এর কারণ ষাটের দশকে নির্মিত উপকূলীয় বেড়িবাঁধ।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, নদী ভরাটসহ নানান কারণে বর্তমানে দীর্ঘদিনের পুরোনো বেড়িবাঁধ উপকূলের সুরক্ষা দিতে পারছে না। এখন পরিকল্পিতভাবে নতুন বাঁধ তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে স্থায়ী ড্রেজিং-এর ব্যবস্থা যেমন রাখতে হবে, পর্যায়ক্রমে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। আর উপকূলের সব ধরনের সমস্যা সঙ্কট নিয়ে কাজ করার জন্য পৃথক একটি বোর্ড বা সংস্থা গঠন করা দরকার।’

সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেমন অবিবার্য হয়ে উঠেছিল, ঠিক তেমনি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এখন অনিবার্য হয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে এই অঞ্চল। এ বছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সরাসরি আঘাত না করলেও উপকূলের বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। অসংখ্য মানুষ এলাকা ছাড়া হতে বাধ্য হচ্ছে। উপকূল অঞ্চল থেকে আদায় হওয়া রাজস্বের একটি অংশ উপকূলের জনপদ সুরক্ষায় ব্যয় করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

উপকূলের ঝুঁকি মোকাবেলায় জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে কেএনএইচ জার্মানির প্রতিনিধি মাটিলদা টিনা বৈদ্য বলেন, ‘বাঁধ ব্যবস্থাপনার অভাবে এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় অঞ্চল এখন ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে। এই সঙ্কটের মোকাবিলায় সস্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’

Advertisement

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফেইথ ইন অ্যাকশনের নির্বাহী পরিচালক নৃপেন বৈদ্য। তিনি উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক বোর্ড গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ঝুঁকিতে থাকা বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষনে স্থানীয় সরকার ও জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারসহ প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। উপকূলীয় জনগণের নিরাপদ খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা নারী ও শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিতে হবে। লবণাক্ত ও খরা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন, লবণ সহনশীল কৃষিকাজ ও বিকল্প জীবিকায়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। এসব কাজের জন্য জাতীয় বাজেটে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

ভার্চুয়াল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, , বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, পার্লামেন্ট নিউজ সম্পাদক সাকিলা পারভীন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমাম হাসান, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল, সচেতন সংস্থার সানজিদুল হাসান, সাংবাদিক আব্দুল আজিজ ও রিয়াদ হোসেন, উন্নয়নকর্মী কামাল হোসেন, শ্যামনগরের হাফিজুর রহমান ও সুষমা হালদার, কয়রার শামীমা আক্তার প্রমুখ।

এইচএস/এএএইচ/এমএস