আজ ৬ ডিসেম্বর। কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াইয়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী। টানা ৬ দিনের সম্মুখ সমর শেষে এ দিন পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত করে অবরুদ্ধ কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত হয়। কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল হাই সরকারের নেতৃত্বে ৩শ ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল ৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় পাকিস্তানি হানাদারদের পিছু হটিয়ে কুড়িগ্রাম শহরে প্রথম প্রবেশ করে। ২শ৩০ দিন পাকহানাদার বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ থাকার পর ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকবাহিনী গুলি করতে করতে ট্রেনযোগে কুড়িগ্রাম ত্যাগ করে। এরপর বীরপ্রতীক আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বে ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে কুড়িগ্রাম নতুন শহরস্থ পানির ট্যাংকির উপর স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার মাধ্যমে কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত করা হয়। শত ত্যাগের বিনিময়ে আসে এই বিজয়। বিজয়ের আনন্দ যেন স্বজন, সম্ভ্রম, সম্পদ হারানো নিঃস্ব মানুষগুলোকে ভুলিয়ে দেয় সব কষ্ট। বারুদের গন্ধ তখনও বাতাসে, আকাশে স্বজনের গগন বিদারী আর্তনাদ। তবুও মানুষগুলো বিজয় আনন্দ মেতে ওঠে। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েও স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয় বিজয় বার্তা তারা। টানা ছয় দিনের সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনীর হাতে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং শিশুসহ সাধারণ মানুষ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন নিহত হয়। এছাড়াও মুক্তিবাহিনীর হাতে ২৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। তাই আজও কুড়িগ্রামের ২শ ৩০ দিনের মুক্তিযুদ্ধে হাতিয়া গণহত্যা, ঠাঁটমারী গণহত্যা, নিলেরকুটি গণহত্যাসহ অসংখ্য নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনার কথা স্মরণ করে শহীদের স্বজনেরা চোখের জল মোছেন। বীর প্রতিক আব্দুল হাই বলেন, এ জেলার প্রথম পতাকা উত্তোলনের জায়গাটি এখনও রক্ষিত করা হয়নি। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরতে হলে জেলা ভিত্তিক ইতহাস তুলে ধরার পাশাপাশি সেগুলো সংরক্ষিত করা একান্ত জরুরি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু বলেন, দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কুড়িগ্রাম জেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৯৯ জন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য খেতাব প্রাপ্ত হয়েছেন লে. আবু মঈন মো. আসফাকুস সামাদ বীর উত্তম (মরণোত্তর), শওকত আলী বীর বিক্রম, সৈয়দ মনছুর আলী (টুংকু) বীর বিক্রম, বদরুজ্জামান বীর প্রতীক, আব্দুল হাই সরকার বীর প্রতীক, আব্দুল আজিজ বীর প্রতীক এবং তারামন বিবি বীর প্রতীক।নাজমুল হোসেন/এসএস/এমএস
Advertisement