কালা-আজার, কালো জ্বর, ডামডাম ফিভার বা ভিসারাল লেশমানিয়াসিস নামে পরিচিত একটি রোগ। গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়ায় এই রোগের সংক্রমণ বেড়ে যায়। যা লেশমানিয়া প্রজাতির অন্তর্গত প্রোটোজোয়ান জীবাণুর মাধ্যমে ঘটে। লেশমানিয়াসিসের ৩টি রূপ আছে: ভিসারাল বা কালা-আজার, যা সবচেয়ে মারাত্মক, কোটানিয়াস এবং মিউকোকোটানিয়াস।
Advertisement
এই রোগের সংক্রমণের জন্য দায়ী হলো এক জাতীয় পোকা। যা লুটজমিয়া এবং ফ্লেবোটোমাস প্রজাতির স্যান্ডফ্লাই নামে পরিচিত। বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে কালো জ্বরের প্রকোপ আছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারত, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, নেপাল এবং সুদানের মতো দেশে কালো জ্বরের ঝুঁকি বেশি।
ভারতে, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যগুলোর বেশিরভাগ কালো জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লুএইচও) তথ্য অনুযায়ী, লেশমানিয়াসিসকে ৭টি মারাত্মক গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগগুলোর মধ্যে একটি বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ এই রোগের সংক্রমণ অনেক গুরতর ও মারাত্মক হয়ে থাকে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ কালো জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। প্রতি বছর ১.৫ থেকে ২ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। জেনে নিন কালো জ্বরের কারণ, উপসর্গ, চিকিত্সা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে-
Advertisement
কালো জ্বর হওয়ার কারণ
এই রোগের সংক্রমণ বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশগত অবস্থা, পরজীবী এবং মানুষের জীবনযাপনের উপরে নির্ভর করে। পোকামাকড়ের কামড়ের ফলে এই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। ছোট মশার মতো দেখতে বালুর পোকার শরীরে এই রোগের জীবাণু থাকে। আর্দ্র আবহাওয়া এবং রাতের বেলায় এই পোকাগুলো উড়ে বেড়ায় এবং মানুষকে কামড়াতে পারে।
শুধু মানুষকে কামড়ানোর মাধ্যমেই নয় বরং স্যান্ডফ্লাইস যদি কোনো পশু বা পাখিকে কামড়ায়; তাদের মাংস খাওয়ার ফলেও যে কারও শরীরে কালো জ্বরের জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। এই রোগের মূল জীবাণু প্রোটোজোয়া শরীরে প্রবেশের পর রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে প্রভাবিত করে। এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রোটোজোয়া জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে, ফলে শরীরে ফুটে ওঠে নানা লক্ষণ।
জেনে নিন কালো জ্বরের লক্ষণসমূহ
Advertisement
>> সংক্রমিত হওয়ার ৩-৪ মাসের মধ্যেই শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকে>> সপ্তাহ বা মাস ধরে জ্বর >> যকৃতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি>> রক্তে নির্দিষ্ট কিছু ইমিউনোগ্লোবুলিনের স্তর বেড়ে যাওয়া>> ক্ষুধা কমে যাওয়া>> ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যায়>> শুষ্ক, পাতলা এবং খসখসে ত্বক>> ফ্যাকাশে চামড়া>> রক্তাল্পতা>> শারীরিক দুর্বলতা>> রাতে অতিরিক্ত শরীর ঘামে বা ফুলে যায় >> মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি, ঘা, ছুলি ইত্যাদি দেখা দেওয়া ইত্যাদি।
কালো জ্বরের গুরুতর লক্ষণসমূহ
>> দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া>> শিশুদের ক্ষুধামন্দা>> একাধিক অঙ্গের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়া>> অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া>> রক্তক্ষরণ>> পেশি শক্তি হারানো>> মৃত্যু
কালো জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কাদের বেশি?
>> পুষ্টিহীন লোকেরা, বিশেষত আয়রন, দস্তা এবং ভিটামিন এ এর অভাবে যারা ভুগছেন; তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। >> ৫-১০ বছরের শিশুদের কালো জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।>> এইডস আক্রান্তদের।>> যেখানকার স্যানিটারি ব্যবস্থা ভালো নয়।>> আর্দ্র এবং উষ্ণ এলাকাসহ যারা বনাঞ্চলে বসবাস করে, এমন মানুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
কালো জ্বর সনাক্ত করার সাধারণ ডায়াগনস্টিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আছে-
# অ্যান্টি-কে ৩৯ অ্যান্টিবডি পরীক্ষা: রক্তে পরজীবীর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডিগুলো সনাক্ত করা।
# অস্থি মজ্জা অ্যাসপিরেট: পরজীবী প্রধানত রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে সংক্রামিত করে বলে হাড়ের মজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এই পরীক্ষার মাধ্যমে অস্থি মজ্জা ভালো আছে কি-না তা পরীক্ষা করে কালো জ্বর সনাক্ত করা হয়।
# বায়োপসি: ম্যাক্রোফেজের অভ্যন্তরে পরজীবীগুলো প্রকাশ করতে।
কালো জ্বর প্রতিরোধের উপায়
>> ডিডিটি স্প্রে করার মতো এলাকায় ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ করা। >> যেসব অঞ্চলে সংক্রমণের ঘটনা বেশি; সেখানে এই রোগের উপর নজরদারি। >> কুকুরের শরীর স্যান্ডফ্লাইসের আক্রমণে সংক্রমিত হয়ে থাকে, তাই কুকুর থেকে দূরে থাকুন।>> যথাযথ স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি করা। >> কালো জ্বরের সংক্রমণ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা।>> স্যান্ডফ্লাইসের কামড় থেকে বাঁচতে লম্বা হাতার পোশাক পরা।>> পরিষ্কার বিছানায় ঘুমানো।
মনে রাখবেন, কালো জ্বরে সংক্রমিত হলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুঝুঁকি থাকে। তাই দীর্ঘদিন ধরে জ্বরে ভুগলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
সূত্র: বোল্ড স্কাই
জেএমএস/জিকেএস