দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে রাসমেলা উপলক্ষে আয়োজিত যাত্রাপালার আসরে গত শুক্রবার মধ্য রাতে বোমা বিস্ফোরণে ছয়জন আহত হওয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। বিদেশি নাগরিক হত্যা, ব্লগার, লেখক-প্রকাশকদের হত্যা, হত্যাচেষ্টা, তাজিয়া মিছিলে হামলা, এরপরও এ ধরনের হামলা কিন্তু থেমে নেই। খোদ দিনাজপুরেই একের পর এক ঘটলো তিনটি ঘটনা। গত ১৮ নভেম্বর সকালে দিনাজপুর শহরের মির্জাপুর এলাকার মিশনারির ফাদার ডা. পিয়েরো পিচম ও ৩০ নভেম্বর রাতে চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক বীরেন্দ্রনাথকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা এবং এরপর কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে যাত্রা প্যান্ডেলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো। এই তিনটি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। সর্বশেষ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে, কারও পায়ের মাংসপেশি ছিঁড়ে গেছে। সবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এর মধ্যে আব্দুল জব্বার নামে একজন ছাড়া অন্য পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। আহত ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যাত্রাপালার প্যান্ডেলের সামনের অংশে বসে ছিলেন তারা। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণে চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। লোকজন আতঙ্কিত হয়ে হুড়মুড় করে প্যান্ডেল ছেড়ে বেরিয়ে যায়। দেশে এ ধরনের হামলার ঘটনা প্রথম নয়। এ ধরনের হামলা কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না সেটিই শঙ্কার বিষয়। কান্তজিউ মন্দিরের ঘটনায় প্রাণহানি হয়নি-এটা স্বস্তির বিষয়। কিন্তু যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যে আরো বড় কিছু ঘটাতে পারতো সেটির প্রমাণ কিন্তু তারা দিয়েছে। তাহলে পুলিশ বাহিনী কি করছে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে মেলা প্রাঙ্গণে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে সে রকম আশঙ্কা তো ছিলই। এরপরও কেন হামলার ঘটনা এড়ানো গেল না? এটা কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা? ঘটনা ঘটানোর পর অপরাধীরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে- এখানেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতা, সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কাছাকাছি সময়ের মধ্যে দিনাজপুরেই তিনটি ঘটনা ঘটলো। অথচ প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। এটা কী করে হয়? তাহলে অপরাধীরা চাইলেই সব কিছু করতে পারবে নির্বিঘ্নে? কারও কোনো দায় দায়িত্ব নেই? এ ঘটনায় কাহারোল থানার ওসি আব্দুল মজিদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কোথাও কোনো গাফিলতি থাকলে সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। বোমা হামলার কারণে আমাদের ঐতিহ্যবাহী লোকজ যাত্রাপালা এখন বিলুপ্ত হতে বসেছে। প্রশাসন থেকে অনুমতি পাওয়া যা্য় না যাত্রানুষ্ঠান আয়োজনের। কান্তজিউর মন্দিরের রাসমেলায় যাত্রাপালা হচ্ছিল। হামলার পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হামলাকারীরা এটাই চায়। তারা এদেশের লোকজ সংস্কৃতির শেকড় উপড়ে ফেলে দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানাতে চায়। সেই ফাঁদে পা দিলে চলবে না। যাত্রাপালা বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে যুক্তিযুক্ত। যাত্রাপালা শুধু আমাদের লোকজ ঐতিহ্যই নয়, এরসঙ্গে জড়িত অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা। এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। অপরাধীর শাস্তিই এক্ষেত্রে যথাযথ প্রতিষেধক।এইচআর/এমএস
Advertisement