বিনোদন

গানের সন্ধ্যায় পুরস্কার নিলেন সোনিয়া নিশাত আমিন

দেশের দুই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী চন্দনা মজুমদার ও মেহরীনের গানের সুর ঝংকারে বর্ণিল সন্ধ্যায় ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২২’ গ্রহণ করলেন বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন। দেশের গবেষণা ও প্রবন্ধ সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।গেল ৫ ডিসেম্বর ২০১৫, শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির শংকরে অবস্থিত সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র ছায়ানট ভবনের অডিটোরিয়ামে জমকালো এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার হাতে এই পুরস্কারের পদক ও সম্মাননা অর্থ ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও বিশেষ অতিথির আসনে ছিলেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।অনুষ্ঠানটি শুরু হয় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। পুরস্কার প্রদান পর্বে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক ড. সোনিয়া নিশাত আমিনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সনদ তুলে দেন সেলিনা হোসেন, পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন তাসমিমা হোসেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক ড. সোনিয়া নিশাত আমিনকে নিয়ে বলেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ইতিহাসবিদ প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি আজকের অনুষ্ঠানের মধ্যমণি, পুরস্কৃত লেখক সোনিয়ার শিক্ষক। এই কারণে এটা আমার জন্যে বিরল সৌভাগ্য। পাক্ষিক অনন্যাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। গুণিমানুষের মূল্যায়ন করলে সমাজ এগিয়ে যায়। আর সেটি না করতে পারলে সমাজ অন্ধকারের দিকে চলে যায়। এ কারণে এই ধরনের পুরস্কারের গুরুত্ব অনেক।’ ড. আমিন সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘এটি খুব সম্মানীয় পুরস্কার। অনেকে এই পুরস্কার পেতে চান, তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে। সোনিয়া এই পুরস্কারের যোগ্য দাবিদার বটে। আমি তাকে শুভেচ্ছা জানাই।’অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ড. আমিন তার অভিব্যক্তি প্রদান করতে গিয়ে বলেন, ‘আজ আমার ভেতর তিনটি অনুভূতির মিথস্ক্রিয়া ঘটছে গর্ব, আনন্দ ও বিনয়। গর্ব-আনন্দ এই কারণে যে, দীর্ঘ ২৫ বছর আমার গবেষণা জীবনের একটা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলাম। আর বিনয় এই জন্যে যে, যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের নামের পাশে নিজের নাম উচ্চারিত হওয়াটা সৌভাগ্যের।’ ড. আমিন আরো বলেন, সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারে নারীর প্রতি যে বৈষম্য কয়েক হাজার বছর ধরে বিদ্যমান। সমাজ নির্মাণে নারীর যে অর্ধেক ভূমিকা সেটি কৌশলে অদৃশ্য করে দেয়া হয়েছে। শুধু অদৃশ্যই না, ক্ষেত্রবিশেষ তা বিকৃত করে তোলা হয়েছে। জ্ঞাননির্মাণে নারীর অংশগ্রহণ না থাকলে সেটি যেমন আংশিক হবে, তেমন বিকৃতও হবে। সভাপ্রধানের বক্তব্যে তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘আজ অনন্যার ২১তম সাহিত্যপুরস্কার দেয়া হল। প্রথম পেয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি আজ উপস্থিত আছেন। আমরা নারীরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে হোচট খাচ্ছি। কিন্তু সেটি তো কোনোভাবে কাক্সিক্ষত নয়। তাই কোনো না কোনোভাবে আমাদের বক্তব্য বা প্রতিবাদ নিয়ে দাঁড়াতে হয়। সোনিয়া দাাঁড়িয়েছেন। তাকে অভিনন্দন।’ মূলপর্ব শেষ হলে অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী তামান্না ডেইজি। এরপর দর্শক মাতিয়ে তোলেন দেশের দুই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী চন্দনা মজুমদার ও মেহরীন। মেহরীন গেয়ে শোনান রবীন্দ্রসংগীত। চন্দনা মজুমদার গান লালনসংগীত।ড. সোনিয়া নিশাত আমিন বাংলাদেশের গবেষণা অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য একনাম। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি এখানে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘকাল ধরে ড. আমিন ঊনিশ এবং বিশ শতকের বাংলার সামাজিক ইতিহাস বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন।এই বিষয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে তার ত্রিশটিরও বেশি প্রবন্ধ দেশে-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অব মুসলিম উইমেন ইন কলোনিয়াল বেঙ্গল : ১৮৭৬-১৯৩৯’ বিষয়ে গবেষণার জন্যে ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. আমিন তার পিএইচডিতে তিনটি প্রজন্ম বা ৬০ বছর জুড়ে বাংলার ১৯-২০ শতকে (মুসলিম) নারীর আধুনিক ও স্বাধীন হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া তুলে ধরেছেন। সেই অর্থে তাকে বাঙালি নারীর বিবর্তনমূলক সামাজিক ইতিহাসের একজন বিশেষজ্ঞ বলে আখ্যায়িত করা চলে।উল্লেখ্য, বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৩ সাল) থেকে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর একজন নারী-সাহিত্যিক অথবা সাহিত্য-গবেষককে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ-পর্যন্ত যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন তারা হলেন- সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, দিলারা হাশেম, রাবেয়া খাতুন, ড. সনজীদা খাতুন, শহিদ জননী জাহানারা ইমাম (মরণোত্তর), নূরজাহান বেগম, রাজিয়া খান, রুবী রহমান, পূরবী বসু, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মকবুলা মনজুর, ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ, সালেহা চৌধুরী, নূরজাহান বোস, মালেকা বেগম, কাজী রোজী, ড. নিয়াজ জামান এবং জাহানারা নওশিন। এলএ

Advertisement