প্রায় ১৬ লাখ মানুষের বসবাস শেরপুরে। করোনার প্রাদুর্ভাব ছাড়াও জেলায় নিয়মিত বাড়ছে স্বাভাবিক রোগীর সংখ্যা। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে রোগী বাড়লেও নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। শুধু চিকিৎসক সঙ্কট নয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবসহ রয়েছে নানা সমস্যা। এসব সঙ্কট কাঁধে নিয়েই মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালগুলো।
Advertisement
তবে হাসপাতালে শূন্যপদগুলো পূরণ করতে ও সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মানুষের সেবা দিতে সদরে ২৫০ শয্যা চালু হলেও নিশ্চিত হয়নি ১০০ শয্যার মানও। এ হাসপাতালে ৩৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। নেই রেডিওলজিস্ট ও প্যাথলজিস্ট। ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, গাইনী, ইএনটিসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক না থাকায় রোগী আসলেই রেফার করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১৪ জন, ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ১২ জন, নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১১জন, নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও দায়িত্ব পালন করছেন ১৫ জন চিকিৎসক। এছাড়াও প্রতিটি হাসপাতালেই দায়িত্বরত অন্যান্য পদেও রয়েছে জনবলের তীব্র সঙ্কট।
Advertisement
ডাক্তার দেখাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে হয় টিকিট। চিকিৎসক পর্যন্ত যেতে প্রতি রোগীর সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। রোগীর ভিড়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খান চিকিৎসক। এর ভেতর ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের হয়রানিও চরমে। এছাড়া এসব বিষয়ে খবর সংগ্রহে বাধা দেয়াও এখানে নিয়মিত ঘটনা।
শেরপুরের প্রতিটি হাসপাতালে সাম্প্রতিক সময়ে নার্সদের দুর্ব্যবহারের চিত্র এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। ওয়ার্ড বয় ও নার্সদের অসহযোগিতার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী অনেকেই। জেলার প্রতিটি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও এখন এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এদিকে, করোনার নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা নিয়েও রয়েছে ভোগান্তি। করোনা রোগীদের জন্য ৫০ শয্যা বরাদ্দ থাকলেও পরিপূর্ণ সেবা না পাওয়ায় অনেকেই থাকেন হোম আইসোলেশনে। পুরো জেলায় আইসিইউ নেই একটিও। রয়েছে নানা যন্ত্রপাতির অভাবও।
জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ভবনের পঞ্চম তলার শিশু ওয়ার্ডের ৪ নম্বর কক্ষে চারটি ফ্যানের তিনটিই নষ্ট। বৈশাখের গরমে এই ভোগান্তি মাথায় নিয়েই ভর্তি রয়েছেন ছয় জন। প্রতিটি উপজেলাতেও একই অবস্থা।
Advertisement
জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু সুমাইয়ার বাবা সুলতান মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এই গরমের মধ্যেও ফ্যান চলে না। গরমে বেঁচে থাকাই দুষ্কর।’
নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কবির আহমেদ বলেন, ‘দিনের বেশির ভাগ সময়ই হাসপাতালে ডাক্তার থাকে না। তারা এখানে ঢু মেরেই প্রাইভেট চেম্বারে চলে যান। গরীব রোগীরা নিয়মিত সেবা পায় না সরকারি হাসপাতাল থেকে।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘ঝিনাইগাতীতে নার্সদের ব্যবহার দেখলে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে যায়। এদের আন্তরিকতার কোনো ছিটেফোঁটাও নেই। ডাক্তার তো নেই অনেকদিন হলো। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য যাওয়া লাগে শেরপুর অথবা ময়মনসিংহে।’
শেরপুরের বিএমএ সভাপতি ডা. এমএ বারেক তোতা বলেন, ‘চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে অনতিবিলম্বে চিকিৎসক সঙ্কট দূর করতে হবে। আমাদের সেবায় কোনো ঘাটতি নেই। আমরা যতজন ডাক্তার থাকা উচিৎ, রয়েছি এর অর্ধেক। দ্রুতই এই ঘাটতি আমরা কাটিয়ে উঠবো।’
শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আনোয়ারুর রউফ জনবল সঙ্কটসহ নানা সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এরইমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। দ্রুত চিকিৎসক সঙ্কটের এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এখন সব আসছে। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা জেলা সদর হাসপাতালেই উন্নত চিকিৎসা দিতে পারব।’
ইমরান হাসান রাব্বী/এসজে/এমকেএইচ